মাথায় হাত কোটি কোটি নেটনাগরিকদের! হঠাৎ থমকে গেল জনপ্রিয় AI টুলস

রবিবার সন্ধ্যায় OpenAI-এর জনপ্রিয় AI প্ল্যাটফর্ম ChatGPT বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারীর জন্য বন্ধ হয়ে যায়। কারণ? বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ স্টুডিও জিবলি শৈলীর ছবি তৈরি করতে…

millions-of-netizens-stunned-as-popular-ai-tools-suddenly-halt

রবিবার সন্ধ্যায় OpenAI-এর জনপ্রিয় AI প্ল্যাটফর্ম ChatGPT বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারীর জন্য বন্ধ হয়ে যায়। কারণ? বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ স্টুডিও জিবলি শৈলীর ছবি তৈরি করতে এই প্ল্যাটফর্মে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এই নতুন ফিচারটি সোশ্যাল মিডিয়ায় রাতারাতি সেনসেশন হয়ে উঠেছে। অ্যাপটির সঙ্গে এপিআই সার্ভিসেও ব্যাপক ত্রুটি দেখা দিয়েছে।

   

ডাউনডিটেক্টর, একটি ওয়েবসাইট যা সার্ভিস বন্ধের খবর ট্র্যাক করে, জানিয়েছে যে কমপক্ষে ২৯৪ জন ব্যবহারকারী OpenAI-এর সার্ভিসে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে ৫৩% অভিযোগ ছিল ChatGPT নিয়ে। OpenAI আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্যাটির কথা স্বীকার করে বলেছে, “আমরা বর্তমানে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।” প্রায় ৩০ মিনিট পরে তারা জানায়, ChatGPT-র সমস্ত সার্ভিস পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এই সময়ে সমস্যাটি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ ছিল বলে জানানো হয়।

স্টুডিও জিবলির উন্মাদনা সোশ্যাল মিডিয়ায়:

OpenAI সম্প্রতি চ্যাটজিপিটি-৪ও (GPT-4o)-এর মাধ্যমে তাদের সবচেয়ে উন্নত ইমেজ জেনারেটর চালু করেছে। এই ফিচার ব্যবহারকারীদের যে কোনো ছবিকে স্টুডিও জিবলি শৈলীতে রূপান্তরিত করতে দেয়। জাপানি অ্যানিমেশনের কিংবদন্তি হায়াও মিয়াজাকির হাতে তৈরি এই হাতে আঁকা অ্যানিমেশন শৈলী ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ এবং ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’-এর মতো অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রে দেখা গেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেলিব্রিটি, রাজনীতিবিদ—সবাই এই শৈলীতে তাদের ছবি শেয়ার করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভারতীয় রাজনীতিবিদরাও এই ট্রেন্ডে যোগ দিয়েছেন, তাদের অ্যানিমেটেড অবতার প্রকাশ করে।

GPT-4o মডেলটি অত্যন্ত নিখুঁত এবং ফটোরিয়ালিস্টিক ছবি তৈরি করতে পারে। তবে এটি বিশেষভাবে প্রশংসিত হচ্ছে জিবলি শৈলীর স্বপ্নিল, নরম সৌন্দর্য ধরতে পারার জন্য। ব্যবহারকারীরা ChatGPT খুলে প্রম্পট বারে তিনটি ডটে ক্লিক করে ‘ইমেজ’ এবং ‘ক্যানভাস’ অপশনের মাধ্যমে এই ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন।

‘টিমের ঘুম দরকার’: স্যাম অল্টম্যান:

এই আপডেটের অপ্রত্যাশিত সাফল্যের মধ্যে OpenAI-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, প্রচণ্ড চাহিদার কারণে ChatGPT-র GPU (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) “গলে যাচ্ছে”। তিনি বলেছেন, ওপেনএআই ছবি তৈরির সংখ্যার উপর সাময়িকভাবে সীমা আরোপ করবে। বিনামূল্যে ব্যবহারকারীরা দিনে সর্বোচ্চ তিনটি ছবি তৈরি করতে পারবেন। এই উন্মাদনা অব্যাহত থাকায় অল্টম্যান এই ফিচারের প্রতিক্রিয়াকে “পাগলামি” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “আপনারা কি দয়া করে ছবি তৈরি একটু কম করবেন? এটা পাগলামি, আমাদের টিমের ঘুম দরকার।”

Advertisements

একটি মন্তব্যের জবাবে উচ্চ চাপ সামলানোর বিষয়ে অল্টম্যান তার বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “লঞ্চের পর থেকে আমরা চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না। লোকজন সার্ভিস চালু রাখতে এখনও কাজ করে যাচ্ছে। এমন বিপুল চাহিদা আমি আগে কখনও দেখিনি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় জিবলি ঝড়:

এই ফিচারটি চালু হওয়ার পর থেকে ব্যবহারকারীরা এক্স, ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে তাদের AI-জেনারেটেড জিবলি-অনুপ্রাণিত শিল্পকর্ম শেয়ার করছেন। #Ghiblified এবং #GhibliArt-এর মতো হ্যাশট্যাগগুলো ক্রমাগত ট্রেন্ড করছে। সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে রাজনীতিবিদ, ইনফ্লুয়েন্সার, সেলিব্রিটি এবং এমনকি ব্র্যান্ড—সবাই এই টুলটি ব্যবহার করছেন। ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যেও এই ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়েছে। তারা তাদের অ্যানিমেটেড ছবি শেয়ার করে ফ্যানদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

স্টুডিও জিবলি কী?

স্টুডিও জিবলি একটি জাপানি অ্যানিমেশন সংস্থা, যিনি তার হাতে আঁকা অ্যানিমেশনের জন্য বিখ্যাত। ১৯৮৫ সালে হায়াও মিয়াজাকি এবং ইসাও তাকাহাতা এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের চলচ্চিত্রে প্রকৃতি, স্বপ্নিল দৃশ্য এবং গভীর মানবিক গল্প ফুটে ওঠে। এই শৈলী এখন AI-এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে গেছে। তবে কিছু সমালোচক মনে করছেন, এই ট্রেন্ড মিয়াজাকির শিল্পকর্মের গভীরতা ও কারুকার্যকে কেবল একটি AI-জেনারেটেড ছবিতে পরিণত করছে।

প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ:

ChatGPT-র এই নতুন ফিচারটি GPT-4o মডেলের মাধ্যমে চালিত। এটি শুধু ছবি তৈরি করতে পারে না, বরং ব্যবহারকারীর বর্ণনা অনুযায়ী তা সম্পাদনাও করতে পারে। তবে এত বড় চাহিদার কারণে OpenAI-এর সার্ভারে অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। অল্টম্যানের মতে, এই “বাইবেলের মতো চাহিদা” তাদের প্রযুক্তিগত ক্ষমতার পরীক্ষা নিচ্ছে।

স্টুডিও জিবলি শৈলীর ছবি তৈরির এই উন্মাদনা প্রমাণ করে যে প্রযুক্তি ও শিল্পের মিলন কতটা শক্তিশালী হতে পারে। তবে এই ট্রেন্ডের পিছনে যে পরিমাণ পরিশ্রম ও সম্পদ লাগছে, তা OpenAI-এর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্যাম অল্টম্যানের আবেদন সত্ত্বেও ব্যবহারকারীরা কতটা “শান্ত” হবেন, তা সময়ই বলবে। এই ঘটনা এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা—দুটোই তুলে ধরেছে।