ঝাঁটা সম রূপ হয়েছে উত্তরের সবুজ গালিচার! আলোর ফাঁদে আশা দেখছে চা মহল

স্নেহা ঘোষ, জলপাইগুড়ি: ডুয়ার্স-তরাইয়ের (Dooars Tea Gardens) চা বাগানের সবুজ পাতার ক্যানভাস যেন রাতারাতি ধূসর হয়ে যাচ্ছে। এই সবুজ গালিচাকে আগলে রাখার উপায় খুঁজছে চা…

Looper Caterpillar Threatens Dooars Tea Gardens

স্নেহা ঘোষ, জলপাইগুড়ি: ডুয়ার্স-তরাইয়ের (Dooars Tea Gardens) চা বাগানের সবুজ পাতার ক্যানভাস যেন রাতারাতি ধূসর হয়ে যাচ্ছে। এই সবুজ গালিচাকে আগলে রাখার উপায় খুঁজছে চা মহল। নইলে, এক ভয়ঙ্কর সবুজ শত্রুর আক্রমণে চা শিল্পের প্রবল ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই শত্রুর নাম ‘লুপার ক্যাটারপিলার’—এক ধরনের শুঁয়োপোকা, যারা পাতার পর পাতা ছিঁড়ে ফেলছে, এমনকি গাছের ডাঁটাও রেহাই পাচ্ছে না। ওষুধ স্প্রে করেও মিলছে না স্বস্তি। এমন পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে এক নতুন পদ্ধতি—‘আলোর ফাঁদ’।

এই পদ্ধতিতে উজ্জ্বল আলোর নীচে আঠা মাখানো পাত্র নিয়ে রাতে চা বাগানে গাড়ি ঘুরলে, লুপার ক্যাটারপিলাররা আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সেই ফাঁদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই ফাঁদে একের পর এক পোকা আটকা পড়ছে। তরাইয়ের কয়েকটি বড় চা বাগানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ইতিমধ্যে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। এই পদ্ধতির সাফল্য চা চাষিদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে।

   

কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “লুপার ক্যাটারপিলারের আক্রমণে কাঁচা পাতার উৎপাদন প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাসায়নিক ওষুধে তেমন কাজ হচ্ছে না। বর্ষা ও গরমের সম্মিলিত প্রভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।” তিনি আরও বলেন, “এই পোকার তাণ্ডব শুধু পাতা নষ্ট করছে না, চা গাছের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলছে।”

চা চাষিরা জানাচ্ছেন, একদিকে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে তীব্র গরম এবং খরা—এই আবহাওয়া পোকার বিস্তারের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে। লুপার ক্যাটারপিলার ছাড়াও লালপোকা এবং চা মশার আক্রমণ চা বাগানের জন্য ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এই পোকাগুলো দ্রুত পাতা খেয়ে ফেলছে, যার ফলে উৎপাদন কমছে এবং চা শিল্পের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ছে।

Advertisements

এই পরিস্থিতিতে ‘লাইট ট্র্যাপিং’ পদ্ধতি একটি টেকসই সমাধান হিসেবে আশার আলো দেখাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে কীটনাশকের ব্যবহার কম হয়, যা পরিবেশের জন্যও উপকারী। চা বাগানের কর্মীরা রাতে আলোর ফাঁদ নিয়ে বাগানে ঘুরে পোকা ধরছেন, এবং এর ফলে পোকার সংখ্যা কমে আসছে। স্থানীয় এক চা চাষি বলেন, “এই পদ্ধতি আমাদের বাগান বাঁচাতে সাহায্য করছে। ওষুধের তুলনায় এটি অনেক বেশি কার্যকর।”

চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদ্ধতি বড় আকারে প্রয়োগ করা গেলে চা বাগানের ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তবে, এর জন্য আরও গবেষণা এবং সচেতনতা প্রয়োজন। ডুয়ার্স ও তরাইয়ের চা শিল্পের এই সংকট কাটিয়ে উঠতে ‘আলোর ফাঁদ’ যদি সফল হয়, তবে তা হবে চা চাষিদের জন্য একটি বড় জয়। এই পদ্ধতি কেবল সবুজ গালিচাকে বাঁচাবে না, বরং চা শিল্পের অর্থনৈতিক ভিত্তিকেও মজবুত করবে।