প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) আবারও একটি বিরাট পদক্ষেপ নিয়েছেন দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে। স্বাধীনতা দিবসের দিন, ১৫ আগস্ট, ২০২৫-এ তিনি প্রকাশ করেছেন “প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা” (Pradhan Mantri Viksit Bharat Rozgar Yojana) নামে একটি নতুন কর্মসংস্থান প্রকল্প, যার মাধ্যমে দেশে ৩.৫ কোটি থেকে বেশি চাকরির সৃষ্টি করা হবে। এই পরিকল্পনার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মোট ৯৯ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা, যা দেশের যুবশক্তি ও উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নতুন দ্বার খুলে দেবে। এই প্রকল্পটি বিশেষভাবে প্রথমবারের চাকরি প্রার্থীদের এবং চাকরি সৃষ্টি করা উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি মৌলিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
“প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা” ভারতের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের যুবশক্তিকে চাকরির সুযোগ সরবরাহ করা এবং অবৈধ চাকরি বাজারকে সংঘটিত করা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের বৈধ চাকরির বৃদ্ধি বার্ষিক ২.৮% মাত্র, এবং দেশের শ্রমশক্তির ৯০% অংশটি এখনো অবৈধ খাতে নির্ভরশীল। এই প্রেক্ষাপটে এই নতুন যোজনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এই প্রকল্পটিকে “বিকশিত ভারত মিশন”-এর একটি মূল ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশের উন্নতি শুরু হয় তার মানুষ থেকে। এই যোজনা আমাদের যুবশক্তিকে স্বাবলম্বী করে তুলবে এবং উদ্যোগীদের জন্য একটি উৎসাহজনক পরিবেশ সৃষ্টি করবে।” এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবার চাকরি পাওয়া যুবক-যুবতীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যা তাদের ক্যারিয়ার গড়ার পথে একটি সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
এই যোজনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার। প্রতিটি সুবিধাভোগী এই প্রকল্পের তথ্য পেতে এবং নিবন্ধন করতে একটি কিউআর কোড স্ক্যান করতে পারবেন। এটি ভারত সরকারের “ডিজিটাল ভারত” প্রচারণার একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০২৪ সালে নিটি আয়োগের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভারতের ৬৮% নিয়োগকর্তা এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন চাকরির জন্য। এই প্রযুক্তিগত ব্যবহার চাকরির সুযোগ সৃষ্টিতে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে, তবে এর সঙ্গে ডেটা গোপনীয়তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
৯৯ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার এই বরাদ্দ ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি বড় ধাক্কা দেবে। এই পরিকল্পনা ব্যবসায়ীদের জন্য চাকরি সৃষ্টির জন্য উৎসাহ প্রদান করবে এবং উৎপাদন খাতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈশ্ণবের মতে, এই প্রকল্প দেশে ৩.৫ কোটি চাকরি সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে, যা ২০০৮ সালের জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইনের পরে সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান প্রকল্প হিসেবে গণ্য হতে পারে। গ্রামীণ এলাকায় ১০০ দিনের বেতনভিত্তিক চাকরি সরবরাহের পরে এই প্রকল্পটি শহরী ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রে সুফল ফলাতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
তবে এই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে এর বাস্তবায়নে। বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমবলের বৈচিত্র্য এবং প্রশিক্ষণের অভাব এমনকি প্রযুক্তি অভিযোগের সীমাবদ্ধতা এই পরিকল্পনার সামনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন যে, এই পরিমাণ চাকরি সৃষ্টি করা এবং তা বিনিয়োগের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা কঠিন হবে। তবে সরকারের উদ্যোগ এবং ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে।
“প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা” ভারতের জনগণের জীবনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। এটি শুধু চাকরির সুযোগই সৃষ্টি করবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক গড়নকে শক্তিশালী করবে। নরেন্দ্র মোদীর এই দূরদর্শী পরিকল্পনা ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নকে সফল করতে পারে। এখন সময় এসেছে সকলের সমন্বয়ে এই প্রকল্পটিকে সফল করার জন্য এগিয়ে যাওয়ার।