ভারতের গ্যাস কোম্পানিগুলির জন্য এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) স্পট দাম বাড়ানো একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেশীয় চাহিদা এবং সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ভলিউম ও মার্জিনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। জে.এম ফিনান্সিয়াল-এর একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ করে গুজরাট গ্যাস যে এলএনজি স্পট মার্কেটের উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল, তা চরম উদ্বেগের কারণ। গুজরাট গ্যাসের ২০-৩০ শতাংশ এলএনজি সরবরাহ স্পট মার্কেট থেকে আসে, যা কোম্পানির জন্য একটি বড় ঝুঁকি। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “স্থায়ীভাবে উচ্চ স্পট এলএনজি দাম ভারতের সব গ্যাস কোম্পানির জন্য একটি বড় উদ্বেগ, কারণ এটি দেশীয় এলএনজি চাহিদা এবং সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ভলিউম ও মার্জিনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
বিশ্ববাজারে স্পট এলএনজি বর্তমানে ১৮ শতাংশ ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম পর্যন্ত ট্রেড হচ্ছে, যা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে ১২ শতাংশের মতো ছিল। এই দাম বৃদ্ধি ভারতের গ্যাস কোম্পানির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে, যারা তাদের সরবরাহ চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেটের উপর নির্ভরশীল।
বিশ্ববাজারে এলএনজি সরবরাহ সংকট এবং উচ্চ চাহিদা বিশেষ করে ইউরোপে, এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালে ইউরোপের এলএনজি চাহিদা বছরে ১৯ শতাংশ কমে ৯৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন হলেও, সম্প্রতি শীতকালীন ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোর এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এলএনজি সরবরাহ সংকটের কারণে ভারতীয় গ্যাস কোম্পানিগুলিকে তাদের এলএনজি সরবরাহ বজায় রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলির জন্য এটি আরও বড় সমস্যা হতে পারে, কারণ তারা এলএনজি আমদানির উপর নির্ভরশীল।
গ্লোবাল লেভেলে এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর ২৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টন সরবরাহ বাড়ানোর প্রয়োজন, যা আগামী দশকে প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু হওয়া, যা দাম কমানোর এবং সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
বিশ্ববাজারে এলএনজি দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় গ্যাস কোম্পানিগুলিকে তাদের ব্যয় বৃদ্ধির ঝুঁকি এবং চাহিদার ওঠানামা মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলির জন্য এই পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক, কারণ তারা এলএনজি আমদানি করে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করে।
এলএনজি দাম কমানোর জন্য বিশ্ববাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পরিণতি সম্পর্কিত যে কোন পরিবর্তন, তা ভারতীয় গ্যাস কোম্পানির উপর বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। সেই কারণে, এই বিষয়ে বাজার বিশেষজ্ঞরা বিশ্ববাজারের উন্নয়ন এবং সরবরাহ সম্প্রসারণের দিকে গভীর নজর রাখছেন।