লটারি নিয়ে বড়সড় সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ একগুচ্ছ GST সংস্কার ঘোষণা করে জানিয়েছেন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে লটারির ক্ষেত্রেও ৪০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। শুধু লটারি নয়, পান মশলা, সিগারেট, গুটখা, জর্দা, বিড়ি, ক্যাফিনযুক্ত ড্রিঙ্কস, ১৩৫ সিসি-র উপরে মোটরসাইকেল, ৩৫০ সিসি-র বাইক, ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার ও প্রাইভেট প্লেন—সব কিছুর ক্ষেত্রেই নতুন কর কাঠামো কার্যকর হবে।
এই ঘোষণার পর লটারি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতা পর্যন্ত উদ্বেগে পড়েছেন। কারণ, একদিকে সরকার রাজস্ব বাড়াতে চাইছে, অন্যদিকে লটারির সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা সরাসরি প্রভাবিত হবে।
লটারির উপর কেন ৪০ শতাংশ GST?
কেন্দ্রের দাবি, লটারি অনেক সময় অবৈধ লেনদেন, কালোবাজারি এবং মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাই স্বচ্ছতা আনতে ও রাজস্ব বৃদ্ধি করতে লটারির উপর উচ্চ কর চাপানো হচ্ছে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, শুধুমাত্র লটারি থেকেই বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু তার বড় অংশ সরকারের কর কাঠামোর বাইরে থেকে যায়। এবার সেই ফাঁকফোকর বন্ধ করাই লক্ষ্য।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছেন, “লটারির ক্ষেত্রেও নিয়মিত ব্যবসার মতোই কর কাঠামো কার্যকর হবে। স্বচ্ছতা এবং রাজস্ব বৃদ্ধির স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
লটারি ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি অনুমোদিত লটারির পাশাপাশি বেসরকারি স্তরেও লটারির প্রচলন রয়েছে। কেরালা, সিকিম, নাগাল্যান্ড, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে সরকারি লটারি ব্যবসার উপর নির্ভরশীল কয়েক লক্ষ মানুষ। কর বাড়লে সেই ব্যবসা ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এক লটারি এজেন্টের কথায়, “আমরা অনেকেই দিন আনি দিন খাই মানুষ। প্রতিদিন লটারির টিকিট বিক্রি করে যে কমিশন পাই, তাই দিয়ে সংসার চলে। যদি ৪০ শতাংশ GST চাপানো হয়, তবে টিকিটের দাম বাড়বে। সাধারণ মানুষ কিনতেই চাইবে না। এতে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব
অনেক রাজ্যে লটারির টিকিট সাধারণ মানুষের কাছে বিনোদনের মাধ্যম। কেউ কেউ ভাগ্য পরীক্ষা করার আশায় কিনে থাকেন, আবার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ আশা করেন, হয়তো একদিন বড় পুরস্কার পেয়ে জীবন বদলে যাবে। কিন্তু নতুন কর কাঠামোয় টিকিটের দাম বাড়লে সেই সুযোগ হাতছাড়া হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
উদাহরণস্বরূপ, এখন যদি একটি টিকিটের দাম হয় ৫০ টাকা, কর যুক্ত হলে সেটি দাঁড়াবে প্রায় ৭০ টাকা। ফলে ক্রেতার সংখ্যা কমবে, আর টিকিট বিক্রি কমলে পুরস্কারের পরিমাণও সঙ্কুচিত হবে।
বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, মোদী সরকার সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার উপর কর চাপাচ্ছে। অনেক বিরোধী রাজ্যের আশঙ্কা, “লটারি থেকে প্রাপ্ত আয় বহু পরিবারকে চালিয়ে দেয়। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু ব্যবসা নয়, সামাজিক কাঠামোকেও প্রভাবিত করবে।”
সরকারের প্রত্যাশা
সরকার অবশ্য ভিন্ন সুরে বলছে। তাদের যুক্তি, লটারির আয় থেকে সরকার সরাসরি রাজস্ব পাবে, যা উন্নয়নমূলক প্রকল্পে খরচ করা সম্ভব হবে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোতে এই অর্থ ব্যবহার হবে।
একজন জ্যেষ্ঠ আধিকারিক জানিয়েছেন, “লটারির সঙ্গে যুক্ত টাকা বহু সময় কালো পথে ব্যবহার হয়। এবার সেটি নিয়ন্ত্রণে আসবে। একইসঙ্গে সরকারের আয় বাড়বে।”
২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হতে চলা এই নতুন নিয়ম দেশের লটারি ব্যবসার চিত্রই বদলে দিতে পারে। কেউ মনে করছেন, এতে কালোবাজারি কমবে, আবার কেউ বলছেন, টিকিট বিক্রি কমে পুরো ব্যবস্থাই ধসে পড়বে।
যাই হোক না কেন, লটারির জগতে আগামী সপ্তাহগুলিতে বড়সড় পরিবর্তন যে আসতে চলেছে, তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। তাই এখন প্রশ্ন একটাই—লটারি কি আর সবার নাগালের বিনোদন থাকবে, নাকি কেবলমাত্র ধনীদের খেলা হয়ে দাঁড়াবে?