ভারতের আয়কর দপ্তর প্রদত্ত স্থায়ী হিসাব নম্বর বা প্যান (PAN Card – Permanent Account Number) একটি অনন্য ১০-সংখ্যার বর্ণ-মিশ্র কোড, যা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের নির্ভুল রেকর্ড রাখার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। প্যান কার্ড আজকের দিনে শুধুমাত্র কর দায়বদ্ধতার একটি প্রতীক নয়, বরং এটি আর্থিক স্বচ্ছতা, কর ফাঁকি রোধ এবং ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে পরিচয় প্রমাণের জন্য অপরিহার্য একটি দলিল।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার প্যান নম্বরকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করাকে বাধ্যতামূলক করেছে। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা, অবৈধ অর্থপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা এবং করদাতাদের সুবিধা প্রদান করা।
কেন প্যান ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করা জরুরি?
প্যান ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংযুক্তিকরণে করদাতার আর্থিক তথ্য নির্ভুলভাবে রেকর্ড হয় এবং এটি আয়কর বিভাগের কাছে রিপোর্ট হয়। এর ফলে কর রিটার্নে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, ট্যাক্স রিফান্ড দ্রুত জমা হয় এবং কেওয়াইসি (KYC) যাচাই প্রক্রিয়া সহজ হয়।
এছাড়া ৫০,০০০ টাকার বেশি লেনদেনের জন্য প্যান নম্বর প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে লিঙ্ক না থাকলে এমন লেনদেন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
কীভাবে অনলাইনে প্যান লিঙ্ক করবেন?
ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে লিঙ্ক করার ধাপ:
১. প্রথমে আপনার ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং পোর্টালে লগ ইন করুন।
২. প্রোফাইল বা ড্যাশবোর্ড-এ যান। সেখানে “Service Requests,” “Profile Settings” বা “PAN Update” ধরনের অপশন পাবেন।
৩. প্যান নম্বর যুক্ত বা আপডেট করার অপশন বেছে নিন।
৪. প্যান নম্বর, জন্মতারিখ ও রেজিস্টার্ড ইমেল আইডি প্রদান করুন।
৫. তথ্য যাচাই করে “Submit” করুন।
৬. ব্যাঙ্ক আপনার তথ্য ইনকাম ট্যাক্স ডেটাবেসের সঙ্গে যাচাই করবে। সঠিক হলে ২ থেকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্যান লিঙ্ক হয়ে যাবে এবং SMS বা ইমেল মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ পাবেন।
মোবাইল অ্যাপ-এর মাধ্যমে কীভাবে লিঙ্ক করবেন?
১. আপনার ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ ওপেন করুন।
২. “Profile” বা “e-Services” সেকশনে যান।
৩. “Link/Update PAN” অপশনটি খুঁজে বের করুন।
৪. প্যান নম্বর, অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম, জন্মতারিখ ইত্যাদি দিন।
৫. OTP-এর মাধ্যমে যাচাই করুন।
৬. সফলভাবে লিঙ্ক হলে SMS বা ইমেল পাবেন নিশ্চিতকরণ হিসেবে।
শাখায় গিয়ে কীভাবে লিঙ্ক করবেন?
– আপনার অ্যাকাউন্টের হোম ব্রাঞ্চে যান।
– প্যান আপডেট ফর্ম বা KYC ফর্ম চেয়ে নিন।
– সঠিক তথ্য সহ ফর্ম পূরণ করুন।
– স্বাক্ষরিত প্যান কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করুন।
– প্রয়োজনে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের নামে একটি অনুরোধপত্র লিখুন।
– ফর্ম জমা দিলে যাচাইয়ের পর প্যান নম্বর লিঙ্ক করা হবে।
প্যান-ব্যাংক লিঙ্কিংয়ের সুফল কী?
1. ডুপ্লিকেট অ্যাকাউন্ট বন্ধ: একজন গ্রাহক একাধিক নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না, ফলে জালিয়াতির সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
2. সহজ কর দাখিল: আর্থিক লেনদেন স্পষ্ট হওয়ায় আয়কর রিটার্ন সহজে জমা দেওয়া যায়।
3. দ্রুত রিফান্ড: ইনকাম ট্যাক্স রিফান্ড সরাসরি লিঙ্কড অ্যাকাউন্টে চলে আসে, দেরি হয় না।
4. আয় নিরীক্ষণ সহজ: কর কর্তৃপক্ষ ব্যয় ও আয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পান, ফলে অডিটের সম্ভাবনা কমে যায়।
5. বড় লেনদেনে বাধা নেই: ৫০,০০০ টাকার বেশি লেনদেন করার সময় বাধাবিঘ্ন হয় না।
6. ট্রান্সফার নিরাপদ হয়: উচ্চ পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর আরও নিরাপদ হয়।
7. সরকারি সুবিধার প্রাপ্তি: ভর্তুকি, কর ছাড় বা অন্য সরকারি স্কিমে উপকৃত হওয়ার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
8. কালো টাকার রোধ: সরকারের কালো টাকা ট্র্যাক করার উদ্যোগে এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
বর্তমান সময়ে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং কর ব্যবস্থায় শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ আনা সরকারের অগ্রাধিকার। সেই লক্ষ্যে প্যান ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সাধারণ নাগরিকদের এই কাজটি সময়মতো ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে কোনও প্রকার জটিলতা তৈরি না হয়।
তাই এখনই আপনার প্যান নম্বরটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করুন এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালন করুন।