শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত ‘নর্থবেঙ্গল বিজনেস মিট-২০২৫’ এক অনন্য মোড় নেয় যখন শিল্পমহলের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee ) সামনে ট্রেড লাইসেন্স এবং মিউটেশন সংক্রান্ত একাধিক সমস্যা তুলে ধরেন। কোচবিহার ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি সুরজকুমার ঘোষ সরাসরি অভিযোগ করেন, গত তিন বছরে কোচবিহার জেলায় ট্রেড লাইসেন্স ফি বিপুল হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি। একইভাবে মিউটেশন ফি ও কনজারভেনশন ফি বৃদ্ধিও ব্যবসায়ীদের কাঁধে অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই অভিযোগ শুনেই সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, এই ফি যে বেড়েছে, তা তাঁর জানা ছিল না। তিনি এমনকি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “আমি তো ফি বাড়াতে দিই না। আমি জলের উপরও ট্যাক্স বাড়াতে দিই না। এটা তো হওয়া উচিত না।” তিনি তৎক্ষণাৎ মুখ্যসচিবকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়ে পাঠান।
এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, কোনওরকম গাফিলতি বা দুর্নীতি তিনি বরদাস্ত করবেন না। নিচুতলার প্রশাসনিক কর্মীদের টাকা তোলার ঘটনা যেন না ঘটে, সেই বিষয়ে পুলিশকেও তিনি সতর্ক করেন। তাঁর কথায়, “অবিলম্বে এই ধরনের অভিযোগের নিরসন করতে হবে। ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের উপর বাড়তি চাপ দেওয়া চলবে না।”
শিল্প সম্মেলনে উপস্থিত একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠন তাঁদের সমস্যাগুলি তুলে ধরেন। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশ ছাড়াই হঠাৎ করে স্থানীয় পুরসভা বা পঞ্চায়েত স্তরে ফি বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে ছোট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন। বহু ক্ষেত্রেই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির বদলে এইসব পদক্ষেপ শিল্পমহলের মধ্যে একধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই হস্তক্ষেপ শিল্প মহলে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। তাঁদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে সরাসরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশই প্রমাণ করে তিনি ব্যবসায়ী সমাজের সমস্যা নিয়ে যথেষ্ট সংবেদনশীল। এই ধরনের উদ্যোগ প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বাড়াবে এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করতে সাহায্য করবে।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বিভিন্ন শিল্প সম্মেলনে বরাবরই ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এসেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গকে শিল্প-বান্ধব রাজ্য হিসাবে গড়ে তুলতে হলে ব্যবসায়ী সমাজের সমস্যাগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাই তাঁর এই সক্রিয় ভূমিকা আগামী দিনে প্রশাসনের মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে প্রশাসনিক মহলে মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া বার্তার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিতে নড়াচড়া শুরু হয়েছে। মুখ্যসচিব ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন। আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে এবং ব্যবসায়ীদের উপর যে অতিরিক্ত ফি আরোপ হয়েছে, তার একটি সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে।
সব মিলিয়ে, শিলিগুড়ির এই সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর দৃঢ় পদক্ষেপ এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। ব্যবসায়িক পরিবেশকে স্বচ্ছ, সহজ ও অনুকূল করতে তাঁর এই প্রয়াস কতটা কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।