দেশের সময় বদলের উদ্যোগ মোদী সরকারের

ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক উদ্যোগ নিয়ে এসেছে, যা দেশের সময় ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আনবে। সরকার এখন বাধ্যতামূলকভাবে ভারতীয় মানক সময় (Indian Standard…

Modi Government's 'One Nation, One Time' Initiative to Mandate Indian Standard Time in 2025

ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক উদ্যোগ নিয়ে এসেছে, যা দেশের সময় ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আনবে। সরকার এখন বাধ্যতামূলকভাবে ভারতীয় মানক সময় (Indian Standard Time বা IST) সকল বৈধ, বাণিজ্যিক, ডিজিটাল এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। এই পদক্ষেপটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান সময়ের অসঙ্গতি দূর করবে এবং “ওয়ান নেশন, ওয়ান টাইম” নীতিকে বাস্তবায়ন করবে। এই উদ্যোগটি নতুন নয়, তবে এটি এখন আইনি আকার গ্রহণ করছে, যা দেশের সময় ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।

ভারতের সময় ব্যবস্থা বরাবরই একটি জটিল বিষয় ছিল। বর্তমানে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মতো কিছু এলাকায়, যেমন অসমে, “টি গার্ডেন টাইম” ব্যবহার করা হত, যা IST-এর তুলনায় এক ঘণ্টা এগিয়ে ছিল। এই ব্যবস্থা উপনিবেশীয় যুগে চা বাগানের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য চালু হয়েছিল, কিন্তু এটি দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের বিষয় ছিল। সরকার এবার এই অসঙ্গতি দূর করতে ঠিক করেছে এবং IST-কে একমাত্র আইনি সময় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। এই পরিকল্পনার অধীনে, সকল ব্যাংকিং, স্টক এক্সচেঞ্জ, রেলওয়ে, টেলিকমিউনিকেশন এবং শক্তি খাতের কার্যক্রমগুলো IST-এর সাথে সমন্বয় করতে হবে।

   

নতুন প্রযুক্তি ও স্বদেশী সমাধান
এই উদ্যোগের সাফল্য নিশ্চিত করতে ভারত সরকার নিজস্ব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে নেভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনস্টেলেশন (NavIC) উপগ্রহ ব্যবস্থা এবং পরমাণবিক ঘড়ি। NavIC ভারতের নিজস্ব উপগ্রহ নির্ভরশীল সময় ব্যবস্থা, যা বিদেশী GPS-এর উপর নির্ভরশীলতা কমাবে। এই ব্যবস্থা দিয়ে সময়ের মিলিসেকেন্ড স্তরে নির্ভুলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পরমাণবিক ঘড়ি, যা রেজিওনাল রেফারেন্স স্ট্যান্ডার্ড ল্যাবরেটরি (RRSL) গুলোতে স্থাপন করা হবে, দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে সময় স্থির রাখবে। এই কেন্দ্রগুলো আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, ভুবনেশ্বর, ফরিদাবাদ এবং গুয়াহাটিতে অবস্থিত।

সুবিধা ও প্রত্যাশা
এই পরিবর্তনের অনেক সুবিধা থাকতে পারে। প্রথমত, সময়ের একরূপতা বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং শিল্পের জন্য কার্যকরতা বাড়াবে। বর্তমানে সময়ের অসঙ্গতির কারণে ব্যবসায়িক সমন্বয়ে সমস্যা হত, কিন্তু IST-এর একমাত্র ব্যবহার এই সমস্যা সমাধান করবে। দ্বিতীয়ত, এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়াবে, কারণ বিদেশী সময় সিগন্যালের উপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে। তৃতীয়ত, রেল, বিমান চলাচল এবং শক্তি গ্রিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সমন্বয় উন্নত হবে।

Advertisements

চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
তবে এই পদক্ষেপের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভারতের বিস্তৃত ভৌগোলিক বিস্তার (৬৮°E থেকে ৯৭°E) এর কারণে, পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সকালের রোদ উঠতে IST অনুযায়ী দেরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, অরুণাচল প্রদেশে সকাল ৪টায় রোদ উঠে যায়, কিন্তু IST অনুযায়ী কাজ শুরু হয় ৯টায়। এই অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকার বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করছে, যাতে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়। তাছাড়া, কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সম্প্রদায় এই পরিবর্তনের প্রতিবাদ করতে পারে, কারণ তাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় এর প্রভাব পড়বে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সরকার এখন “লিগাল মেট্রোলজি (ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম) রুলস, ২০২৫” নোটিফিকেশন প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর পর একটি গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হবে, যাতে বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠান IST-এর সাথে তাদের সিস্টেম সামঞ্জস্য করতে পারে। এই পরিবর্তনের সাফল্য নির্ভর করবে সরকারের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং জনগণের সমর্থনের উপর।

এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র সময় ব্যবস্থার উন্নতি করবে না, বরং ভারতের স্বাভিমান এবং স্বনির্ভরতার প্রতীক হিসেবেও কাজ করবে। ভারতীয় জনগণ এই পরিবর্তনকে কীভাবে গ্রহণ করে, তা দেখতে বাকি।