পশ্চিম এশিয়ার অশান্তির জেরে বিপাকে ৩৩ কোটি ভারতীয়র হেঁসেল

গত এক দশকে ভারতের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে রান্নার গ্যাস, অর্থাৎ এলপিজি (LPG)। রান্নার জন্য এই তরল জ্বালানি এখন প্রায় ৩৩ কোটির বেশি পরিবারে ব্যবহৃত…

Free gas cylinder

গত এক দশকে ভারতের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে রান্নার গ্যাস, অর্থাৎ এলপিজি (LPG)। রান্নার জন্য এই তরল জ্বালানি এখন প্রায় ৩৩ কোটির বেশি পরিবারে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সেই নির্ভরতার একটা বড় অংশ এখন বিপদের মুখে। কারণ, ভারতের যে পরিমাণ এলপিজি প্রয়োজন, তার প্রায় ৬৬ শতাংশ আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। আর এই আমদানির ৯৫ শতাংশই আসে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি থেকে — মূলত সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।

এই মুহূর্তে সেই অঞ্চল চরমভাবে অস্থির। ইজরায়েল এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা দ্রুত বাড়ছে। সম্প্রতি ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোমা বর্ষণ করেছে। তার জেরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। হরমুজ প্রণালী, যা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম জ্বালানি পরিবহন রুট, তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান।

   

হরমুজ প্রণালী দিয়েই প্রতিদিন প্রায় ২ লক্ষ ব্যারেল তেল এবং বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ হয় বিশ্ববাজারে। এই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে সেই দেশগুলি, যারা এই অঞ্চলের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম।

ভারত সরকারের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য বলছে, দেশে বিভিন্ন ইমপোর্ট টার্মিনাল, বটলিং প্ল্যান্ট এবং রিফাইনারিতে কিছুটা পরিমাণ এলপিজি মজুত থাকে। তবে সেই মজুত যথেষ্ট নয়। দেশের দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী, সেই মজুত দিয়ে সর্বোচ্চ ১৬ দিন পর্যন্ত চলতে পারে। এর পর সরবরাহ বন্ধ থাকলে দেশজুড়ে এলপিজির তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, ভারত সরকার এখন বিকল্প সরবরাহ রুট এবং উৎস খুঁজছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে পশ্চিম এশিয়ার বিকল্প খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন, কারণ এত বড় পরিমাণ আমদানি অন্য কোনও অঞ্চল থেকে সহজে চালু করা সম্ভব নয়।

Advertisements

অন্যদিকে, পেট্রল ও ডিজেলের ক্ষেত্রে ভারতের কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। কারণ, গত কয়েক বছরে রাশিয়া-সহ অন্যান্য দেশ থেকেও জ্বালানি তেল আমদানির হার বেড়েছে। ফলে পশ্চিম এশিয়ার উপর নির্ভরতা কিছুটা কমেছে।

তবে এলপিজি নিয়ে এমন পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ গৃহস্থের হেঁসেলে। বাড়তে পারে সিলিন্ডারের দাম, হঠাৎ করে মিলতে নাও পারে বুকিং করা গ্যাস। বিশেষত নিম্নবিত্ত ও গ্রামীণ অঞ্চলে সমস্যার মাত্রা আরও বেশি হতে পারে।

সরকার আপাতত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। তবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটলে, কেবল অর্থনীতিই নয়, ভারতীয়দের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও বড় ধাক্কা খেতে পারে।

পশ্চিম এশিয়ার জটিল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি যে ভারতের রান্নাঘর পর্যন্ত তার প্রভাব ফেলতে পারে, তা এখন আর শুধু আশঙ্কার স্তরে নেই— সেটি হয়ে উঠছে বাস্তব। হরমুজ প্রণালী যদি সত্যিই কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তবে ভারতের এলপিজি সরবরাহব্যবস্থা যে সঙ্কটে পড়বে, তা স্পষ্ট। এখন দেখার, সরকার ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা এই সঙ্কট কতটা সামাল দিতে পারে।