আমেরিকা শুল্ক চাপালেও ভাঙছে না সম্পর্ক, জানাল বিদেশ মন্ত্রক

ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (India-US) মধ্যে সম্পর্কের দৃঢ়তা ও স্থিতিশীলতা পুনর্ব্যক্ত করল কেন্দ্র সরকার, এমন এক সময়ে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যের…

Future of India US economic ties

ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (India-US) মধ্যে সম্পর্কের দৃঢ়তা ও স্থিতিশীলতা পুনর্ব্যক্ত করল কেন্দ্র সরকার, এমন এক সময়ে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া এই শুল্ক ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে।

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বহু পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়েও এগিয়ে চলেছে। এই সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।”
তিনি আরও জানান, “আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শক্তিশালী সহযোগিতা রয়েছে, যা গত কয়েক বছরে আরও সুদৃঢ় হয়েছে। ভবিষ্যতে এই অংশীদারিত্ব আরও গভীর ও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

   

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে:
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রপ্তানির উপর অতিরিক্ত ট্যারিফ চাপিয়েছে, তবুও নয়াদিল্লি আত্মবিশ্বাসী যে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক এগিয়ে চলবে। “আমরা নিশ্চিত যে, আমাদের সম্পর্ক ভবিষ্যতেও অগ্রসর হবে,” বলেন জয়সওয়াল।
তিনি আরও বলেন, “আমরা যে কোনও দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করি। কোনও তৃতীয় পক্ষের প্রেক্ষাপটে সেই সম্পর্কের ব্যাখ্যা করা উচিত নয়।”

ট্রাম্পের অভিযোগ ও ভারতের জবাব:
ট্রাম্পের এই শুল্ক ঘোষণার মূল কারণ হিসাবে উঠে এসেছে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনা। তাঁর দাবি, ভারত যখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছে, তখন কেন তারা রাশিয়ার সঙ্গে বড় পরিমাণ চুক্তি করছে?
এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাস ধরে একটি সঠিক, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। আমরা সেই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা:
প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উভয় দেশ একাধিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেছে। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনছে এবং যৌথ সামরিক মহড়াও পরিচালনা করছে।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “এই প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে। দুই দেশই বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত মনোযোগী এবং ইতিবাচক।”

Advertisements

কূটনৈতিক বার্তা:
ট্রাম্পের ট্যারিফ ঘোষণার পরেও নয়াদিল্লি যে রক্ষণাত্মক মনোভাব না নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কূটনৈতিক বার্তা দিচ্ছে, তা স্পষ্ট। ভারত সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, দুই দেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক এবং একে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক মাপকাঠিতে বিচার করা ঠিক নয়।
ভারতের অবস্থান স্পষ্ট—ট্যারিফ চাপানো সত্ত্বেও আলোচনার দ্বার খোলা থাকবে এবং যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে সমাধান খোঁজার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বিশ্লেষকদের মত:
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মূলত নির্বাচনী কৌশল। তিনি আমেরিকান জনগণের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বার্তা দিতে চাইছেন। তবে এতে ভারত-আমেরিকা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের খুব বেশি ক্ষতি হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। ফলে কিছু অস্থায়ী উত্তেজনা থাকলেও, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তা নিঃসন্দেহে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে। তবে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট, তারা উত্তেজনা না বাড়িয়ে সম্পর্ক রক্ষা ও উন্নত করার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে।

বিদেশ মন্ত্রকের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক একটি সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদারিত্ব—যা ভবিষ্যতেও চলবে। এমনকি চাপের মুখেও নয়াদিল্লি শান্ত ও কূটনৈতিক পথে চলেই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং আলোচনার মাধ্যমে কত দ্রুত এই দ্বন্দ্ব মিটে যায়। তবে ভারতের বার্তা স্পষ্ট—সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাই আসল লক্ষ্য।