Monsoon financial stress
গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে বর্ষার আগমন যতটা স্বস্তি আনে, ততটাই আড়ালে লুকিয়ে থাকে আর্থিক চাপ। ঝড়-বৃষ্টি, আর্দ্রতা ও অসুস্থতার বাড়তি ঝুঁকি মিলিয়ে পরিবারের মাসিক বাজেটে তৈরি হয় বাড়তি বোঝা। অনেক সময় এই অতিরিক্ত খরচ অনুমানের বাইরে চলে যায়, ফলে সঞ্চয়ে টান পড়ে বা স্বল্পমেয়াদি ঋণের প্রয়োজন হয়। অথচ অল্প কিছু দূরদর্শিতা ও একটি মৌসুমি সঞ্চয়ভাণ্ডার (seasonal buffer reserve) এই চাপ থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে পারে।
কোন খাতে বাড়তি খরচ হয় বর্ষায়?
১. বিদ্যুৎ বিল:
বর্ষাকালে অধিকাংশ পরিবারের প্রধান সমস্যাই হলো ঘরের ভ্যাপসা ভাব ও আর্দ্রতা। ভেজা কাপড় শুকোতে কিংবা ঘরের ভেজাভাব কমাতে স্পেস হিটার, ক্লথ ড্রায়ার, ডিহিউমিডিফায়ারের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। এগুলো একদিকে যেমন ঘরের পরিবেশকে বাসযোগ্য করে তোলে, অন্যদিকে বিদ্যুতের খরচ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ফলে বর্ষার মাসগুলিতে বিদ্যুৎ বিল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়।
২. স্বাস্থ্য খরচ:
বর্ষা মানেই ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া কিংবা টাইফয়েডের মতো রোগের ঝুঁকি। এর সঙ্গে যোগ হয় ভাইরাল জ্বর, সর্দি-কাশি ও পেটের অসুখ। এক মাসে মাত্র দুইবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া ও ওষুধ কিনতেই পরিবারকে খরচ করতে হয় ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা। গুরুতর অসুস্থতায়, বিশেষত ডেঙ্গুর মতো রোগে হাসপাতালে ভর্তি হলে খরচ কয়েক হাজার থেকে লাখের ঘরে পৌঁছাতে পারে। স্বাস্থ্যবিমা থাকলেও ওষুধ, পরীক্ষা বা অতিরিক্ত খরচ অনেক সময় নিজের পকেট থেকেই বহন করতে হয়।
৩. যাতায়াত ও ভ্রমণ:
ভারী বর্ষণে রেললাইনে জল জমে ট্রেন দেরি হওয়া, ফ্লাইট বাতিল হওয়া বা সড়ক অবরোধ হওয়া নতুন কিছু নয়। এর ফলে যাত্রীদের অতিরিক্ত খরচ করতে হয় টিকিট রি-বুকিং, হোটেলে থাকা বা বিকল্প গাড়ি ভাড়া করতে। পরিবার-সহ ছুটি কাটাতে বের হলেও হঠাৎ আবহাওয়ার কারণে ব্যয়ের অঙ্ক বেড়ে যায় অপ্রত্যাশিতভাবে।
বর্ষার অতিরিক্ত খরচ নতুন নয় Monsoon financial stress
বর্ষার এই অতিরিক্ত খরচগুলো নতুন কিছু নয়। কিন্তু এগুলো সামলাতে যদি আলাদা তহবিল না থাকে, তখন পরিবারকে বাধ্য হয়ে সঞ্চয় ভাঙতে হয়, জরুরি তহবিল ব্যবহার করতে হয় কিংবা ঋণ নিতে হয়। ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের সুদ দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অথচ একটি মৌসুমি নিরাপত্তা তহবিল থাকলে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতেও পরিবার নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।
বর্ষায় কী পরিমাণ খরচ বাড়তে পারে, তা একেক পরিবারের জন্য আলাদা। তবে সাধারণত মাসিক আয়-ব্যয়ের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে বাড়তি ৫%–১০% আলাদা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। যেসব শহরে ভারী বর্ষণ হয় বা যেসব পরিবার ভ্রমণ বেশি করে, তাদের এই সঞ্চয়ের পরিমাণ কিছুটা বেশি রাখা উচিত। মূল বিষয় হলো আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া, যাতে অপ্রত্যাশিত খরচ বাজেটকে ভেঙে না দেয়।
মৌলুমি তহবিল
মৌসুমি তহবিলের অর্থ রাখার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সহজলভ্যতা ও সুবিধাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সেভিংস অ্যাকাউন্ট: সহজে টাকা তোলা যায়, তাই জরুরি সময়ে কাজে লাগবে।লিকুইড মিউচুয়াল ফান্ড: ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে তুলনায় কিছুটা বেশি মুনাফা দেয়, আবার প্রয়োজনে দ্রুত অর্থও পাওয়া যায়।
রিকারিং ডিপোজিট (RD): প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে চাইলে এটি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ উপায়।
তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে (যেমন ফিক্সড ডিপোজিট বা শেয়ার) এই অর্থ আটকে রাখা ঠিক নয়, কারণ মৌসুমি খরচের ক্ষেত্রে তরল অর্থই সবচেয়ে কার্যকর।
বর্ষার খরচ আসলে কোনো অপ্রত্যাশিত বিষয় নয়, বরং প্রতিবারই ঘটে। কিন্তু আগেভাগে প্রস্তুতি নিলে তা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে না। একে ভাবা যেতে পারে বৃষ্টির সময় ছাতা বা রেইনকোট সঙ্গে রাখার মতো। প্রতিদিন হয়তো ব্যবহার করতে হবে না, কিন্তু প্রয়োজনের সময় সেটিই আপনাকে ভিজে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাবে।
পরিবারের বাজেটে এই সামান্য পরিবর্তনই এনে দিতে পারে বড় আর্থিক স্বস্তি। সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা থাকলে বর্ষার আনন্দ মাটি হবে না, বরং প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিশ্চিন্তে কাটানো যাবে কয়েকটি মাস।
Business: Monsoon brings financial challenges from unexpected expenses on electricity, health, and travel. This article highlights key areas of increased spending and suggests creating a seasonal buffer reserve to protect savings and manage financial stress during the rainy season.