কৃষি উন্নয়নে এগিয়ে অরুণাচল, সিএইউ বোর্ডে দুই প্রতিনিধি

অরুণাচল প্রদেশের (Arunachal Pradesh) জন্য এটি এক গর্বের মুহূর্ত। তাওয়াং জেলার গ্যাংখার গ্রামের সমাজকর্মী নাওয়াং চোনজম এবং ইস্ট সিয়াং জেলার সিকা-বামিন গ্রামের প্রগ্রেসিভ কৃষক শ্রী…

Nawang Chonzom and Gumin Megu Appointed to Central Agricultural University Board

অরুণাচল প্রদেশের (Arunachal Pradesh) জন্য এটি এক গর্বের মুহূর্ত। তাওয়াং জেলার গ্যাংখার গ্রামের সমাজকর্মী নাওয়াং চোনজম এবং ইস্ট সিয়াং জেলার সিকা-বামিন গ্রামের প্রগ্রেসিভ কৃষক শ্রী গুমিন মেগুকে সেন্ট্রাল এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি (সিএইউ), ইম্ফল, মণিপুরের মর্যাদাপূর্ণ বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট (বিওএম)-এর সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের এই নিয়োগ তিন বছরের জন্য কার্যকর থাকবে। এই ঘোষণা অরুণাচল প্রদেশের কৃষি ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসাহ ও গর্বের সঞ্চার করেছে। তাঁদের এই অর্জন কেবল ব্যক্তিগত সাফল্যই নয়, বরং রাজ্যের কৃষি ও নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা।

নাওয়াং চোনজম: নারী ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ
তাওয়াং-এর প্রত্যন্ত গ্যাংখার গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমতী নাওয়াং চোনজম দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তিনি গ্রামের মহিলাদের সেলাই, পেশাদার কৃষিকাজ এবং জৈব চাষের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এছাড়া, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে টেকসই কৃষি পদ্ধতির প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ১২০ জন সক্রিয় সদস্যের একটি নারী-নেতৃত্বাধীন ফার্মার প্রডিউসার কোম্পানি (এফপিসি)-এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই সংগঠনটি গ্রামীণ মহিলাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি অনন্য মডেল হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর এই কাজ অরুণাচলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলাদের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

   

নাওয়াং চোনজমের নেতৃত্বে এই এফপিসি স্থানীয় কৃষি পণ্যের উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। তিনি জৈব চাষের প্রতি গ্রামবাসীদের উৎসাহিত করেছেন, যা পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি কৃষকদের আয় বাড়িয়েছে। তাঁর এই প্রচেষ্টা তাঁকে সিএইউ-এর বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টে নিয়োগের জন্য একজন আদর্শ প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাঁর অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণে গ্রামীণ মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।

গুমিন মেগু: প্রগ্রেসিভ কৃষকের প্রতীক
ইস্ট সিয়াং জেলার সিকা-বামিন গ্রামের শ্রী গুমিন মেগু একজন প্রগ্রেসিভ কৃষক হিসেবে অরুণাচল প্রদেশে পরিচিত। তিনি সমন্বিত কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষিক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন। তাঁর কৃষি কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৫৩০০ বর্গমিটার এলাকায় মাছ চাষ, ৪৭০০ বর্গমিটার এলাকায় এরি রেশম চাষ, ২০,০০০ বর্গমিটার এলাকায় ধান চাষ, ১৫,০০০ বর্গমিটার এলাকায় ভুট্টা চাষ, ৪৩০০ বর্গমিটার এলাকায় সুপারি চাষ, দুটি বাক্সে মৌচাষ এবং বাঁশের চাষ। এই বৈচিত্র্যময় কৃষি পদ্ধতি তাঁকে অরুণাচলের কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

গুমিন মেগুর কৃষি কার্যক্রম শুধু তাঁর নিজের আর্থিক স্থিতিশীলতাই নিশ্চিত করেনি, বরং স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি টেকসই মডেল হিসেবে কাজ করছে। তাঁর সমন্বিত কৃষি পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদী লাভজনকতার দিকে মনোনিবেশ করে। তাঁর এই অভিজ্ঞতা সিএইউ-এর বোর্ডে কৃষকদের প্রকৃত সমস্যা তুলে ধরতে এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে সহায়ক হবে।

সেন্ট্রাল এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির ভূমিকা
সেন্ট্রাল এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি (সিএইউ), ইম্ফল ১৯৯২ সালের সংসদীয় আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৩ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ার অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, সিকিম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা—এই সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের উপর বিস্তৃত। সিএইউ-এর লক্ষ্য হল কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে শিক্ষা, গবেষণা এবং সম্প্রসারণ শিক্ষার মাধ্যমে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতিমধ্যে ১৩টি সংযুক্ত কলেজ, ৬টি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (কেভিকে) এবং ৬টি মাল্টি টেকনোলজি টেস্টিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে।

অরুণাচল প্রদেশে সিএইউ-এর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে, বিশেষ করে পাসিঘাটে অবস্থিত কলেজ অব হর্টিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি এবং কলেজ অব এগ্রিকালচারের মাধ্যমে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি রাজ্যের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

নাওয়াং চোনজম ও গুমিন মেগুর ভূমিকা
নাওয়াং চোনজম এবং গুমিন মেগুর বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টে যোগদান অরুণাচল প্রদেশের কৃষকদের সমস্যাগুলি সমাধানে সিএইউ-এর সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। নাওয়াং চোনজমের নারী ক্ষমতায়ন এবং জৈব চাষের অভিজ্ঞতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণে গ্রামীণ মহিলাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবে। অন্যদিকে, গুমিন মেগুর সমন্বিত কৃষি পদ্ধতির জ্ঞান কৃষকদের জন্য টেকসই এবং লাভজনক কৃষি মডেল প্রণয়নে সহায়ক হবে। তাঁদের এই নিয়োগ রাজ্যের কৃষি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে—মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে বড় পরিবর্তন সম্ভব।

অরুণাচলের জন্য তাৎপর্য
অরুণাচল প্রদেশের মতো একটি পাহাড়ি রাজ্যে কৃষি চ্যালেঞ্জিং হলেও সম্ভাবনায় ভরপুর। নাওয়াং চোনজম এবং গুমিন মেগুর মতো ব্যক্তিরা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের কৃষি খাতে নতুন দিশা দেখিয়েছেন। তাঁদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্তি কৃষকদের সমস্যা, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের চাহিদা, সরাসরি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছে দেবে। এটি সিএইউ-এর গবেষণা এবং সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে আরও কার্যকরী করবে, যা অরুণাচলের কৃষকদের জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির প্রবর্তন করবে।

নাওয়াং চোনজম এবং গুমিন মেগুর সেন্ট্রাল এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টে নিয়োগ অরুণাচল প্রদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তাঁদের অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষা, গবেষণা এবং সম্প্রসারণ কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই নিয়োগ কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত কৃতিত্বের স্বীকৃতিই নয়, বরং অরুণাচলের কৃষি ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের একটি শক্তিশালী প্রতীক। তাঁদের নেতৃত্বে, সিএইউ অরুণাচল প্রদেশের কৃষকদের জন্য টেকসই উন্নয়নের পথ আরও প্রশস্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অর্জন রাজ্যের তরুণদের জন্যও একটি প্রেরণা, যারা কৃষি ও সমাজকল্যাণের ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখতে চায়।