LPG Cylinder Prices: ভারতের তেল বিপণন সংস্থাগুলো (ওএমসি) গত দুই মাস ধরে ১৯ কেজি বাণিজ্যিক এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমিয়েছে, যেখানে ১৪.২ কেজি গার্হস্থ্য সিলিন্ডারের দাম এপ্রিল ২০২৫-এ বাড়ানো হয়েছিল, যা ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে স্থিতিশীল ছিল। সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল ২০২৫-এ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৩.১৬%-এ নেমে এসেছে, যা ২০১৯ সালের জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন। তবে, এপ্রিলে বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম কমলেও জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের মূল্যস্ফীতি ১.৪২% থেকে বেড়ে ২.৯২% হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পেট্রোল বা ডিজেলের দামের চেয়ে গার্হস্থ্য এলপিজি এবং বিদ্যুৎ ট্যারিফের বৃদ্ধির প্রতিফলন। জুন ২০২৫-এ এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।
বর্তমান এলপিজি দামের পরিস্থিতি
মে ২০২৫-এ, ১৪.২ কেজি গার্হস্থ্য এলপিজি সিলিন্ডারের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। দিল্লিতে এটির দাম ৮৫৩ টাকা, কলকাতায় ৮৭৯ টাকা, মুম্বাইয়ে ৮৫২.৫০ টাকা এবং চেন্নাইয়ে ৮৬৮.৫০ টাকা। এই দামগুলো এপ্রিল ২০২৫-এ ৫০ টাকা বৃদ্ধির পর স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে, ১৯ কেজি বাণিজ্যিক এলপিজি সিলিন্ডারের দাম মে মাসে ১৪.৫ থেকে ১৭ টাকা কমেছে। বর্তমানে দিল্লিতে এটির দাম ১,৭৪৭.৫০ টাকা, কলকাতায় ১,৮৫১.৫০ টাকা, মুম্বাইয়ে ১,৬৯৯ টাকা এবং চেন্নাইয়ে ১,৯০৬ টাকা। এপ্রিল থেকে মে ২০২৫-এর মধ্যে দিল্লিতে ৫৫.৫ টাকা, কলকাতায় ৬১.৫ টাকা, মুম্বাইয়ে ৫৬.৫ টাকা এবং চেন্নাইয়ে ৫৯ টাকা দাম কমেছে। এটি টানা দ্বিতীয় মাস যখন বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
রাসেন্স প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি এবং সিইও সঞ্জয় কুমার বলেন, “খাদ্য মূল্যস্ফীতি মার্চ ২০২৫-এর তুলনায় ৯১ বেসিস পয়েন্ট কমেছে, এবং গত তিন মাস ধরে সিপিআই মূল্যস্ফীতি ৪% এর নিচে রয়েছে। এটি দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি প্রশংসনীয় পথ প্রতিফলিত করে।” তবে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে ২.৯২%-এ উঠেছে, যা মার্চের ১.৪২% থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। তিনি যোগ করেন, “বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম কমলেও, এলপিজি এবং বিদ্যুৎ ট্যারিফের বৃদ্ধির কারণে এই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বর্তমানে স্থিতিশীল রুপি এবং নরম পণ্যের দাম চাহিদা বাড়াতে এবং ঋণের খরচ কমাতে সুযোগ তৈরি করছে।”
জুন ২০২৫-এ দামের সম্ভাব্য প্রবণতা
আইসিআরএ-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অপরিশোধিত তেলের গড় দাম ৬০-৭০ ডলার প্রতি ব্যারেলের মধ্যে থাকবে। এই দামের স্তরে, এলপিজি আমদানিতে ৬০ বিলিয়ন টাকা এবং অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ১.৮ ট্রিলিয়ন টাকা সাশ্রয় হবে। তেল বিপণন সংস্থাগুলোর জন্য অটো-জ্বালানির মার্কেটিং মার্জিন দীর্ঘমেয়াদী গড় ২.৫-৪ টাকা প্রতি লিটারের উপরে থাকবে। এছাড়া, অপরিশোধিত তেলের দাম কমার ফলে এবং সরকারের ক্ষতিপূরণের কারণে এলপিজির ক্ষতি কমবে, যা ডাউনস্ট্রিম সংস্থাগুলোর লাভজনকতাকে সমর্থন করবে। তবে, ৮ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে অটো-জ্বালানির উপর উৎপাদন শুল্ক বৃদ্ধির কারণে শোধনাগারগুলোর জন্য ইনভেন্টরি ক্ষতি হতে পারে।
১৪.২ কেজি সিলিন্ডারের দামের পূর্বাভাস
গার্হস্থ্য ১৪.২ কেজি সিলিন্ডারের দাম মে ২০২৫-এ স্থিতিশীল রয়েছে, এবং এপ্রিলে ৫০ টাকা বৃদ্ধির পর আর কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম ৬০ ডলারের নিচে থাকায় এবং রুপির স্থিতিশীলতার কারণে, জুন ২০২৫-এ এই দাম অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের ভর্তুকি নীতি এবং প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে গার্হস্থ্য এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে, যা পরিবারগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক। তবে, ভবিষ্যতে উৎপাদন শুল্ক বৃদ্ধি বা আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা হলে দাম সামান্য বাড়তে পারে।
১৯ কেজি সিলিন্ডারের দামের পূর্বাভাস
১৯ কেজি বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম গত দুই মাসে কমেছে, যা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম হ্রাস এবং ওপেক+-এর উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতিফলন। আইসিআরএ-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, অপরিশোধিত তেলের দাম নিম্নমুখী থাকলে জুন ২০২৫-এ বাণিজ্যিক এলপিজির দাম আরও কমতে পারে অথবা স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে, মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ওপেক+-এর উৎপাদন নীতির পরিবর্তন দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এই দাম হ্রাস থেকে সুবিধা পাচ্ছেন, তবে ভবিষ্যতে দামের অস্থিরতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক প্রভাব
বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি এবং চাহিদার অনিশ্চয়তা এলপিজি দামের উপর প্রভাব ফেলছে। মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি এবং ইউরোপ ও চীনে চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষণ দামের স্থিতিশীলতায় অবদান রাখছে। ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রুপির শক্তি এবং ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমদানি খরচ কমাতে সহায়তা করছে। তবে, ভবিষ্যতে উৎপাদন শুল্ক বৃদ্ধি বা আন্তর্জাতিক বাজারে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন দামের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
জুন ২০২৫-এ, ১৪.২ কেজি গার্হস্থ্য এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সম্ভবত স্থিতিশীল থাকবে, সরকারের ভর্তুকি নীতি এবং নিম্নমুখী অপরিশোধিত তেলের দামের কারণে। অন্যদিকে, ১৯ কেজি বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম আরও কিছুটা কমতে পারে বা স্থিতিশীল থাকতে পারে, যদি বিশ্বব্যাপী তেলের দাম নিম্নমুখী থাকে। তবে, ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা, ওপেক+-এর উৎপাদন সিদ্ধান্ত এবং দেশীয় নীতির পরিবর্তন দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের এই প্রবণতাগুলো পর্যবেক্ষণ করা উচিত, কারণ এলপিজির দাম অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং পরিবারের বাজেটের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।