বিশ্বের সেরা ১০ ধনীর তালিকা থেকে আম্বানি বাদ, আদানির চমক

হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট ২০২৫ প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে বড় চমক দেখা গেছে। ভারতের শীর্ষ ধনী ও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani) বিশ্বের…

Mukesh Ambani Drops from World's Top 10 Richest in Hurun 2025

হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট ২০২৫ প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে বড় চমক দেখা গেছে। ভারতের শীর্ষ ধনী ও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani) বিশ্বের ১০ ধনী ব্যক্তির তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। গত বছরের তুলনায় তাঁর সম্পত্তি ১ লক্ষ কোটি টাকা কমেছে, যার ফলে তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ তালিকার বাইরে চলে গেছেন। অন্যদিকে, টেসলার সিইও এলন মাস্ক ৪২০ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তি নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন। তাঁর সম্পত্তি গত বছরের তুলনায় ৮২ শতাংশ বা ১৮৯ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে গৌতম আদানি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন, যাঁর সম্পত্তি গত এক বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকা বেড়েছে।

   

Mukesh Ambani -এর সম্পত্তি হ্রাসের কারণ

মুকেশ আম্বানির সম্পত্তি কমার পিছনে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। কোম্পানির শক্তি ও খুচরা ব্যবসায়ে দুর্বল পারফরম্যান্স, ধীর বিক্রয় বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় রিলায়েন্স গ্রুপের বাজার মূল্যে প্রভাব পড়েছে। তবে, আম্বানি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মর্যাদা ধরে রেখেছেন। তাঁর বর্তমান সম্পত্তি ৮.৬ লক্ষ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম।

Advertisements

রিলায়েন্স গ্রুপ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং খুচরা ব্যবসার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রগুলোতে ধীরগতির অগ্রগতি তাঁর সম্পত্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, আম্বানির ব্যবসায়িক কৌশল ভবিষ্যতে ফল দিতে পারে, তবে বর্তমানে এই চ্যালেঞ্জগুলো তাঁকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

গৌতম আদানির উত্থান

ভারতের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি হুরুন তালিকায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছেন। তাঁর সম্পত্তি গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়ে ৮.৪ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। আদানি গ্রুপের বন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিমানবন্দর, খনন, নবায়নযোগ্য শক্তি, মিডিয়া এবং সিমেন্ট খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ তাঁকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। একজন কমোডিটি ট্রেডার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা আদানি আজ ভারতের অবকাঠামো খাতে একটি শক্তিশালী নাম। তাঁর সম্পত্তি বৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতিতে তাঁর গ্রুপের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রমাণ।

রোশনি নাদরের ঐতিহাসিক সাফল্য

এই তালিকায় আরেকটি বড় চমক হলো এইচসিএল-এর রোশনি নাদর। তিনি বিশ্বের পঞ্চম ধনী মহিলা হিসেবে স্থান পেয়েছেন এবং শীর্ষ ১০ ধনী মহিলার তালিকায় প্রবেশ করা প্রথম ভারতীয় মহিলা। তাঁর পরিবারের সম্পত্তি ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা। সম্প্রতি তাঁর পিতা শিব নাদর এইচসিএল-এর ৪৭ শতাংশ শেয়ার তাঁকে হস্তান্তর করেছেন, যা তাঁকে এই উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ৪৩ বছর বয়সী রোশনি ভারতের প্রযুক্তি খাতে একটি উজ্জ্বল নাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

ভারতের শীর্ষ ১০ ধনী পরিবার

হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট ২০২৫ অনুযায়ী ভারতের ১০ ধনী পরিবারের তালিকা নিম্নরূপ:

মুকেশ আম্বানি ও পরিবার – ৮.৬ লক্ষ কোটি টাকা (-১৩%) – রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ – মুম্বই

  1. গৌতম আদানি ও পরিবার – ৮.৪ লক্ষ কোটি টাকা (+১৩%) – আদানি গ্রুপ – আহমেদাবাদ
  2. রোশনি নাদর ও পরিবার – ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা (প্রথমবার অন্তর্ভুক্ত) – এইচসিএল – নয়া দিল্লি
  3. দিলীপ সাংঘভি ও পরিবার – ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা (+২১%) – সান ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ – মুম্বই
  4. অজিম প্রেমজি ও পরিবার – ২.২ লক্ষ কোটি টাকা (পুনর্মূল্যায়ন) – উইপ্রো – বেঙ্গালুরু
  5. কুমার মঙ্গলম বিড়লা ও পরিবার – ২ লক্ষ কোটি টাকা (+২৮%) – আদিত্য বিড়লা – মুম্বই
  6. সাইরাস এস পুনাওয়ালা ও পরিবার – ২ লক্ষ কোটি টাকা (-৮%) – সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া – পুণে
  7. নীরজ বাজাজ ও পরিবার – ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা (+১২%) – বাজাজ অটো – মুম্বই
  8. রবি জয়পুরিয়া ও পরিবার – ১.৪ লক্ষ কোটি টাকা (+৭%) – আরজে কর্প – নয়া দিল্লি
  9. রাধাকিষণ দমানি ও পরিবার – ১.৪ লক্ষ কোটি টাকা (-১১%) – অ্যাভিনিউ সুপারমার্টস – মুম্বই

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নাম

সান ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের দিলীপ সাংঘভি এই তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। তাঁর সম্পত্তি ২১ শতাংশ বেড়ে ২.৫ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অজিম প্রেমজি, উইপ্রোর প্রতিষ্ঠাতা, ২.২ লক্ষ কোটি টাকা সম্পত্তি নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। কুমার মঙ্গলম বিড়লার সম্পত্তি ২৮ শতাংশ বেড়ে ২ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যিনি আদিত্য বিড়লা গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিশ্ব পরিপ্রেক্ষিতে ভারত

হুরুন তালিকায় এলন মাস্কের শীর্ষস্থান অটুট রয়েছে। তাঁর সম্পত্তি বৃদ্ধি টেসলা এবং স্পেসএক্স-এর সাফল্যের ফল। ভারতের ধনীদের মধ্যে আম্বানি ও আদানি শীর্ষে থাকলেও, বিশ্বের শীর্ষ ১০-এ স্থান না পাওয়া ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তবে, রোশনি নাদরের সাফল্য ভারতীয় মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

বাঙালি পাঠকদের জন্য তাৎপর্য

পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের জন্য এই তালিকা অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। কলকাতা ভিত্তিক ব্যবসায়ীরা যদিও এই তালিকায় স্থান পাননি, তবে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈদ্যুতিক যান, নবায়নযোগ্য শক্তির মতো খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রাজ্যের উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন পথ খুলতে পারে।

হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট ২০২৫ ভারতীয় ধনীদের জন্য মিশ্র ফলাফল এনেছে। মুকেশ আম্বানির বিশ্ব তালিকা থেকে বাদ পড়া এবং গৌতম আদানির উত্থান ব্যবসায়িক জগতের গতিশীলতার প্রতিফলন। রোশনি নাদরের সাফল্য ভারতীয় মহিলাদের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। ভারতের অর্থনীতি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, এবং এই ধনীরা দেশের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।