এবারের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেই একাধিক আর্থিক ও ভোক্তা-সংক্রান্ত নিয়ম কার্যকর হতে চলেছে, যা সরাসরি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচ ও বাজেটে প্রভাব ফেলবে। রূপার হলমার্কিং থেকে শুরু করে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) কার্ডের বাড়তি চার্জ, রান্নার গ্যাসের নতুন দাম (LPG price hike), এটিএম লেনদেনের খরচ বৃদ্ধি এবং ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) সুদের হারে সম্ভাব্য পরিবর্তন—সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন থেকেই ভোক্তাদের জন্য আসছে একগুচ্ছ নতুন নিয়ম।
রূপার হলমার্কিং বাধ্যতামূলক:
এবার সোনা যেমন হলমার্ক ছাড়া বিক্রি হয় না, ঠিক তেমনই ১ সেপ্টেম্বর থেকে রূপার ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক হতে চলেছে হলমার্কিং। অর্থাৎ রূপার গয়না বা অন্যান্য সামগ্রী কেনার সময় আর ভেজাল বা বিশুদ্ধতার সন্দেহ থাকবে না। বাজারে একক মানদণ্ড চালু হওয়ায় ভোক্তারা বেশি নিশ্চিন্তে রূপা কিনতে পারবেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন ব্যবস্থার ফলে রূপার দামে কিছুটা তারতম্য হতে পারে। যাঁরা শীঘ্রই রূপার গয়না কিনতে চান বা রূপায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের অবশ্যই নতুন নিয়ম সম্পর্কে অবগত থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এসবিআই কার্ডের নতুন চার্জ:
এসবিআই কার্ডধারীদের জন্য আসছে বড় পরিবর্তন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে যদি কারও অটো-ডেবিট পেমেন্ট ব্যর্থ হয়, তবে তাকে ২% জরিমানা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক লেনদেনে অতিরিক্ত চার্জ বসবে। অনলাইন শপিং বা জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রেও বাড়তে পারে ট্রানজ্যাকশন ফি। পাশাপাশি, রিওয়ার্ড পয়েন্টের মূল্যও কমতে পারে বলে খবর। অর্থাৎ, একদিকে চার্জ বাড়ছে, অন্যদিকে পয়েন্টের ব্যবহার কম সুবিধাজনক হতে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা তাই পরামর্শ দিচ্ছেন, কার্ড ব্যবহারকারীদের ব্যয়ের খতিয়ান সাবধানে নজরে রাখা উচিত এবং সময়মতো পেমেন্ট মিটিয়ে নেওয়া জরুরি।
রান্নার গ্যাসের দাম:
প্রতিমাসের মতোই ১ সেপ্টেম্বরও তেল কোম্পানিগুলি গৃহস্থালির এলপিজি সিলিন্ডারের নতুন দাম ঘোষণা করবে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠা-নামা এবং কোম্পানির খরচের হিসাব অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হয়। দাম বাড়লে মধ্যবিত্তের রান্নাঘরের বাজেট চাপের মুখে পড়বে, আবার কমলে খানিকটা স্বস্তি মিলতে পারে। ইতিমধ্যেই অনেক পরিবার রান্নার গ্যাসের বাড়তি খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে, ১ সেপ্টেম্বরের দাম নিয়ে কৌতূহল ও উদ্বেগ দুই-ই রয়েছে।
এটিএম লেনদেনের নতুন নিয়ম:
কিছু ব্যাংক ১ সেপ্টেম্বর থেকে এটিএম লেনদেনের নতুন নিয়ম চালু করতে চলেছে। মাসে নির্দিষ্ট সীমার বাইরে নগদ টাকা তোলার ক্ষেত্রে বাড়তি চার্জ দিতে হবে। ব্যাংকগুলির উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করা। তবে অনেক প্রবীণ বা গ্রামীণ এলাকার মানুষ এখনও নগদ অর্থের উপর নির্ভরশীল। তাঁদের জন্য এই অতিরিক্ত চার্জ একটি বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন, অযথা একাধিকবার এটিএম থেকে টাকা তোলার বদলে পরিকল্পনা করে সীমিত বার লেনদেন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এফডি সুদের হারে পরিবর্তন:
বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিটে ৬.৫% থেকে ৭.৫% পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে কিছু ব্যাংক সুদের হার পুনর্বিবেচনা করতে পারে। বাজারে জল্পনা রয়েছে, সুদের হার কিছুটা কমতে পারে। ফলে যাঁরা এখনই ফিক্সড ডিপোজিট করার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। কারণ, বর্তমান উচ্চ হারে এফডি করলে দীর্ঘমেয়াদে বেশি সুদের সুবিধা পাওয়া যাবে। অন্যদিকে, সুদ কমে গেলে নতুন বিনিয়োগকারীদের লাভ কিছুটা কমে যাবে।
উপরোক্ত পরিবর্তনগুলির মূল বৈশিষ্ট্য হলো—সবকিছুই সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচকে প্রভাবিত করবে। রূপা কেনা, ব্যাংক লেনদেন, রান্নার গ্যাস, এটিএম ব্যবহার কিংবা সঞ্চয়ের সিদ্ধান্ত—সবক্ষেত্রেই ভোক্তাদের সরাসরি প্রভাব পড়বে। একদিকে খরচ বাড়ার সম্ভাবনা, অন্যদিকে সঞ্চয়ের আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা।
অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপ্টেম্বর মাসের এই পরিবর্তনগুলির দিকে নাগরিকদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি। ব্যাংক বা তেল কোম্পানির নতুন সার্কুলার খতিয়ে দেখা উচিত। বাজেটের পরিকল্পনা করে খরচ সামলাতে হবে এবং বড় ধরনের বিনিয়োগের আগে আর্থিক পরামর্শ নেওয়া ভালো।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই নতুন নিয়মগুলি সাধারণ ভোক্তাদের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে সুযোগও বটে। যাঁরা সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং সময়মতো পরিকল্পনা করবেন, তাঁরা এই পরিবর্তনগুলিকে সামলাতে তুলনামূলকভাবে সহজ অবস্থানে থাকবেন।