যুদ্ধাস্ত্র রফতানি থেকে মোদী সরকারের রাজকোষে কোটি কোটি টাকা

নয়াদিল্লি: প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতার পথ ধরে এগোতে গিয়ে ভারতের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে (OFB) ২০২১ সালে ভেঙে সাতটি আলাদা পাবলিক সেক্টর প্রতিরক্ষা সংস্থা গঠন করা হয়।…

Modi Government Boosts Revenue with ₹3,545 Crore Arms Exports from Ordnance Factories in 2024-25

নয়াদিল্লি: প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতার পথ ধরে এগোতে গিয়ে ভারতের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে (OFB) ২০২১ সালে ভেঙে সাতটি আলাদা পাবলিক সেক্টর প্রতিরক্ষা সংস্থা গঠন করা হয়। সেই পদক্ষেপের ফলশ্রুতি আজ ধরা দিচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে এই সংস্থাগুলি মিলে রেকর্ড ₹৩,৫৪৫ কোটি টাকার সমরাস্ত্র রফতানি (Arms Exports) করেছে। যা একদিকে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডার পূর্ণ করেছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা বাড়িয়েছে।

আর্থিক ঘুরে দাঁড়ানো
OFB ভাঙার আগে পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। ২০১৯-২০ সালে এই সংস্থাগুলির সম্মিলিত ক্ষতি দাঁড়িয়েছিল প্রায় ₹২,৮৪৪ কোটি। কিন্তু কর্পোরেট কাঠামোয় ঢুকে যাওয়ার পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ২০২৪-২৫ সালে এই সংস্থাগুলি লাভ করেছে প্রায় ₹১,৬২৫ কোটি। অর্থাৎ লোকসান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এখন তারা সরকারি রাজস্বে বড় অবদান রাখছে।

   

Also Read |

রফতানির বিস্তার ও নেতৃত্ব
মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই প্রতিরক্ষা রফতানি অভূতপূর্ব হারে বেড়েছে। ২০১৯-২০ সালে রফতানি ছিল মাত্র ₹৮১ কোটি। আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ₹৩,৫৪৫ কোটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে Munitions India Limited (MIL), যার দায়িত্বেই আছে প্রায় ₹৩,০০০ কোটি টাকার রফতানি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে Yantra India Limited (YIL)। এছাড়া Advanced Weapons and Equipment India Ltd., Troop Comforts Ltd., Gliders India Ltd. প্রভৃতি DPSU-ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, এই সাফল্য “আত্মনির্ভর ভারত” কর্মসূচির বড় দৃষ্টান্ত। ভারত শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাচ্ছে না, পাশাপাশি বিদেশি বাজারে প্রতিযোগিতার যোগ্য হয়ে উঠছে। সরকারের লক্ষ্য, আগামী ২০২৯ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা রফতানি ₹৫০,০০০ কোটি-তে পৌঁছানো। আর ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিরক্ষা রফতানিকারক করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

Advertisements

শ্রমিক সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
তবে সব পক্ষ যে একসুরে প্রশংসা করছে তা নয়। শ্রমিক সংগঠন AIDEF এই কর্পোরেট কাঠামোয় রূপান্তরের বিরোধিতা করে আসছে শুরু থেকেই। তাদের অভিযোগ, শুধুমাত্র রফতানি বৃদ্ধির অজুহাতে সরকার এই রূপান্তরকে সাফল্য বলছে। অথচ শ্রমিক স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। ২০১৯ সালে যখন ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়, তখন সরকার EDSA (Essential Defence Services Act) চালু করেছিল। এখন সেটি শিথিল হলেও সংগঠনগুলি মনে করছে শ্রমিক অসন্তোষ এখনও পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি।

সামগ্রিক প্রতিরক্ষা রফতানি চিত্র
ভারতের সামগ্রিক প্রতিরক্ষা রফতানি ২০২৪-২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ₹২৩,৬২২ কোটি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১২% বেশি। এর মধ্যে DPSU-গুলির অবদান প্রায় ₹৮,৩৮৯ কোটি, আর বেসরকারি খাত দিয়েছে ₹১৫,২৩৩ কোটি।

বিশ্লেষণ
১. রাজকোষে প্রবাহ – DPSU-গুলির সমরাস্ত্র রফতানি থেকে সরকারের কোষাগারে সরাসরি কোটি কোটি টাকা ঢুকছে।
২. লাভজনক কাঠামো – ২০১৯-২০ সালের লোকসান পেরিয়ে এখন হাজার কোটির বেশি লাভ।
৩. কৌশলগত পরিকল্পনা – বিদেশি বাজারে ভারতীয় অস্ত্রের চাহিদা বাড়াতে গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D)-এ আরও বিনিয়োগ দরকার।
৪. শ্রমিক প্রশ্ন – কর্মীদের আশঙ্কা ও বিরোধ এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।

“সমরাস্ত্র বিক্রি করেই রাজকোষে কোটি কোটি টাকা”—এই শিরোনামের বাস্তবতা এখন প্রকট। একদিকে Munitions India ও Yantra India-র মতো সংস্থাগুলি ভারতের অস্ত্র শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তুলে ধরছে, অন্যদিকে এই আয় সরকারের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করছে। তবে শ্রমিক অসন্তোষ, স্বচ্ছ নীতি এবং দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ও উন্নয়নকেই আগামী দিনের সাফল্যের চাবিকাঠি বলে মনে করছে বিশ্লেষক মহল।