আমেরিকায় দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভারতীয় ম্যাঙ্গো লস্যি

Mango Lassi Goes Global: ভারতীয় সংস্কৃতি এখন বিশ্বমঞ্চে এক অনন্য স্থান দখল করেছে। আমেরিকায় ভারতীয় প্রবাসীদের মাধ্যমে হোক বা সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবে, ভারতীয় খাবার, ভাষা…

Mango Lassi Goes Global: Netizens React to Its Surprising Popularity in the West

Mango Lassi Goes Global: ভারতীয় সংস্কৃতি এখন বিশ্বমঞ্চে এক অনন্য স্থান দখল করেছে। আমেরিকায় ভারতীয় প্রবাসীদের মাধ্যমে হোক বা সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবে, ভারতীয় খাবার, ভাষা এবং ঐতিহ্য এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় টেলিভিশন ধারাবাহিক সম্প্রচারিত হচ্ছে, আর আমেরিকায় ভারতীয় খাবার এখন অনেকের প্রিয়। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি এক্স প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে বাটার চিকেন, বাসমতী চাল, গার্লিক নান এবং ম্যাঙ্গো লাসির সংমিশ্রণই সেরা দুপুরের খাবার। এই পোস্টে এক ভারতীয় ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “ম্যাঙ্গো লাসি কীভাবে আমেরিকানদের মধ্যে এত জনপ্রিয় হয়ে গেল? ভারতে তো এটি এতটা জনপ্রিয় নয়।” এই মন্তব্যটি সত্যিই চিন্তার বিষয়, কারণ ভারতে গ্রীষ্মকালে আমের মৌসুমে ম্যাঙ্গো শেকই বেশি জনপ্রিয়।

এই পোস্টটি এক্স-এ ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে এটি ৪৩৮.১ হাজার ভিউ, ২৩২টি মন্তব্য এবং ১১ হাজার লাইক পেয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন যে আমেরিকায় ভারতীয় খাবারের কথা ভাবলেই ম্যাঙ্গো লাসি প্রথমে মনে আসে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আমেরিকানরা ভারতীয় খাবারের কথা ভাবলে চারটি জিনিসের কথাই মনে করে—ছোলে, বাটার চিকেন, নান এবং ম্যাঙ্গো লাসি।” অন্যরা উল্লেখ করেছেন যে আমেরিকার প্রায় প্রতিটি ভারতীয় রেস্তোরাঁয় ম্যাঙ্গো লাসি পাওয়া যায়, এমনকি কিছু রেস্তোরাঁ সারা বছর এটি সরবরাহ করে। একজন লিখেছেন, “সত্যিই দারুণ পর্যবেক্ষণ। আমেরিকার প্রতিটি ভারতীয় রেস্তোরাঁয় ম্যাঙ্গো লাসি আছে।” আরেকজন মজা করে বলেছেন, “প্রথম ধাপ: ভারতের দুটি বিখ্যাত উপাদান—আম এবং লাসি মেশান। দ্বিতীয় ধাপ: টিনজাত আম ব্যবহার করে সারা বছর বিশ্বে বিক্রি করুন (শুধু ভারত ছাড়া)।”

আমেরিকার বাইরেও অনেক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন যে ম্যাঙ্গো লাসি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভারতীয় রেস্তোরাঁয় জনপ্রিয়। যুক্তরাজ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং এমনকি জাপানেও এই পানীয়টি বেশ প্রচলিত। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “যুক্তরাজ্যে এটি খুবই জনপ্রিয়।” আরেকজন জানিয়েছেন, “ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার ভারতীয় রেস্তোরাঁয় এটি বেশ প্রচলিত। মরক্কোর এক রেস্তোরাঁ মালিক আমাকে বলেছিলেন, ভালো মানের আমের পাল্প সরবরাহ পেলে তিনি উত্তর আফ্রিকা জুড়ে এটি বিক্রি করতে পারেন।” জাপানের প্রেক্ষাপটে একজন লিখেছেন, “শুধু আমেরিকানরা নয়, জাপানের প্রায় প্রতিটি শহর এবং ছোট শহরেও ম্যাঙ্গো লাসি পাওয়া যায়।”

ম্যাঙ্গো লাসি একটি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পানীয়, যা দই, আমের পাল্প, দুধ এবং কখনো কখনো এলাচ বা কেশর দিয়ে তৈরি হয়। এটি পাঞ্জাব অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য এটি খুবই উপযোগী। তবে ভারতে এটি ম্যাঙ্গো শেকের তুলনায় কম জনপ্রিয়, কারণ ম্যাঙ্গো শেক তৈরি করা সহজ এবং এতে দইয়ের পরিবর্তে দুধ ব্যবহৃত হয়। আমের মৌসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) ভারতীয়রা আমের স্বাদ উপভোগ করতে ম্যাঙ্গো শেক বা আমের রস পছন্দ করে। বিপরীতে, আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমী দেশে ম্যাঙ্গো লাসি ভারতীয় খাবারের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে। এর ক্রিমি গঠন এবং মিষ্টি-টক স্বাদ বিদেশি ভোক্তাদের মন জয় করেছে।

এই পানীয়টির জনপ্রিয়তার পেছনে ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলির ভূমিকা অপরিসীম। আমেরিকার ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলি ম্যাঙ্গো লাসিকে তাদের মেনুতে একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে স্থান দিয়েছে। অনেক রেস্তোরাঁ টিনজাত আমের পাল্প ব্যবহার করে সারা বছর এটি সরবরাহ করে, যা ভারতের মৌসুমী আমের স্বাদের তুলনায় ভিন্ন হলেও বিদেশি গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্য। এছাড়া, ম্যাঙ্গো লাসির স্বাস্থ্যকর দিকটিও এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী, এবং আমের মিষ্টি স্বাদ এটিকে একটি সুস্বাদু পানীয় করে তুলেছে।

Advertisements

এই ভাইরাল পোস্টটি ভারতীয় সংস্কৃতির বিশ্বায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভারতীয় খাবার এখন শুধু ভারতীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। ম্যাঙ্গো লাসির মতো একটি সাধারণ পানীয় কীভাবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে, তা এই পোস্টের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। তবে, ভারতীয় ব্যবহারকারীর মন্তব্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে—যে পানীয়টি ভারতে তেমন জনপ্রিয় নয়, সেটি কীভাবে বিদেশে ভারতীয় খাবারের প্রতিনিধিত্ব করছে? এর উত্তর হয়তো ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলির বিপণন কৌশল এবং বিদেশি ভোক্তাদের রুচির মধ্যে লুকিয়ে আছে।

এই ঘটনা ভারতীয় প্রবাসীদেরও গর্বিত করেছে। তারা বিদেশের মাটিতে ভারতীয় সংস্কৃতি ও খাবারের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ম্যাঙ্গো লাসির জনপ্রিয়তা শুধু একটি পানীয়ের গল্প নয়, বরং ভারতীয় ঐতিহ্যের বিশ্বজনীনতার প্রতীক। এই পোস্টের মাধ্যমে নেটিজেনদের উচ্ছ্বাস এবং আলোচনা ভারতীয় খাবারের বৈচিত্র্য এবং আকর্ষণকে আরও উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও ভারতীয় পানীয় ও খাবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এমন জনপ্রিয়তা পাবে।