ভারতে সোনার দাম (Gold Price) এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গত দুটি টানা সেশনে সোনার দামে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। বর্তমানে ২৪ ক্যারাট সোনার দাম ১০ গ্রামে ৯০,৬৬০ টাকায় নেমে এসেছে, যা এই মাসের সর্বনিম্ন স্তর। এর আগে সোনার দাম ১০ গ্রামে ৯৩,৩৮০ টাকার সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছেছিল, কিন্তু গত সপ্তাহে এটি ২.৫% এরও বেশি কমে গেছে। এমসিএক্স (মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ) সোনার দামও গত সপ্তাহে ৯১,৪২৩ টাকার শীর্ষ থেকে কমে ৮৮,১৩০ টাকায় বন্ধ হয়েছে। আগামী সপ্তাহ, অর্থাৎ ৭ থেকে ১১ এপ্রিলের ট্রেডিং সেশন, বাজারে তীব্র অস্থিরতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এমসিএক্স সোনা এই সপ্তাহে নতুন রেকর্ড ৯১,৫০০ টাকায় পৌঁছতে পারে।
সোনার দামের বর্তমান চিত্র
বর্তমানে ভারতে ২৪ ক্যারাট সোনার দাম ১০ গ্রামে ৯০,৬৬০ টাকা, ২২ ক্যারাট সোনার দাম ৮৩,১০০ টাকা এবং ১৮ ক্যারাট সোনার দাম ৬৭,৯৯০ টাকা। প্রতি গ্রাম হিসেবে দেখলে, ২৪ ক্যারাট সোনার দাম ৯,০৬৬ টাকা, ২২ ক্যারাটের দাম ৮,৩১০ টাকা এবং ১৮ ক্যারাটের দাম ৬,৭৯৯ টাকা। এপ্রিল মাসে এখনও পর্যন্ত সোনার দাম ২.৩% কমেছে। গত দুই দিনে ১০০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনার দাম ২৭,২০০ টাকা এবং ১০ গ্রামে ২,৭২০ টাকা কমেছে। এই পতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এটি সাময়িক প্রতিক্রিয়া।
রুপোর দামে বড় পতন
সোনার পাশাপাশি রুপোর দামেও বড় ধরনের পতন লক্ষ্য করা গেছে। এপ্রিল মাসে রুপোর দাম ১০.৫% কমেছে। বর্তমানে ভারতে ১ কেজি রুপোর দাম ৯৪,০০০ টাকা, অর্থাৎ প্রতি গ্রামে ৯৪ টাকা। তবে চেন্নাই, কেরালা এবং হায়দ্রাবাদের মতো কিছু শহরে ১ কেজি রুপোর দাম এখনও ১,০৩,০০০ টাকার উপরে রয়েছে। এমসিএক্স-এ রুপোর দাম (মে ২০২৫ মেয়াদ) গত শুক্রবার ৮৭,৪৩১ টাকায় বন্ধ হয়েছে, যা ২২০ টাকা বা ০.২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমসিএক্স সোনা ও রুপোর গতিপথ
গত শুক্রবার এমসিএক্স সোনার দাম (জুন ২০২৫ মেয়াদ) ৮৮,১৩০ টাকায় বন্ধ হয়েছে, যা ৫৫ টাকা বা ০.০৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এটি গত সপ্তাহের সর্বোচ্চ ৯১,৪২৩ টাকা থেকে অনেকটাই কমে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী সপ্তাহে এমসিএক্স সোনা ৯১,৫০০ টাকার নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে, যা হবে একটি নতুন রেকর্ড। এই সম্ভাবনার পিছনে রয়েছে বিশ্ববাজারের অস্থিরতা, নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির ক্রয় কার্যক্রম।
বিশ্ববাজার ও অর্থনৈতিক প্রভাব
এসএমসি গ্লোবাল সিকিউরিটিজের সাপ্তাহিক প্রতিবেদন অনুসারে, সোনা গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী গতি বজায় রেখেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমস্ত আমদানির উপর ১০% শুল্ক এবং প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর আরও কঠোর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক বাণিজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা সোনার মতো নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্ক থেকে মূল্যবান ধাতু বাদ দেওয়ার খবরে সোনার দামে কিছুটা মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে।
এছাড়া, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির বড় ক্রয় এবং সোনা-সমর্থিত ইটিএফ-এ বিনিয়োগ বৃদ্ধি সোনার বুলিশ প্রবণতাকে সমর্থন করছে। আগামী দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নন-ফার্ম পে-রোল রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা ফেডের পরবর্তী পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেবে। শুল্ক নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে।
প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ
এসএমসি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমেক্স সোনার প্রতিরোধ স্তর ৩,২০০ ডলার এবং সমর্থন স্তর ৩,০৮০ ডলারে রয়েছে। এমসিএক্স সোনার ক্ষেত্রে সমর্থন ৮৭,৫০০ টাকা এবং প্রতিরোধ ৯১,৫০০ টাকায় থাকবে। রুপোর দাম ৮৮,০০০ থেকে ৯৬,০০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকেত এবং মার্কিন ডেটা এই সপ্তাহে দামের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ভারতের বাজারে প্রভাব
ভারতে সোনা ও রুপোর দাম শুধুমাত্র বৈশ্বিক বাজারের উপর নির্ভর করে না, স্থানীয় চাহিদা, আমদানি শুল্ক এবং মুদ্রার মানও এতে ভূমিকা রাখে। এপ্রিলে সোনার দাম কমলেও, বিবাহের মরসুম এবং উৎসবের সময়ে চাহিদা বাড়তে পারে। তবে বর্তমান অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আগামী সপ্তাহে সোনা ও রুপোর দামে তীব্র ওঠানামার সম্ভাবনা রয়েছে। এমসিএক্স সোনা ৯১,৫০০ টাকায় পৌঁছতে পারে, যদি বৈশ্বিক সংকেত ইতিবাচক থাকে। বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে বাজারের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর নজর রাখা জরুরি।