আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে ৫,০০০ টাকা জরিমানা! জানুন বিস্তারিত

অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি দেশের রাজস্ব সংগ্রহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রাজস্বের মূল উৎস হলো ইনকাম ট্যাক্স, যা সরকারকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, সরকারি প্রকল্প, সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা…

ITR Filing Deadline Extended Till September

অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি দেশের রাজস্ব সংগ্রহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রাজস্বের মূল উৎস হলো ইনকাম ট্যাক্স, যা সরকারকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, সরকারি প্রকল্প, সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য কল্যাণমূলক কাজের জন্য অর্থ সরবরাহ করে। এজন্য, প্রতিটি ট্যাক্সপেয়ারকে তাদের আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দিতে হয়, যাতে তারা সরকারের পাওনা ট্যাক্স পরিশোধ করে।

ITR কী?
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (ITR) একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরের জন্য আপনার মোট আয়করযোগ্য আয় প্রদর্শন করে এমন একটি ফর্ম। ট্যাক্সপেয়াররা এই ফর্মটি পূর্ণ করে তাদের আয়, কাটছাঁট, ছাড় এবং পরিশোধিত ট্যাক্সের বিষয়ে সরকারকে জানায়। এর মাধ্যমে সরকারের কাছে একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরের জন্য তাদের ট্যাক্স দায় নিশ্চিত হয়। এর মধ্যে আয়, ছাড় ও অন্যান্য খরচ হিসাব করা হয়, যার ভিত্তিতে সরকার জানে যে কত পরিমাণ আয়কর তাদের পরিশোধ করতে হবে।

   

ITR ফাইলের নির্ধারিত সময়সীমা
প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হলো পরবর্তী অর্থবছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত। যারা আয়কর অডিটের আওতাভুক্ত নন, তাদের জন্য এই তারিখটি গুরুত্বপূর্ণ।

যদি ITR না জমা দেওয়া হয়?
যদি কেউ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা না দেয়, তবে তাকে কিছু গুরুতর পরিণতির মুখে পড়তে হতে পারে।
১. পেনাল্টি ও জরিমানা: ৩১ জুলাই এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে, তাকে জরিমানা হিসেবে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পেমেন্ট করতে হতে পারে। তবে, যদি আয় এক লাখ টাকার কম হয়, তবে জরিমানা সীমিত থাকবে ১,০০০ টাকায়।

২. অপূরণীয় অর্থ ফেরতের দায়: যদি নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন জমা না দেন এবং সেই পরিমাণ ট্যাক্স জমা না করেন, তবে আপনি প্রতি মাসে ১% সুদও দিতে হতে পারে। এই সুদ হিসাব করা হয়, পরবর্তী অর্থবছরের নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত, আপনি যে পরিমাণ ট্যাক্স দেননি তার ওপর।

৩. জরিমানা ও জেল: যারা ২৫,০০০ টাকার বেশি আয়কর দেননি, তাদের বিরুদ্ধে ৬ মাস থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের ব্যবস্থা হতে পারে, পাশাপাশি জরিমানাও হতে পারে। যদি ট্যাক্সের অঙ্ক ২৫,০০০ টাকার কম হয়, তবে ৩ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে এবং জরিমানা প্রদান করতে হতে পারে।

Advertisements

৪. লস ক্যারি ফরওয়ার্ড না করা: নিয়ম অনুসারে, আপনি যদি আপনার আয়কর রিটার্ন নির্ধারিত তারিখের মধ্যে জমা দেন, তবে ভবিষ্যতে যে সব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, সেগুলি পরবর্তী বছরে কাটিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে, সেই লসগুলি পরবর্তী বছরে ক্যারি ফরওয়ার্ড করা যাবে না।

নতুন আয়কর স্ল্যাব
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নতুন আয়কর স্ল্যাব ঘোষণা করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী, এই অর্থবছরে নিম্নলিখিত স্ল্যাব অনুযায়ী ট্যাক্স ধার্য করা হবে:

  • আয় যদি ০ থেকে ৪ লাখ টাকা হয়, তবে কোন ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে না।
  • আয় ৪ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা হলে, ৫% ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে।
  • আয় ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা হলে, ১০% ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে।
  • আয় ১২ লাখ থেকে ১৬ লাখ টাকা হলে, ১৫% ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে।
  • আয় ১৬ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা হলে, ২০% ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে।
  • আয় ২০ লাখ থেকে ২৪ লাখ টাকা হলে, ২৫% ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে।
  • আয় ২৪ লাখ টাকা বা তার বেশি হলে, ৩০% ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে।

নতুন বিধি এবং উপকারিতা
এছাড়া, আয়কর দাখিলের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ফাইল না করলে আপনি ভবিষ্যতে যে কর ছাড় বা লস দিচ্ছেন, তা কার্যকরীভাবে কমিয়ে দিতে পারবেন না। এজন্য জরুরি যে সময়মতো আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া হয়, যাতে একদিকে আপনি জরিমানা ও শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারেন এবং অন্যদিকে ভবিষ্যতেও সুবিধা পান।

ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়া শুধুমাত্র সরকারের কাছে দায় পরিশোধ করার মাধ্যম নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক পদক্ষেপও। এজন্য প্রত্যেক নাগরিকের উচিত সময়মতো তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া, যাতে জরিমানা, সুদ এবং কারাদণ্ডের হাত থেকে বাঁচা যায় এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বরেখে সহায়তা করা যায়।

এমনকি, নতুন স্ল্যাবও প্রতিটি শ্রেণির মানুষের জন্য কার্যকরী হয়েছে। তাই নতুন স্ল্যাব অনুযায়ী সময়মতো আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার মাধ্যমে ট্যাক্স কমানোর সুযোগ গ্রহণ করা উচিত।