স্টার্টআপে বিনিয়োগে মিলেনিয়ালদের ভরসা এখন পার্সোনাল লোন

Personal Loans for Startups: আজকের মিলেনিয়াল প্রজন্ম শুধুমাত্র চাকরির পিছনে ছুটছে না, বরং নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য স্টার্টআপ এবং সাইড হাসলের দিকে ঝুঁকছে।…

Millennials Turning to Personal Loans to Fund Startups and Side Hustles

Personal Loans for Startups: আজকের মিলেনিয়াল প্রজন্ম শুধুমাত্র চাকরির পিছনে ছুটছে না, বরং নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য স্টার্টআপ এবং সাইড হাসলের দিকে ঝুঁকছে। ব্যাকপ্যাক নিয়ে ভ্রমণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক উদ্যোগ—মিলেনিয়ালরা তাদের উদ্ভাবনী ধারণা এবং উদ্যমের মাধ্যমে ভারতের অর্থনীতিতে নতুন জোয়ার সৃষ্টি করছে। তবে, এই স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানেই ব্যক্তিগত ঋণ এবং স্টার্টআপ ঋণ মিলেনিয়ালদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালে, ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ স্কিম অফার করছে। এই প্রতিবেদনে আমরা মিলেনিয়ালদের স্টার্টআপ ও সাইড হাসলের জন্য ঋণ নেওয়ার প্রবণতা, এর সুবিধা, এবং সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করব।

মিলেনিয়ালদের হাসল কালচার
মিলেনিয়ালরা (১৯৮১-১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীরা) তাদের উদ্যমী মনোভাব এবং স্বাধীনতার জন্য পরিচিত। তারা ঐতিহ্যবাহী ৯-৫ চাকরির পরিবর্তে নিজেদের ব্র্যান্ড তৈরি করতে বা সাইড হাসলের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ের পথ খুঁজছে। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার তরুণ উদ্যোক্তা সোহম সেনগুপ্ত, যিনি তার ফুলটাইম চাকরির পাশাপাশি একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম শুরু করেছেন, বলেন, “আমার স্বপ্ন ছিল নিজের একটি ব্যবসা। একটি ব্যক্তিগত ঋণ আমাকে প্রাথমিক মূলধন দিয়েছে, যা দিয়ে আমি আমার ওয়েবসাইট এবং ইনভেন্টরি তৈরি করেছি।” এই প্রবণতা কেবল কলকাতায় নয়, দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদের মতো শহরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

   

কেন ঋণ নিচ্ছেন মিলেনিয়ালরা?
স্টার্টআপ বা সাইড হাসল শুরু করার জন্য প্রাথমিক মূলধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিলেনিয়ালরা বিভিন্ন কারণে ব্যক্তিগত ঋণ বা বিশেষ স্টার্টআপ ঋণের দিকে ঝুঁকছেন:
• দ্রুত অর্থ সরবরাহ: ব্যক্তিগত ঋণের জন্য জামানতের প্রয়োজন হয় না এবং ২৪-৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডিসবার্সাল সম্ভব। এটি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আদর্শ, যারা দ্রুত তাদের ধারণা বাস্তবায়ন করতে চান।
• নমনীয় পুনরায় পরিশোধ: ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসি (নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি) ১২ থেকে ৬০ মাস পর্যন্ত ইএমআই (Equated Monthly Installment) অফার করে, যা মিলেনিয়ালদের আর্থিক চাপ কমায়।
• বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য ব্যবহার: ব্যক্তিগত ঋণ দিয়ে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, মার্কেটিং, ইনভেন্টরি ক্রয়, বা এমনকি ফ্রিল্যান্সিং সরঞ্জাম কেনার জন্য অর্থ ব্যবহার করা যায়।
• সরকারি স্কিমের সুবিধা: ভারত সরকারের স্টার্টআপ ইন্ডিয়া এবং মুদ্রা যোজনার মতো স্কিমগুলো তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য কম সুদে ঋণ প্রদান করছে।

জনপ্রিয় স্টার্টআপ ও সাইড হাসল
২০২৫ সালে মিলেনিয়ালরা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগে ঝুঁকছে:
• ই-কমার্স: হস্তশিল্প, পোশাক, বা স্থানীয় পণ্য বিক্রির জন্য অনলাইন স্টোর।
• কনটেন্ট ক্রিয়েশন: ইউটিউব চ্যানেল, পডকাস্ট, বা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সিং।
• ফ্রিল্যান্সিং: গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।
• ফুড অ্যান্ড বেভারেজ: ক্লাউড কিচেন, কফি শপ, বা ফুড ট্রাক।
• টেক স্টার্টআপ: এডটেক, ফিনটেক, বা হেলথটেক কোম্পানি।
উদাহরণস্বরূপ, বেঙ্গালুরুর মিলেনিয়াল অদিতি রায় একটি ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে তাঁর ইকো-ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্টের স্টার্টআপ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, “৫ লাখ টাকার ঋণ আমাকে প্রাথমিক ইনভেন্টরি এবং মার্কেটিংয়ের জন্য সাহায্য করেছে। এখন আমার ব্যবসা মাসে ২ লাখ টাকার বেশি আয় করছে।”

