ভারতের শীর্ষ রফতানিকারক রাজ্য হিসেবে রেকর্ড মোদী রাজ্যের

গুজরাট ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের শীর্ষ রফতানিকারক রাজ্য হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখে নতুন রেকর্ড গড়েছে (Modi)। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস (FIEO) এর তথ্য অনুযায়ী,…

Modi state record

গুজরাট ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের শীর্ষ রফতানিকারক রাজ্য হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখে নতুন রেকর্ড গড়েছে (Modi)। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস (FIEO) এর তথ্য অনুযায়ী, গুজরাট এই অর্থবছরে ৯.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা (১১৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে, যা ভারতের মোট রপ্তানির ২৬.৬ শতাংশ।

এই পরিমাণ মহারাষ্ট্রের রফতানির (৫.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা বা ৬৫.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) তুলনায় প্রায় ৪.৩ লক্ষ কোটি টাকা বেশি। গুজরাটের এই অর্জন রাজ্যের শক্তিশালী শিল্প পরিকাঠামো, কৌশলগত অবস্থান এবং বৈচিত্র্যময় রফতানি পণ্যের উপর নির্ভরশীল।গুজরাটের রফতানি সাফল্যের পিছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে পেট্রোলিয়াম পণ্য, রত্ন ও জুয়েলারি, জৈব রাসায়নিক, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য।

   

জামনগর জেলা, যেখানে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ভারতের বৃহত্তম রিফাইনারি অবস্থিত, একাই ৩.৬৩ লক্ষ কোটি টাকার রফতানি অবদান রেখেছে। এই রফতানির বেশিরভাগই পেট্রোলিয়াম এবং রিফাইনারি পণ্যের উপর নির্ভরশীল।

এছাড়াও, মোরবি অঞ্চলের সিরামিক শিল্প বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০২২-২৩ সালে গুজরাট থেকে চীনে ৩১১ কোটি টাকার টাইল রফতানি হয়েছে, যা ২০১৯-২০ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

গুজরাট ভারতের সবচেয়ে শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির মধ্যে একটি, যেখানে রাসায়নিক, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ, সিমেন্ট, সিরামিক, রত্ন ও জুয়েলারি এবং টেক্সটাইলের মতো বৈচিত্র্যময় শিল্প রয়েছে। রাজ্যটি ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে শীর্ষস্থানে রয়েছে, যেখানে দেশের ৩৩ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন এবং ২৮ শতাংশ ওষুধ রফতানির অংশ গুজরাট থেকে আসে।

আহমেদাবাদ এবং বড়োদরা এই শিল্পের প্রধান কেন্দ্র। এছাড়াও, গুজরাট ভারতের ৫৪ শতাংশ তৈল উৎপাদন এবং ৪৬ শতাংশ রিফাইনিং ক্ষমতার জন্য দায়ী।রাজ্যের ১,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা এবং মুন্দ্রা বন্দর, যা ভারতের বৃহত্তম বন্দর হিসেবে বার্ষিক ১৪৪ মিলিয়ন টন কার্গো পরিচালনা করে, গুজরাটের রফতানি সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মুন্দ্রা বন্দরের কৌশলগত অবস্থান এবং বিশ্বব্যাপী শিপিং রুটের সান্নিধ্য রফতানি প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করেছে। এছাড়াও, গুজরাটের উন্নত লজিস্টিকস এবং শিল্প অঞ্চল রফতানি ব্যয় কমাতে সাহায্য করেছে।২০২৪-২৫ অর্থবছরে গুজরাটের রফতানি গত বছরের তুলনায় ১৩.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা মূলত বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের দামের ওঠানামার কারণে।

Advertisements

২০২৩-২৪ সালে রাজ্যের রফতানি ছিল ১৩৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২২-২৩ সালের ১৪৯.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় কম। তবে, রাজ্য সরকার ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগ (MSME) এর জন্য নীতি সংস্কার এবং ভর্তুকির মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে।গুজরাটের কৃষি রফতানিও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

২০২৪-২৫ সালে রাজ্য থেকে ৮৫৬ মেট্রিক টন কেসর আম রফতানি হয়েছে, যা আমেরিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশে পৌঁছেছে। গত পাঁচ বছরে মোট ৩,০০০ মেট্রিক টন আম রফতানি হয়েছে। বাভলায় স্থাপিত গুজরাট এগ্রো রেডিয়েশন প্রসেসিং ফ্যাসিলিটি আম রফতানির জন্য গামা রেডিয়েশন সুবিধা প্রদান করে, যা কৃষকদের পরিবহন খরচ কমাতে এবং উন্নত মূল্য পেতে সহায়তা করছে।

রাজ্য সরকারের প্রগতিশীল নীতি এবং বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) গুজরাটকে রফতানি ক্ষেত্রে অগ্রগামী রেখেছে। এপ্রিল ২০০০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত গুজরাটে ৬৮.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের FDI প্রবাহ এসেছে। সম্প্রতি, হিন্ডালকোর তামা বিভাগ দাহেজে একটি ই-ওয়েস্ট রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি স্থাপনের জন্য ২৯৩.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে।

ড্রাগনের অহংকার দূর করবে ভারতের ‘আকাশ’ 

এছাড়াও, মারুতি সুজুকি ভারতে তার উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করতে ৪.৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে।গুজরাটের রফতানি সাফল্য ভারতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তবে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিযোগিতার মুখে রফতানি বৈচিত্র্যকরণ এবং নতুন বাজারে প্রবেশের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। সরকার এবং শিল্প সংস্থাগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টা গুজরাটকে ভারতের রফতানি নেতৃত্বে আরও শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে।