চাল আমদানিতে পাকিস্তানকে বর্জন করে ভারতের দ্বারস্থ মরিশাস

mauritius-india-rice-import-deal-replaces-pakistan

দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মানচিত্রে ভারতের আরেকটি বড় জয়। আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস এবার চাল আমদানির ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে সরিয়ে ভারতের দ্বারস্থ। এই সিদ্ধান্ত শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তাও বহন করছে বিশ্ববাজারে খাদ্য নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীক হিসেবে ভারত এখন অন্যতম শক্তিশালী অংশীদার।

Advertisements

মরিশাস সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছর থেকে তারা প্রতিবছর প্রায় ৩৩,০০০ টন ভারতীয় চাল আমদানি করবে। এই চাল মূলত তাদের সরকারি ভর্তুকিযুক্ত খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিতরণ করা হবে, যা দ্বীপদেশটির সাধারণ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

   

ভারতের মহাকাশ থেকে সাগরজয়: নৌবাহিনীর কৌশলে বিপ্লব আনছে ইসরোর CMS-03

এর আগে দীর্ঘদিন ধরে মরিশাস পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি করত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের রফতানি গুণমান, সরবরাহ অনিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয় মরিশাস সরকারের মধ্যে। সেই কারণেই এবার তারা ভারতকেই বেছে নিয়েছে একটি স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ এবং রপ্তানিতেও শীর্ষস্থানীয়। বিশেষ করে বাসমতী ও নন-বাসমতী উভয় ধরনের চালের গুণমান ও সরবরাহ ক্ষমতার জন্য ভারতের প্রতি আফ্রিকান দেশগুলির আস্থা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু মরিশাস নয়, ইতিমধ্যেই কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ঘানা ও মোজাম্বিকও ভারতীয় চালের প্রধান আমদানিকারক।

বিদেশ মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “মরিশাসের এই সিদ্ধান্ত ভারতের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থারই প্রতিফলন। ভারত কেবল খাদ্য রফতানিকারক নয়, বরং এক নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী।” এই পদক্ষেপকে অনেকেই পাকিস্তানের জন্য “আরও একটি কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক ধাক্কা” বলে অভিহিত করছেন।

Advertisements

গত কয়েক বছরে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বাণিজ্যিক বাজারে পাকিস্তানের প্রভাব ক্রমশ কমছে। অপরদিকে, ভারতের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ক্ষমতা, স্থিতিশীল নীতিনির্ধারণ এবং বিশ্বস্ত সরবরাহ ব্যবস্থা ভারতকে করেছে আফ্রিকার দেশগুলির প্রথম পছন্দ।

মরিশাসে প্রবাসী ভারতীয়দের প্রভাবও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায় ভারত-মরিশাস সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গভীর। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক বহু পুরোনো। তাই পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের সঙ্গে নতুন চাল আমদানি চুক্তি মরিশাসের জন্য ছিল স্বাভাবিক ও কৌশলগতভাবে লাভজনক সিদ্ধান্ত।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত ভারতের কৃষি রফতানিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশীয় কৃষকদের জন্যও নতুন বাজার খুলে দেবে। বিশেষ করে পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো যেমন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা এই রফতানির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে লাভবান হতে পারে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের রপ্তানি খাতে এর প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দেশটির উৎপাদন ও রফতানি ব্যবস্থা ব্যাপক চাপে রয়েছে। মরিশাসের এই সিদ্ধান্ত যেন সেই সংকটের ওপর আরও এক প্রকার কূটনৈতিক ছায়া ফেলল।

সামগ্রিকভাবে, মরিশাসের এই সিদ্ধান্ত ভারতকে আন্তর্জাতিক খাদ্য বাণিজ্যের মানচিত্রে আরও এক ধাপ উপরে তুলল। একদিকে যেখানে পাকিস্তানের বাজার সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে ভারত তার “বিশ্বস্ত অংশীদার” ভাবমূর্তিকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করছে।