২০২৫-এ চতুর্থবারের মতো গাড়ির দাম বাড়াল মারুতি সুজুকি

ভারতের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি (Maruti Suzuki) ইন্ডিয়া লিমিটেড বুধবার ঘোষণা করেছে যে, আগামী ৮ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে তাদের গাড়ির দাম বাড়ানো হবে। কাঁচামালের…

Maruti Suzuki Price Hike

ভারতের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি (Maruti Suzuki) ইন্ডিয়া লিমিটেড বুধবার ঘোষণা করেছে যে, আগামী ৮ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে তাদের গাড়ির দাম বাড়ানো হবে। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, উৎপাদন ও লজিস্টিকস খরচ বৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রক পরিবর্তন এবং নতুন ফিচার যোগ করার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি ২০২৫ সালে কোম্পানির চতুর্থ মূল্যবৃদ্ধি, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ির বাজারে বিক্রি মন্দার মধ্যে ঘটছে। এই ঘোষণা এসেছে আমেরিকার প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক নীতির ঠিক আগে, যেখানে গাড়ি, ট্রাক এবং অটো পার্টস আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

মারুতি সুজুকির এই নতুন মূল্যবৃদ্ধির ফলে গ্র্যান্ড ভিটারার দাম সর্বোচ্চ ৬২,০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়বে বলে একটি এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে জানানো হয়েছে। এছাড়া, ইকোর দাম ২২,৫০০ টাকা, ওয়াগন-আর-এর দাম ১৪,০০০ টাকা, এরটিগার দাম ১২,৫০০ টাকা, এক্সএল৬-এর দাম ১২,৫০০ টাকা, ডিজায়ার ট্যুর এস-এর দাম ৩,০০০ টাকা এবং ফ্রঙ্কস-এর দাম ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর আগে কোম্পানি ১ জানুয়ারি, ১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৭ মার্চ তিনবার গাড়ির দাম বাড়িয়েছিল।

   

গ্লোবাল রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন বিঘ্ন এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে অটোমোবাইল নির্মাতারা উচ্চ উৎপাদন খরচের মুখোমুখি হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লজিস্টিকস খরচ বৃদ্ধি এবং নতুন নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড পূরণের জন্য অতিরিক্ত বিনিয়োগ। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে নতুন শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা শিল্পের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে। আমেরিকার এই ২৫ শতাংশ শুল্ক ভারতীয় গাড়ি নির্মাতাদের রপ্তানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে, যা তাদের খরচ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

মারুতি সুজুকি ভারতের গাড়ি বাজারে প্রায় ৪১ শতাংশ শেয়ার নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। তবে, ২০২৫ সালে বিক্রির গতি কিছুটা মন্দা হওয়ায় কোম্পানি বারবার দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। গত মাসে কিয়া ইন্ডিয়া, টাটা মোটরস এবং হুন্ডাই মোটর ইন্ডিয়া-সহ অন্যান্য গাড়ি নির্মাতারাও দাম বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে মারুতির এই সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের জন্য আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যারা ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছেন।

কোম্পানির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা ক্রমাগত খরচ অপ্টিমাইজেশনের চেষ্টা করছি এবং গ্রাহকদের উপর প্রভাব কমানোর জন্য কাজ করছি। তবে, বর্ধিত খরচের কিছু অংশ বাজারে স্থানান্তর করা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই।” এই মূল্যবৃদ্ধি গ্র্যান্ড ভিটারার মতো জনপ্রিয় এসইউভি থেকে শুরু করে ইকোর মতো সাশ্রয়ী মডেল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, যা বিভিন্ন গ্রাহক শ্রেণির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আমেরিকার নতুন শুল্ক নীতি ভারতীয় অটোমোবাইল শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। মারুতি সুজুকি গত ডিসেম্বরে ৩৭,৪১৯ ইউনিট গাড়ি রপ্তানি করে মাসিক রেকর্ড গড়েছে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৩,২৫,০০০ ইউনিট রপ্তানির লক্ষ্যে এগোচ্ছে। তবে, আমেরিকার বাজারে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে রপ্তানি লাভে ধস নামতে পারে। এই পরিস্থিতি কোম্পানিকে দেশীয় বাজারে আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলতে পারে, যেখানে ইতিমধ্যেই বিক্রি মন্দা চলছে।

Advertisements

শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং সাপ্লাই চেইন সমস্যা গত কয়েক মাসে অটোমোবাইল শিল্পের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের রিপোর্ট অনুযায়ী, অ্যালুমিনিয়ামের দাম গত বছরের তুলনায় ১০.৬ শতাংশ এবং রাবারের দাম ২৬.৮ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া, লোহিত সাগরে চলমান উত্তেজনার কারণে শিপিং খরচও বেড়েছে, যা আমদানি-রপ্তানির খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সমস্ত কারণে গাড়ি নির্মাতারা বাধ্য হয়ে দাম বাড়াচ্ছে, যদিও এটি বিক্রির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

মারুতি সুজুকির এই ঘোষণার পর কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ মারুতি সুজুকি ফ্রঙ্কস ভারতের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গাড়ি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, এবং ব্রেজা, ওয়াগন-আর এবং সুইফটও বিক্রির শীর্ষে ছিল। তবে, রপ্তানিতে ১৩.৫ শতাংশ হ্রাসের কারণে মোট বিক্রি মাত্র ০.৯৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১,৯৯,৪০০ ইউনিটে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে দাম বৃদ্ধি গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

ভারতীয় গাড়ি বাজারে মারুতি সুজুকির আধিপত্য অটুট থাকলেও, বারবার দাম বৃদ্ধি গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো, যারা মারুতির সাশ্রয়ী মডেলের উপর নির্ভর করে, তাদের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় ধাক্কা হতে পারে। অন্যদিকে, প্রতিযোগী সংস্থাগুলো যেমন হুন্ডাই, টাটা এবং কিয়াও দাম বাড়ানোর পথে হাঁটছে, যা বাজারে একটি সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা নির্দেশ করে।

আমেরিকার শুল্ক নীতি এবং দেশীয় খরচ বৃদ্ধির এই দ্বিমুখী চাপের মধ্যে মারুতি সুজুকি কীভাবে তার বাজার ধরে রাখে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। গ্রাহকরা এখন আশা করছেন যে, কোম্পানি নতুন ফিচার এবং গুণমানের মাধ্যমে এই দাম বৃদ্ধিকে ন্যায্যতা দেবে। তবে, বিক্রির মন্দা এবং আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে এই পদক্ষেপ কোম্পানির জন্য একটি বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News