সেমিকন্ডাক্টর খাতে বড় পদক্ষেপ, MIC Electronics-এর সঙ্গে MoU-এর চুক্তি

বুধবার MIC Electronics Limited ঘোষণা করল যে তারা সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক Top2 PTE Limited-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে। এর মাধ্যমে তাইওয়ানের একটি সম্ভাব্য সেমিকন্ডাক্টর…

Govt Likey To Extend Of Electronics Manufacturing Scheme Beyond July Amid Strong Demand

বুধবার MIC Electronics Limited ঘোষণা করল যে তারা সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক Top2 PTE Limited-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে। এর মাধ্যমে তাইওয়ানের একটি সম্ভাব্য সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন পার্টনারকে চিহ্নিত ও চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এই চুক্তি SEBI (Listing Obligations and Disclosure Requirements) Regulations, 2015-এর ৩০ নম্বর নিয়ম অনুযায়ী সম্পাদিত হয়েছে।

   

চুক্তির অধীনে পরিকল্পনা করা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে মাসিক ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ সেমিকন্ডাক্টর ওয়েফার উৎপাদন শুরু করা হবে। তবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে সম্ভাব্যতা যাচাই, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন এবং সফল আলোচনার ওপর। MIC Electronics এক্সচেঞ্জ ফাইলিং-এ বলেছে, “এই সমঝোতা স্মারকের উদ্দেশ্য হলো এমন একটি কাঠামো তৈরি করা যার মাধ্যমে MIC, Top2-কে সম্পৃক্ত করবে এবং তাইওয়ান থেকে সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন পার্টনার খুঁজে বের করে চূড়ান্ত করবে। মাসিক ২৫,০০০–৩০,০০০ ওয়েফার উৎপাদনের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

কোম্পানি স্পষ্ট করেছে, যেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেখানে MIC-এর কোনও শেয়ারহোল্ডিং নেই। পাশাপাশি এই চুক্তি তাদের বোর্ডে প্রতিনিধিত্ব বা বিশেষ আর্থিক অধিকার দেয় না। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে যে, এই চুক্তি সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেনের (related party transaction) আওতায় পড়ে না।

ভারত সরকার গত কয়েক বছরে সেমিকন্ডাক্টর খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে একাধিক প্রণোদনা পরিকল্পনা চালু করেছে। যেমন—প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (PLI) স্কিম, চিপস অ্যান্ড ডিসপ্লে ফ্যাব প্রকল্প, ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার ইত্যাদি। এই সমস্ত উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো বিশ্বমানের সেমিকন্ডাক্টর প্লেয়ারদের ভারতে টেনে আনা এবং দেশীয় উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

এখন পর্যন্ত MIC Electronics মূলত LED ডিসপ্লে ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সমাধান প্রদানে সক্রিয় ছিল। এবার তারা একেবারে নতুন এক খাতে পা রাখছে—সেমিকন্ডাক্টর। এটি কেবল তাদের ব্যবসার বৈচিত্র্যকরণ নয়, বরং একটি কৌশলগত পদক্ষেপও বটে। সেমিকন্ডাক্টর শিল্প এখন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত, যেখানে অটোমোটিভ, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন, ৫জি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিপুল চাহিদা তৈরি হচ্ছে।

Advertisements

বিশ্ব সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে তাইওয়ানের ভূমিকা অপরিসীম। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফাউন্ড্রিগুলি—যেমন TSMC—সেখানে অবস্থিত। এ কারণেই MIC Electronics তাইওয়ান থেকে পার্টনার বেছে নিতে আগ্রহী। এই অংশীদারিত্ব সফল হলে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর চাহিদার এক বড় অংশ দেশীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে এবং আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমে আসবে।

বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন সংকট ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেমিকন্ডাক্টর খাত আরও বেশি কৌশলগত হয়ে উঠেছে। একদিকে আমেরিকা–চীন প্রযুক্তি দ্বন্দ্ব, অন্যদিকে ভারতীয় বাজারে দ্রুত বাড়তে থাকা চাহিদা—সব মিলিয়ে নতুন বিনিয়োগের জন্য এখনই সঠিক সময়। গবেষণা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় সেমিকন্ডাক্টর বাজার ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্পর্শ করবে। MIC-এর এই পদক্ষেপ সেই প্রবৃদ্ধির একটি অংশ দখল করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, MIC Electronics-এর এই উদ্যোগ কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা বাড়াবে। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন, অনুমোদন এবং আলোচনার চ্যালেঞ্জ থাকছে, তবু সফল হলে এটি কোম্পানিকে দেশের সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালু চেইনে একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থানে নিয়ে যাবে।

কোম্পানি আরও জানিয়েছে, এই এমওইউ-তে কোনও সংশোধন, সমাপ্তি বা পরিবর্তন ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানানো হবে। এতে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অটুট থাকবে।

MIC Electronics-এর এই নতুন পদক্ষেপ শুধুমাত্র তাদের ব্যবসার প্রসার নয়, বরং ভারতের সেমিকন্ডাক্টর যাত্রায় একটি কৌশলগত অগ্রগতি। সরকার যখন দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে সচেষ্ট, তখন MIC-এর মতো সংস্থা আন্তর্জাতিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে এগিয়ে আসছে—যা ভারতের ১০০ বিলিয়ন ডলারের সেমিকন্ডাক্টর বাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে দিল।