Advance Tax না দিলে বছরে কত বাড়বে করের বোঝা, জানুন এখনই

ভারতের আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত করদাতাদের ‘অ্যাডভান্স ট্যাক্স’ (Advance Tax ) পরিশোধ বাধ্যতামূলক। এই অ্যাডভান্স ট্যাক্স এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে একজন করদাতা তার পুরো বছরের…

Missed Advance Tax in 2025? Know How Much Your Tax Burden Could Increase Annually

ভারতের আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত করদাতাদের ‘অ্যাডভান্স ট্যাক্স’ (Advance Tax ) পরিশোধ বাধ্যতামূলক। এই অ্যাডভান্স ট্যাক্স এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে একজন করদাতা তার পুরো বছরের প্রত্যাশিত আয়ের ভিত্তিতে কর হিসেব করে তা ধাপে ধাপে বছরের মধ্যেই পরিশোধ করেন। এই ব্যবস্থা ‘Pay As You Earn’ নামে পরিচিত এবং এর লক্ষ্য কর সংগ্রহে সময়োচিততা ও স্বচ্ছতা আনা।

২০২৫ অর্থবর্ষের জন্য চতুর্থ ও শেষ কিস্তির অ্যাডভান্স ট্যাক্স জমার নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ১৫ জুন, ২০২৫। যারা এই সময়সীমার মধ্যে তাদের কর পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের উপর সুদ ও জরিমানার বোঝা বর্তাবে।

   

কাদের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ট্যাক্স প্রযোজ্য?
যে সমস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর দায় ১০,০০০ টাকার বেশি, তাদের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ট্যাক্স পরিশোধ বাধ্যতামূলক। তবে, এমন প্রবীণ নাগরিক যারা ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং যাদের কোনও ব্যবসা বা পেশাগত আয় নেই, তারা এই বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত।

অ্যাডভান্স ট্যাক্সের চারটি নির্ধারিত কিস্তি
ইনস্টলমেন্টের তারিখ মোট ট্যাক্সের যত শতাংশ জমা দিতে হবে সুদ (ধারা ২৩৪সি)

১৫ জুন পর্যন্ত ১৫% ১% x ৩ মাস x বকেয়া ট্যাক্স
১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৫% (মোট ৩৬% অতিরিক্ত) ১% x ৩ মাস x বকেয়া ট্যাক্স
১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৫% ১% x ৩ মাস x বকেয়া ট্যাক্স
১৫ মার্চ পর্যন্ত ১০০% ১% x ১ মাস x বকেয়া ট্যাক্স

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যদি কোনো কিস্তি নির্ধারিত তারিখে না দেওয়া হয়, তাহলে করদাতাকে ধারা ২৩৪সি অনুযায়ী প্রতি মাসে ১% হারে সুদ দিতে হবে ওই নির্দিষ্ট কিস্তির জন্য যতদিন না পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়।

কর দেরিতে দিলে আরও সুদ
যদি কোনো করদাতা মার্চ ৩১-এর পরেও বকেয়া কর পরিশোধ না করেন, তাহলে ধারা ২৩৪বি অনুযায়ী প্রতি মাসে ১% হারে সুদ ধার্য হয়। এই সুদ গণনা শুরু হয় এপ্রিল মাস থেকে এবং যত দিন পর্যন্ত টাকা পরিশোধ না করা হয় তত দিন ধরে হিসেব চলে।

Advertisements

এই কারণে করদাতাদের প্রতি পরামর্শ, যত দ্রুত সম্ভব বকেয়া কর মেটানোই বুদ্ধিমানের কাজ। দেরিতে মেটালে শুধু সুদের পরিমাণ বাড়বে।

সঠিক TDS কাটা ও আত্মমূল্যায়নের মাধ্যমে কর পরিশোধ
অনেক সময় করদাতারা মনে করেন, তাদের আয় থেকে TDS কাটা হয়েছে বলেই অ্যাডভান্স ট্যাক্স দিতে হবে না। কিন্তু যদি TDS এর মাধ্যমে পূর্ণ কর না মেটানো হয়, তাহলেও অ্যাডভান্স ট্যাক্সের আওতায় আসতে হবে।

এছাড়া, আয়কর রিটার্ন ফাইল করার সময় ধারা ১৪০এ অনুযায়ী সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট ট্যাক্স (Self-Assessment Tax) মিটিয়ে ফেলা আরও ভালো, যাতে সুদের বোঝা কমানো যায়।

ছাড়ের আবেদন: ধারা ১১৯(২)(a)
আইন অনুযায়ী সুদ ধারা ২৩৪বি ও ২৩৪সি বাধ্যতামূলক হলেও, বিশেষ ক্ষেত্রে করদাতারা কর বিভাগে ছাড় বা মকুবের আবেদন করতে পারেন। যদি কোনও “যৌক্তিক কারণ” বা “জেনুইন হার্ডশিপ” প্রমাণ করা যায়, তবে আয়কর অফিসার (AO) করদাতার সুদ কমাতে বা পুরোপুরি মকুব করতেও পারেন, তবে তা সম্পূর্ণ তাদের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে।

করদাতাদের জন্য উপদেশ
1. সময়মতো প্রত্যেক কিস্তি অনুযায়ী অ্যাডভান্স ট্যাক্স জমা করুন।
2. নিজের আয় ও কর সঠিকভাবে আগেই হিসাব করুন যাতে TDS, অন্যান্য আয় এবং ছাড়গুলো মাথায় রাখা যায়।
3. বকেয়া থাকলে দ্রুত জমা দিন, যাতে সুদ ও জরিমানার পরিমাণ কমানো যায়।
4. কোনো অসুবিধার কারণে যদি দেরি হয়, তবে বৈধ নথিপত্রসহ ছাড়ের আবেদন করুন ধারা ১১৯(২)(a)-এর আওতায়।

কর দেওয়া একটি নাগরিক দায়িত্ব। অ্যাডভান্স ট্যাক্স ব্যবস্থা সরকারের পক্ষে সঠিক সময়ে রাজস্ব সংগ্রহের পথ যেমন সুগম করে, তেমনি করদাতাকেও পুরো বছরের চাপ না নিয়ে ধাপে ধাপে কর পরিশোধের সুযোগ দেয়। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কর মেটালে যেমন সুদ ও জরিমানা এড়ানো সম্ভব, তেমনি ভবিষ্যতের কর ঝুঁকিও অনেকাংশে কমানো যায়। তাই আয়কর বিষয়ক নিয়ম সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়াই করদাতার সার্থে।