MSME উন্নতির জন্য ক্লাস্টার ভিত্তিক সমাধানের আহ্বান নীতি আয়োগের

নীতি আয়োগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ভি আর সুব্রহ্মণ্যম বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, বলেছেন যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME) একাকীভাবে টিকে থাকতে পারে না।…

MSME Cluster

নীতি আয়োগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ভি আর সুব্রহ্মণ্যম বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, বলেছেন যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME) একাকীভাবে টিকে থাকতে পারে না। তাদের চ্যালেঞ্জগুলোকে ক্লাস্টার বা গোষ্ঠীভিত্তিকভাবে সমাধান করতে হবে। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “আজকের মাঝারি উদ্যোগগুলোই আগামী দিনের বড় উদ্যোগে পরিণত হবে।”

   

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকারকে এই উদ্যোগগুলোর হাত ধরে তাদের ক্ষুদ্র থেকে ছোট, ছোট থেকে মাঝারি এবং মাঝারি থেকে বড় উদ্যোগে রূপান্তরিত করতে হবে। নীতি আয়োগ সিইও এমএসএমই-এর সামনে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন: প্রযুক্তির উন্নতি, দক্ষ কর্মীবাহিনী এবং গুণমান সার্টিফিকেশন সম্পর্কিত সমস্যা।

ভারতের উন্নয়নে এমএসএমই-এর ভূমিকা

সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “ভারত যতক্ষণ না তার মান এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে সারা দেশে উন্নত করতে পারবে, ততক্ষণ উন্নত দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “শিক্ষা, দক্ষতা এবং এমএসএমই হল ভারতের ‘বিকশিত ভারত’ হওয়ার পথে দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।” তিনি এমএসএমই-এর সমস্যাগুলোকে পৃথকভাবে নয়, বরং গোষ্ঠীগতভাবে সমাধানের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন, যাতে এই খাতটি আরও শক্তিশালী এবং প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারে।

ডিএক্স-ইডিজি প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন

অনুষ্ঠানে সুব্রহ্মণ্যম ‘ডিজিটাল এক্সিলেন্স ফর গ্রোথ অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ’ (ডিএক্স-ইডিজি) নামে একটি প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করেন। এই প্ল্যাটফর্ম এমএসএমই-দের ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত, প্রতিযোগিতামূলক এবং স্থিতিস্থাপক করে তুলতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, জ্ঞান এবং ইকোসিস্টেম প্রদান করবে। তিনি বলেন, “এই উদ্যোগটি সারা দেশে ডিজিটাল রূপান্তর সুবিধা কেন্দ্রের একটি নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে দক্ষতা এবং উদ্ভাবনের অ্যাক্সেসকে গণতান্ত্রিক করবে। এটি এমএসএমই-দের টেকসইভাবে বৃদ্ধি পেতে, বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে এবং ‘বিকশিত ভারত’ দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম করবে।”

ডিজিটালাইজেশনের গুরুত্ব

ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এসসিএল দাস বলেন, “ফ্রন্টিয়ার টেক, ডিজিটালাইজেশন এবং প্রযুক্তি এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং উদীয়মান সমস্যার মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্যও প্রয়োজন।” তিনি আরও জানান, এমএসএমই-কে দেশীয় বৃদ্ধি, রপ্তানি বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো, স্থিতিস্থাপকতা এবং প্রযুক্তিগত বৃদ্ধির কেন্দ্রে রাখতে হবে।

নীতি আয়োগের বিশিষ্ট ফেলো এবং নীতি এফটিএইচ-এর প্রধান স্থপতি দেবজানী ঘোষ বলেন, “ডিজিটাল গ্রহণের মাধ্যমে এমএসএমই-দের ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত করা আর বিলাসিতা নয়, এটি ‘বিকশিত ভারত’ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রয়োজনীয়তা। ডিএক্স-ইডিজি-এর মাধ্যমে আমরা একটি উত্তেজনাপূর্ণ ইকোসিস্টেম-নেতৃত্বাধীন পদ্ধতি গড়ে তুলছি, যা এমএসএমই-দের প্রযুক্তি গ্রহণে, স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে এবং ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিশ্বে উন্নতি করতে সক্ষম করবে।”

সিআইআই-এর মতামত

সিআইআই-এর মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় অর্থনীতিতে এমএসএমই-এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ডিএক্স-ইডিজি এই খাতে প্রযুক্তি গ্রহণের ব্যবধান পূরণে সাহায্য করবে।” তিনি আরও জানান, এমএসএমই ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড এবং তাদের ডিজিটাল রূপান্তর দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাংলার প্রেক্ষাপটে এমএসএমই

পশ্চিমবঙ্গে এমএসএমই খাত অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাওড়া, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি এবং কলকাতার মতো এলাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে, এই উদ্যোগগুলো প্রযুক্তির অভাব, দক্ষ কর্মী এবং গুণমান সার্টিফিকেশনের সমস্যায় ভুগছে। সুব্রহ্মণ্যমের ক্লাস্টার-ভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব বাংলার জন্যও প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, হাওড়ার ক্ষুদ্র শিল্পগুলো যদি একটি গোষ্ঠী হিসেবে প্রযুক্তি এবং দক্ষতা গ্রহণ করে, তবে তারা বড় বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

ডিএক্স-ইডিজি প্ল্যাটফর্ম বাংলার এমএসএমই-দের জন্যও একটি সুযোগ। এটি তাদের ডিজিটাল সরঞ্জাম এবং জ্ঞান প্রদান করবে, যা রপ্তানি এবং দেশীয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বাংলার হস্তশিল্প, টেক্সটাইল এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে।

এমএসএমই-এর চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

সুব্রহ্মণ্যমের মতে, প্রযুক্তির উন্নতি এমএসএমই-দের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলার অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোগ এখনও পুরনো পদ্ধতিতে কাজ করে, যা তাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, দক্ষ কর্মীবাহিনীর অভাব তাদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। তৃতীয়ত, গুণমান সার্টিফিকেশন না থাকায় তারা বড় বাজারে প্রবেশ করতে পারে না। ডিএক্স-ইডিজি এই সমস্যাগুলোর সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতের উন্নয়নে এমএসএমই-এর ভূমিকা

ভারতের অর্থনীতিতে এমএসএমই ৩০ শতাংশের বেশি জিডিপি এবং ৪৫ শতাংশ রপ্তানিতে অবদান রাখে। এই খাতে প্রায় ১১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। বাংলাতেও এমএসএমই লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার উৎস। তাই, এই খাতের ডিজিটাল রূপান্তর এবং বৃদ্ধি ভারতকে ‘বিকশিত ভারত’ হিসেবে গড়ে তুলতে অপরিহার্য।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ডিএক্স-ইডিজি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এমএসএমই-রা প্রযুক্তি গ্রহণে এগিয়ে যাবে। এটি তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষমতা দেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করবে। বাংলার জন্য এটি একটি সুযোগ, যদি রাজ্য সরকার এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং স্থানীয় উদ্যোগীদের সমর্থন করে।

নীতি আয়োগ সিইও-এর বক্তব্য এবং ডিএক্স-ইডিজি প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন ভারতের এমএসএমই খাতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলো যদি এই সুযোগ কাজে লাগায়, তবে তারা শুধু নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করবে না, বরং রাজ্য ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।