RP অপসারণের নির্দেশ বাতিল করল NCLAT, খুলল হিন্দুস্থান গ্লাসের রেজোলিউশনের দরজা

অবসান প্রক্রিয়াধীন হিন্দুস্থান ন্যাশনাল গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের (HNG) রেজোলিউশন প্রফেশনাল (RP) পরিবর্তনের নির্দেশ বাতিল করেছে দেউলিয়া আপিল ট্রাইব্যুনাল (NCLAT)। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে কলকাতার ন্যাশনাল…

Hindusthan National Glass

অবসান প্রক্রিয়াধীন হিন্দুস্থান ন্যাশনাল গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের (HNG) রেজোলিউশন প্রফেশনাল (RP) পরিবর্তনের নির্দেশ বাতিল করেছে দেউলিয়া আপিল ট্রাইব্যুনাল (NCLAT)। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে কলকাতার ন্যাশনাল কোম্পানি ল’ ট্রাইব্যুনাল (NCLT)-কে দরপত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। এই নির্দেশের ফলে, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই কর্পোরেট ইনসালভেন্সি রেজোলিউশন প্রসেস (CIRP) নতুন গতি পেল।

Advertisements

এক তিন-সদস্যের বেঞ্চের মাধ্যমে NCLAT স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের ১৬ মে ২০২৫ তারিখের নির্দেশনা অনুসারে হিন্দুস্থান ন্যাশনাল গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য প্রস্তাবিত রেজোলিউশন প্ল্যানের অনুমোদনের বিষয়ে NCLT সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

Advertisements

NCLAT জানিয়েছে, ‘‘অ্যাডজুডিকেটিং অথরিটি (NCLT) সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে প্ল্যান অ্যাপ্রুভাল আবেদন শোনার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এগোতে পারে।’’

রেজোলিউশন প্রফেশনাল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, NCLAT স্পষ্ট করেছে যে, পয়েন্ট নং ৩ অর্থাৎ RP পরিবর্তনের বিষয়ে কোনও মেজরিটি অভিমত পাওয়া যায়নি। ফলে এই নির্দেশ বাতিল করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, হিন্দুস্থান ন্যাশনাল গ্লাসের বিরুদ্ধে CIRP প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১০ অক্টোবর, ২০২১ তারিখে এবং গিরিশ সিরিরাম জুনেজাকে RP হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার অধীনে এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট (EoI) আহ্বান করা হয়, যার ভিত্তিতে AGI গ্রীনপ্যাকের প্রস্তাবিত রেজোলিউশন প্ল্যান কমিটি অফ ক্রেডিটরস (CoC)-এর ৯৮ শতাংশ ভোটে ২৭ অক্টোবর, ২০২২ তারিখে অনুমোদিত হয়।

তবে কোম্পানির অপারেশনাল ক্রেডিটর সোনেকো মার্কেটিং NCLT-তে আবেদন জানায় RP অপসারণের জন্য। এরই মধ্যে, NCLT ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে AGI গ্রীনপ্যাকের রেজোলিউশন প্ল্যান অনুমোদন করে।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একাধিক পক্ষ, যার মধ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সুগার কর্পোরেশন লিমিটেডও ছিল, NCLAT-এর কাছে আপিল করে। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে NCLAT এই আপিলগুলি খারিজ করে এবং NCLT-এর সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।

পরে, সোনেকো মার্কেটিং এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট সুগার কর্পোরেশন সুপ্রিম কোর্টে যায়। ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট NCLT এবং NCLAT-এর আদেশ বাতিল করে দেয়।

সুপ্রিম কোর্ট জানায়, AGI গ্রীনপ্যাকের রেজোলিউশন প্ল্যানের ক্ষেত্রে ইন্সলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাংকরাপ্সি কোডের সেকশন ৩১ অনুযায়ী কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (CCI)-এর পূর্বানুমোদন প্রয়োজন ছিল। যেহেতু এই অনুমোদন পাওয়া যায়নি, তাই AGI গ্রীনপ্যাকের প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য নয়।

সুপ্রিম কোর্ট তখন ইন্ডিপেন্ডেন্ট সুগার কর্পোরেশন বা অন্য যেকোনও প্রার্থী, যাদের CCI অনুমোদন ছিল, তাদের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সুগার কর্পোরেশনের রেজোলিউশন প্ল্যান অনুমোদন করা হয়।

এরপর, ৭ মার্চ, ২০২৫ তারিখে সোনেকো মার্কেটিং আবারও NCLT-তে হস্তক্ষেপের আবেদন করে RP অপসারণের দাবি জানায়। তবে এই বিষয়ে দুই সদস্যের বেঞ্চের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয় এবং ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে দুই পৃথক আদেশ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে এই বিষয়ে NCLT প্রেসিডেন্টের কাছে রেফার করা হয় এবং তৃতীয় সদস্যের কাছে পাঠানো হয়, যিনি ১০ জুন, ২০২৫ তারিখে তাঁর মতামত দেন।

এই আদেশগুলির বিরুদ্ধে NCLAT-এ আপিল করা হয়। এদিকে, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখের সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ পিটিশনও দাখিল হয়।

১৬ মে, ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট CoC-কে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সুগার কর্পোরেশনের রেজোলিউশন প্ল্যান দুই সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে, NCLT-কে ছয় সপ্তাহের মধ্যে CIRP সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়। শেষ পর্যন্ত, ৮ জুলাই, ২০২৫ তারিখে NCLAT RP অপসারণের বিষয়ে NCLT-এর আগের নির্দেশ বাতিল করে দেয়। এই রায়ের মাধ্যমে, বহু বছর ধরে চলা আইনি জটের অবসান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। হিন্দুস্থান ন্যাশনাল গ্লাসের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া দ্রুত  সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যবসা পুনর্গঠন ও ঋণ পুনরুদ্ধারে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায়ের ফলে ভবিষ্যতে কর্পোরেট ইনসালভেন্সি প্রক্রিয়ায় আইনগত স্বচ্ছতা আরও বৃদ্ধি পাবে। বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে সময়মত সিদ্ধান্ত এবং যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে চলা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই মামলাটি আরও একবার স্পষ্ট করে দিল।

ফলে, দেশের কর্পোরেট প্রশাসনের ইতিহাসে এই মামলা একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে। ঋণদাতাদের স্বার্থ রক্ষা এবং কোম্পানির কার্যক্রমকে সচল রাখতে এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপ। এখন নজর থাকবে NCLT-এর চূড়ান্ত রায়ের দিকে, যা আগামী দিনে হিন্দুস্থান ন্যাশনাল গ্লাসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।