আমেরিকায় বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’

Made in India iPhone: অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় জানিয়েছেন যে, জুন কোয়ার্টারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোন ভারতে…

Majority of iPhones Sold in US to Be Made in India Tim Cook

Made in India iPhone: অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় জানিয়েছেন যে, জুন কোয়ার্টারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোন ভারতে উৎপাদিত হবে। কোম্পানির দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক আয়ের কলের সময় কুক আরও বলেন, ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া প্রায় সব আইপ্যাড, ম্যাক, অ্যাপল ওয়াচ এবং এয়ারপডস পণ্যের উৎপত্তিস্থল হবে। তবে, অন্যান্য বাজারের জন্য ডিভাইসগুলোর বেশিরভাগই চীনে উৎপাদিত হবে, কারণ কর নীতি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা রয়েছে।

কুক জানান, অ্যাপল ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশে ত্রৈমাসিক রেকর্ড স্থাপন করেছে। তবে, চীনে, যেখানে অ্যাপল সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আইফোন উৎপাদন করে, কোম্পানিটি টানা সপ্তম ত্রৈমাসিকে বিক্রয় হ্রাসের মুখোমুখি হয়েছে। তিনি বলেন, “জুন কোয়ার্টারে আমরা আশা করছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোনের উৎপত্তিস্থল হবে ভারত, এবং ভিয়েতনাম হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া প্রায় সব আইপ্যাড, ম্যাক, অ্যাপল ওয়াচ এবং এয়ারপডস পণ্যের উৎপত্তিস্থল। চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মোট পণ্য বিক্রয়ের বেশিরভাগের উৎপত্তিস্থল হিসেবে অব্যাহত থাকবে।”

   

ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা

এসএন্ডপি গ্লোবালের একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপলের আইফোন বিক্রয় ছিল ৭৫.৯ মিলিয়ন ইউনিট। মার্চ মাসে ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া আইফোনের পরিমাণ ছিল সমতুল্য ৩.১ মিলিয়ন ইউনিট। এই পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হলে হয় নতুন উৎপাদন ক্ষমতা সংযোজন করতে হবে, নয়তো দেশীয় বাজারের জন্য নির্ধারিত চালান পুনঃনির্দেশিত করতে হবে। এসএন্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে বলা হয়েছে, “অ্যাপলের ভারতীয় রপ্তানি ইতিমধ্যেই প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে পরিচালিত হচ্ছে, যা ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানির রপ্তানি করা ফোনের ৮১.৯ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। ২০২৫ সালের মার্চে এটি ৯৭.৬ শতাংশে বৃদ্ধি পায়, যা ২১৯ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধির ফলাফল, সম্ভবত কোম্পানি উচ্চ শুল্কের আগাম প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে।”

শুল্ক নীতি ও চীনের প্রভাব

টিম কুক জানিয়েছেন, জুন কোয়ার্টারে অ্যাপলের শুল্ক সংক্রান্ত ঝুঁকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে প্রযোজ্য। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলোর উৎপত্তিস্থল চীন। এই শুল্ক নীতির কারণেই অ্যাপল তার উৎপাদন কৌশল বৈচিত্র্যময় করছে এবং ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বাজারগুলোর জন্য চীন এখনও অ্যাপলের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে রয়ে গেছে।

চীনে অ্যাপলের বিক্রয় ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও, এই দেশটি এখনও বিশ্বব্যাপী অ্যাপলের উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু। তবে, ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা অ্যাপলের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা প্রদান করছে, বিশেষ করে মার্কিন বাজারের জন্য। ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি কেবল শুল্ক সংক্রান্ত ঝুঁকি কমায় না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ভারতের অর্থনৈতিক প্রভাব

অ্যাপলের ভারতে উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ভারতীয় অর্থনীতির জন্য একটি বড় সুযোগ। ফক্সকন, উইস্ট্রন এবং পেগাট্রনের মতো অ্যাপলের সরবরাহকারী সংস্থাগুলো ভারতে তাদের উৎপাদন ইউনিট সম্প্রসারণ করছে, যা হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। তামিলনাড়ু, কর্ণাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলো অ্যাপলের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে উঠে এসেছে।

এসএন্ডপি গ্লোবালের রিপোর্ট অনুসারে, ভারত থেকে অ্যাপলের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের রপ্তানি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। মার্চ ২০২৫-এ ভারত থেকে রপ্তানি ২১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অ্যাপলের কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এই রপ্তানি বৃদ্ধি ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের সাফল্যকেও প্রতিফলিত করে।

ভারতীয় বাজারে অ্যাপলের সাফল্য

টিম কুক ভারতে অ্যাপলের ত্রৈমাসিক রেকর্ডের কথা উল্লেখ করেছেন, যা দেশে কোম্পানির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রমাণ। ভারতীয় গ্রাহকদের মধ্যে আইফোন এবং অন্যান্য অ্যাপল পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, যা অ্যাপলকে ভারতে আরও বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছে। এছাড়া, অ্যাপল ভারতে নিজস্ব রিটেল স্টোর খোলার পরিকল্পনা করছে, যা দেশের বাজারে তার উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করবে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

অ্যাপলের ভারত ও ভিয়েতনামে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের অংশ। শুল্ক নীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি, অ্যাপল তার সাপ্লাই চেইনকে বৈচিত্র্যময় করছে। ভারতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, কারণ এটি দেশকে বিশ্বের প্রযুক্তি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।

অ্যাপলের সিইও টিম কুকের ঘোষণা যে জুন কোয়ার্টারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোন ভারতে তৈরি হবে, তা ভারতের উৎপাদন ক্ষমতার উপর কোম্পানির ক্রমবর্ধমান আস্থার প্রতিফলন। ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারত অ্যাপলের সাপ্লাই চেইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে, যখন চীন অন্যান্য বাজারের জন্য প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে রয়ে গেছে। এই কৌশলগত পরিবর্তন ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সুযোগ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের সাফল্যের প্রমাণ। ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্প এখন অ্যাপলের এই পদক্ষেপের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের অপেক্ষায় রয়েছে।