ভারতের নাগরিক বিমান পরিবহন খাতে একটি অসাধারণ পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে দেশ। গত দশ বছরে মোদী সরকারের (Modi Government) অধীনে ৮৮টি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে, যা প্রায় প্রতি ৪০ দিনে একটি নতুন বিমানবন্দরের হারে গড়ে ওঠে। এই তথ্যটি সাম্প্রতিক সময়ে সিভিল এভিয়েশন মিনিস্টার রাম মোহন নাইডু প্রকাশ করেন। ২০১৪ সালে যখন মাত্র ৭৪টি বিমানবন্দর কার্যকর ছিল, তখন আজ ২০২৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১৫৯-এ পৌঁছেছে। এই অবিশ্বাস্য প্রগতি ভারতের আকাশপথে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, বিশেষ করে টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরগুলোতে।
ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি ছবি, যেটি রঙিন আলোকসজ্জায় সজ্জিত, এই উন্নয়নের একটি প্রতীক হিসেবে দেখা যাচ্ছে। দিল্লির এই বিমানবন্দরটি আধুনিক স্থাপত্য ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে, যা ভারতের দ্রুত গতিতে অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলে। এই বিস্তারের পেছনে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলো “উডান” (UDAN) স্কিম, যা ২০১৬ সালে চালু করা হয়েছিল। এই স্কিমের লক্ষ্য ছিল আকাশপথে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সহজ করা এবং আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানো। সেন্টার ফর এভিয়েশন (CAPA)-এর গবেষণা অনুযায়ী, উডান স্কিম চালু হওয়ার পর থেকে টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরগুলোতে বার্ষিক যাত্রী সংখ্যা প্রায় ১৫% বেড়েছে। এটি একটি এমন পরিসংখ্যান যা ভারতের বিমান পরিবহন খাতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমাবেশের একটি নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।
উডান স্কিমের মাধ্যমে হেলিকপ্টার রুট এবং শেষ-পর্যায়ের সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দূরবর্তী এলাকাগুলোকে বড় শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল শিমলা থেকে দিল্লি যাওয়া প্রথম উডান ফ্লাইটের পর থেকে এই প্রকল্পটি ধীরে ধীরে একটি জনপ্রিয় স্কিমে পরিণত হয়েছে। উডান ৫.০ সিরিজ (৫.০ থেকে ৫.৪) দূরত্বের সীমা মুছে ফেলা, কার্যকর বিমানবন্দরগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং হেলিকপ্টার ও ছোট বিমানের সংযোগ বাড়ানোর মতো বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে বাতিল হওয়া রুটগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে বাতাসে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে এই উন্নতির মধ্যেও কিছু সমালোচনা রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্লেষক ও বিমান পরিবহন বিশেষজ্ঞের মতে, নতুন বিমানবন্দরগুলোর ব্যবহারের হার সমানভাবে বেড়ে ওঠেনি। ২০২৩ সালের ডিরেক্টোরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA) রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনো ৭০% এয়ার ট্র্যাফিক মাত্র ছয়টি বড় বিমানবন্দরে—দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই এবং কলকাতা—কেন্দ্রীভূত রয়েছে। এটি নির্দেশ করে যে ছোট এলাকাগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন বর্তমানে প্রকৃত চাহিদার তুলনায় বেশি হতে পারে। সমালোচকরা মনে করেন, নতুন বিমানবন্দরগুলোর কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য আরও ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক পরিকল্পনা প্রয়োজন, যাতে এই বিনিয়োগগুলোর সর্বাধিক লাভ হয়।
এই বিস্তারের পেছনে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল রয়েছে। নাগরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উডান স্কিমকে আরও ১০ বছরের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা দেশের অপরিসেবিত এবং কম পরিসেবিত এলাকাগুলোতে বাতাসে সংযোগ বাড়াবে। এটি সাধারণ নাগরিকদের আকাশপথে যাতায়াতের স্বপ্নকে সফল করার একটি চেষ্টা। তবে, নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনায় ২৭৫ জনের মৃত্যু ঘটেছিল, যা নাকি এভিয়েশন মিনিস্ট্রি ও DGCA-এর অবহেলার ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার পর সমালোচকরা মনে করছেন যে, অবকাঠামোর পাশাপাশি নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
সারা দেশে এই বিমানবন্দর নির্মাণ ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বড় শহরগুলোর সঙ্গে দূরবর্তী এলাকার সংযোগ বাড়লে বাণিজ্য, পর্যটন এবং শিক্ষা খাতে উন্নতি আশা করা যাচ্ছে। তবে, এই উন্নয়নের সাথে সাথে স্থানীয় চাহিদা ও ব্যবহারের হার নিয়ে গবেষণা এবং পরিকল্পনা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি। মোদী সরকারের এই উদ্যোগ ভারতকে বিশ্বের অবকাঠামো মানচিত্রে একটি শক্তিশালী স্থান দখল করতে সাহায্য করতে পারে, যদি এর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করা যায়।