শীর্ষ ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
২০২৫ সালে মিলেনিয়ালদের জন্য কিছু শীর্ষ ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান কম সুদে ঋণ দিচ্ছে:
• স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই): এসবিআই-এর মুদ্রা যোজনা এবং স্টার্টআপ ঋণ স্কিম ৮.৫% থেকে সুদে ঋণ প্রদান করে। সর্বাধিক ঋণের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
• এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক: ব্যক্তিগত ঋণে ১০.৫% থেকে সুদের হার এবং দ্রুত ডিসবার্সাল। মিলেনিয়ালদের জন্য প্রি-অ্যাপ্রুভড ঋণের সুবিধা রয়েছে।
• বাজাজ ফিনসার্ভ: এনবিএফসি হিসেবে এটি ১১% থেকে সুদে ঋণ দেয় এবং ডিজিটাল আবেদন প্রক্রিয়া সহজ।
• আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক: স্টার্টআপের জন্য বিশেষ ঋণ স্কিম, যেখানে সুদের হার ১০% থেকে শুরু এবং মেয়াদ ৭ বছর পর্যন্ত।
• কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ১০.২৫% থেকে সুদে ঋণ এবং নমনীয় ইএমআই।

Advertisements

ঋণ নেওয়ার সুবিধা
• দ্রুত মূলধন: ব্যক্তিগত ঋণ দ্রুত মূলধন সরবরাহ করে, যা স্টার্টআপের প্রাথমিক পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• ক্রেডিট বিল্ডিং: সময়মতো ইএমআই পরিশোধ করলে ক্রেডিট স্কোর উন্নত হয়, যা ভবিষ্যতে বড় ঋণ পেতে সহায়ক।
• নমনীয়তা: ঋণের অর্থ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়, যেমন ইনভেন্টরি ক্রয়, মার্কেটিং, বা টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট।
• সরকারি সহায়তা: স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার মতো স্কিমগুলো ট্যাক্স ছাড় এবং কম সুদের ঋণের সুবিধা দেয়।

সতর্কতা ও পরামর্শ
ঋণ নেওয়ার আগে মিলেনিয়ালদের কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
• বাজেট পরিকল্পনা: ব্যবসায়ের আয়ের উপর ভিত্তি করে ইএমআই পরিশোধের পরিকল্পনা করুন। আপনার মাসিক আয়ের ৪০% এর বেশি ইএমআই হওয়া উচিত নয়।
• ক্রেডিট স্কোর: ৭৫০ বা তার বেশি ক্রেডিট স্কোর থাকলে কম সুদের হার পাওয়া যায়। নিয়মিত ক্রেডিট স্কোর চেক করুন।
• ব্যবসায়িক পরিকল্পনা: একটি বিস্তারিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করুন, যাতে ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়।
• অতিরিক্ত ফি: প্রসেসিং ফি (১-৩%), প্রি-পেমেন্ট চার্জ, এবং দেরিতে পেমেন্টের জরিমানা বিবেচনা করুন।
• ব্যাঙ্ক তুলনা: বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সুদের হার, মেয়াদ, এবং শর্তাবলী তুলনা করে সেরা অফারটি বেছে নিন।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি ৫ লাখ টাকার ঋণ নিচ্ছেন ১০.৫% সুদে ৩ বছরের জন্য। এই ক্ষেত্রে আপনার মাসিক ইএমআই হবে প্রায় ১৬,৬০০ টাকা। এই পরিমাণ আপনার ব্যবসায়ের আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে, ঋণ নেওয়া একটি স্মার্ট সিদ্ধান্ত হতে পারে।

সফলতার গল্প
কলকাতার অনুষ্কা দাস, যিনি একটি ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে তাঁর বেকারি ব্যবসা শুরু করেছেন, বলেন, “আমি ৩ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছিলাম। এটি আমাকে ওভেন, কাঁচামাল, এবং মার্কেটিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে সাহায্য করেছে। এখন আমার ব্যবসা প্রতিদিন ৫০০০ টাকার বেশি আয় করছে।” এই ধরনের গল্প মিলেনিয়ালদের মধ্যে ঋণ নিয়ে স্টার্টআপ শুরু করার আগ্রহ বাড়িয়েছে।

মিলেনিয়ালরা তাদের স্টার্টআপ এবং সাইড হাসলের জন্য ব্যক্তিগত ঋণের মাধ্যমে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। এসবিআই, এইচডিএফসি, বা বাজাজ ফিনসার্ভের মতো প্রতিষ্ঠানের কম সুদের ঋণ এবং সরকারি স্কিমগুলো এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করেছে। তবে, ঋণ নেওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিলেনিয়ালদের এই হাসল কালচার ভারতের অর্থনীতিতে নতুন গতি যোগ করছে, এবং ব্যক্তিগত ঋণ তাদের স্বপ্ন পূরণের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালে, আপনার স্টার্টআপ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সঠিক ঋণ বেছে নিন এবং আপনার ব্যাকপ্যাক থেকে ব্যবসার যাত্রা শুরু করুন।