আজকের দিনে মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) হল এমন একটি বিনিয়োগ মাধ্যম, যা দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন প্রত্যাশী এবং মাঝারি থেকে উচ্চ ঝুঁকি গ্রহণে ইচ্ছুক বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও দুটি ভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে — ডাইরেক্ট (Direct) এবং রেগুলার (Regular)। বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই দুই ধরনের ফান্ডের পার্থক্য বুঝে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ডাইরেক্ট ও রেগুলার মিউচুয়াল ফান্ড: মৌলিক পার্থক্য:
মিউচুয়াল ফান্ডের ডাইরেক্ট এবং রেগুলার ফান্ডের মধ্যে মূল পার্থক্য হল ‘খরচের অনুপাত’ বা Expense Ratio। রেগুলার ফান্ডে বিনিয়োগ করার সময় একজন মধ্যস্থতাকারী বা অ্যাডভাইজার যুক্ত থাকেন, যিনি বিনিয়োগকারীর পক্ষে বিনিয়োগ পরিচালনা করেন এবং এর জন্য একটি কমিশন বা ফি নেন। এই কমিশনটি পরোক্ষভাবে বিনিয়োগকারীর রিটার্নে প্রভাব ফেলে, কারণ এটি মিউচুয়াল ফান্ডের খরচে যুক্ত হয়।
অন্যদিকে, ডাইরেক্ট মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারী সরাসরি AMC (Asset Management Company)-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং কোনও অ্যাডভাইজার বা মধ্যস্থতাকারী থাকেন না। এর ফলে অতিরিক্ত ফি বা কমিশন দিতে হয় না, যার ফলে রিটার্ন তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
১. উচ্চ রিটার্নের সম্ভাবনা (Higher Returns):
সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো রিটার্নের অংকে। রেগুলার ফান্ডের তুলনায় ডাইরেক্ট ফান্ডে খরচ কম হওয়ায় তা রিটার্ন বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, একই স্কিমের রেগুলার ফান্ড যদি ১২% রিটার্ন দেয়, ডাইরেক্ট ভার্সনে তা ১২.৫% হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এই পার্থক্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
২. খরচের অনুপাত (Expense Ratio):
Expense Ratio হল সেই পরিমাণ অর্থ, যা ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সংস্থা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ পরিচালনার জন্য চার্জ করে। রেগুলার ফান্ডে এই অনুপাত তুলনামূলকভাবে বেশি হয় কারণ এখানে অ্যাডভাইজারের কমিশন যুক্ত থাকে।
ধরা যাক, কোনও ফান্ডের AUM (Assets Under Management) যদি ₹১০০ কোটি হয় এবং Expense Ratio ১%, তাহলে ₹১ কোটি খরচ হবে পরিচালনার কাজে। ডাইরেক্ট ফান্ডে এই খরচ হতে পারে মাত্র ০.৫%।
৩. নেট অ্যাসেট ভ্যালু বা NAV-এ পার্থক্য:
NAV অর্থাৎ Net Asset Value হল ফান্ডের প্রতি ইউনিটের মূল্য। যেহেতু ডাইরেক্ট ফান্ডে খরচ কম, তাই তার NAV স্বাভাবিকভাবেই রেগুলার ফান্ডের তুলনায় বেশি থাকে। একই স্কিমের রেগুলার ফান্ডে NAV যদি ১০০ টাকা হয়, ডাইরেক্ট ফান্ডে তা হতে পারে ১০২ টাকা।
৪. নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ও দায়িত্ব:
ডাইরেক্ট ফান্ডে বিনিয়োগকারী নিজেই ফান্ড নির্বাচন, প্রবেশ ও প্রস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। তাই এখানে নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ বেশি, কিন্তু তার সঙ্গে দায়িত্বও বেশি। আপনাকে নিজেই ফান্ডের পারফরম্যান্স, বাজারের অবস্থা এবং বিনিয়োগ কৌশল সম্পর্কে ভালোভাবে জানাতে হবে।
রেগুলার ফান্ডে এই কাজগুলি অ্যাডভাইজার করেন, ফলে আপনি তুলনামূলকভাবে নিশ্চিন্ত থাকেন। তবে সেই নিশ্চিন্তার মূল্য হিসেবেই বাড়তি খরচ দিতে হয়।
৫. পরামর্শ নেওয়া বনাম স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত:
যদি আপনি নতুন বিনিয়োগকারী হন এবং মার্কেট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকে, তবে রেগুলার ফান্ড সুবিধাজনক হতে পারে, কারণ একজন অ্যাডভাইজার আপনাকে উপযুক্ত স্কিম বেছে নিতে সাহায্য করবেন। তবে, অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা ডাইরেক্ট ফান্ডে বিনিয়োগ করে নিজের কৌশল অনুযায়ী এগোতে পারেন।
আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্য, ঝুঁকি গ্রহণ ক্ষমতা এবং বাজার বোঝার দক্ষতা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের। যদি আপনি লং টার্ম ইনভেস্টর হন এবং নিজে থেকে গবেষণা করতে ভালোবাসেন, তবে ডাইরেক্ট মিউচুয়াল ফান্ড আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে। অন্যদিকে, যদি আপনি গাইডেন্স চান বা বেশি সময় না দিতে চান, রেগুলার ফান্ড একটি নিরাপদ বিকল্প হতে পারে।
তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, দুটো ফান্ডই একই ফান্ড হাউস এবং একই পোর্টফোলিও পরিচালনা করে। পার্থক্য শুধুমাত্র খরচ এবং পরিচালনার ধরনে। দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য পূরণের জন্য খরচ কমানো গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেই দিক থেকে ডাইরেক্ট ফান্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশি লাভজনক হতে পারে।
- ডাইরেক্ট ফান্ডে অ্যাডভাইজার থাকে না, ফলে খরচ কম ও রিটার্ন বেশি।
- রেগুলার ফান্ডে পরামর্শ সুবিধা থাকলেও, খরচ বেশি পড়ে।
- অভিজ্ঞ ও সেল্ফ-লার্নার বিনিয়োগকারীদের জন্য ডাইরেক্ট ভালো।
- নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য রেগুলার সুবিধাজনক হতে পারে।