ক্যান্সার আক্রান্ত ঋণ জালিয়াতি মামলার অভিযুক্ত মেহুল চোকসি

পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি মামলার (PNB Fraud Case) প্রধান অভিযুক্ত মেহুল চোকসি বর্তমানে বেলজিয়ামে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার আইনজীবী মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিশেষ আদালতকে জানিয়েছেন…

Mehul Choksi in Belgium for Cancer Treatment

পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি মামলার (PNB Fraud Case) প্রধান অভিযুক্ত মেহুল চোকসি বর্তমানে বেলজিয়ামে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার আইনজীবী মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিশেষ আদালতকে জানিয়েছেন যে, চোকসি বর্তমানে ক্যান্সারের সন্দেহজনক চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বেলজিয়ামে আছেন। মেহুল চোকসি, যার বিরুদ্ধে ভারতীয় সরকার অর্থনৈতিক অপরাধের অভিযোগে তদন্ত চালাচ্ছে, ২০১৮ সালে ভারতের বাইরে চলে যান এবং তিনি বর্তমানে আছেন অ্যান্টিগুয়া এবং বার্বুডাতে।

এই বিশেষ আদালত বর্তমানে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)-এর একটি আবেদনের শুনানি করছে, যেখানে তারা মেহুল চোকসিকে “ফুগিটিভ ইকোনমিক অফেন্ডার” (FEO) ঘোষণা করার জন্য আবেদন করেছে। যদি আদালত চোকসিকে ফুগিটিভ ইকোনমিক অফেন্ডার হিসেবে ঘোষণা করে, তবে সরকার তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে।

   

মেহুল চোকসি, তার প্রতিষ্ঠান গিতাঞ্জলি গেমস এবং অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে পিএনবি-এর ব্র্যাডি হাউজ শাখায় ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ অনুসারে, তারা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে জালিয়াতি করে বেআইনি ভাবে লেটার অব আন্ডারটেকিং (LOU) ইস্যু করেছিল এবং বিদেশী লেটার অফ ক্রেডিট (FLC) বাড়িয়ে নেয়। এই জালিয়াতি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার হয় এবং পিএনবি-এর দুর্বলতার কারণে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব পড়ে।

ইডি ইতোমধ্যে চোকসির বিরুদ্ধে তিনটি চার্জশিট দাখিল করেছে। ২০১৯ সালে মুম্বাই হাইকোর্টে ইডি জানিয়েছিল যে, চোকসি একজন “ফুগিটিভ” এবং “অ্যাবসকনডার” (পলাতক আসামি)। ইডির এই দাবি যে চোকসি ভারতের বিচার ব্যবস্থা থেকে পালিয়ে গেছেন এবং তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন, তা মুম্বাই হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

মেহুল চোকসির আইনজীবী ভিজয় আগরওয়াল মঙ্গলবার আদালতে জানান যে, তিনি চোকসির শারীরিক অবস্থার বিবরণ দিতে একটি আবেদন দাখিল করতে চান। তিনি জানান, চোকসি বর্তমানে বেলজিয়ামে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যেখানে তার ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, চোকসি এই মুহূর্তে বিদেশে অবস্থান করলেও, তিনি কখনোই ভারতীয় আদালতের দিকে মনোযোগ দেননি এবং দীর্ঘদিন ধরে এই বিচারিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেননি।

মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে পিএনবি ঋণ জালিয়াতি মামলায় সিবিআই এবং ইডি দীর্ঘদিন ধরেই তদন্ত চালাচ্ছে। ২০১৮ সালে, চোকসি এবং তার ভাগ্নে নিরব মোদি, যিনি আরেকটি উল্লেখযোগ্য অভিযুক্ত, তাদের পরিবারের সদস্যদের, কর্মচারীদের এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করা হয়। নিরব মোদি ২০১৯ সালে ফুগিটিভ ইকোনমিক অফেন্ডার হিসেবে ঘোষণা করা হলেও, চোকসির বিরুদ্ধে এই প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি।

পিএনবি ঋণ জালিয়াতি ভারতের ব্যাংকিং সেক্টরে একটি বড় স্ক্যান্ডাল সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি হওয়ার কারণে, পিএনবি এর ঋণ খেলাপির ঘটনা শুধু দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বরং ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা দেশের অর্থনীতির প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে এবং সরকারের কাছে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জোরালো করেছে।

এই জালিয়াতি কেলেঙ্কারিতে চোকসি এবং তার ভাগ্নে নিরব মোদি দুজনেই মূল অভিযুক্ত। তারা নিজেদের ব্যবসা সামলাতে পিএনবি থেকে বেআইনি ঋণ তুলে নিয়ে এবং বিদেশে টাকা পাচার করে বিশাল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই মামলার মধ্যে আছেন বেশ কিছু ব্যাংক কর্মকর্তাও, যারা তাদের সাথে সন্ত্রাসী চুক্তি করে এই জালিয়াতির অনুমোদন দিয়েছেন।

ইডি ইতোমধ্যে চোকসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে তদন্ত এবং প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দেশের বাইরের বিচার ব্যবস্থাও চোকসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন তদন্ত প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, যাতে তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আদালতে আজকের শুনানির সময় ইডি আদালতের কাছে অনুরোধ করেছে যে, মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে ফুগিটিভ ইকোনমিক অফেন্ডার হিসেবে ঘোষণা করা হোক, যাতে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।

মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে পিএনবি ঋণ জালিয়াতি মামলার শুনানি এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকলেও, এখনও পর্যন্ত চোকসি তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভারতীয় আদালতের দিকে মনোযোগ দেননি। তার বিদেশে অবস্থান এবং চিকিৎসার কারণে এই মামলা এখনও সমাধান হতে পারেনি। তবে, এই মামলার পরিণতি দেশের আইন ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ফলাফল দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।