টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS)-এর বিশ্বব্যাপী ১২,০০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের (Layoffs) সিদ্ধান্ত শুধু কর্মসংস্থান নয়, কর্মীদের পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকেও গভীর প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিশেষত যারা কোম্পানির গ্রুপ হেলথ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় তাদের বৃদ্ধ পিতামাতা বা অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিমা করিয়ে রেখেছিলেন, তাদের জন্য এটি এক গুরুতর দুশ্চিন্তার বিষয়।
বর্তমানে বহু সংস্থা শুধুমাত্র কর্মী, তাঁর/তাঁর জীবনসঙ্গী এবং সন্তানদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা প্রদান করে। অভিভাবকদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা একটি অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বৃদ্ধদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যবিমা করানো কঠিন, কারণ প্রিমিয়াম অত্যন্ত বেশি, অনেক সংস্থা বয়স্কদের জন্য পলিসি দিতে অনিচ্ছুক এবং প্রি-এক্সিস্টিং অসুস্থতার জন্য অপেক্ষার সময়কাল তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে।
চাকরি ছাড়লে কী করবেন?
যদি আপনি বা আপনার পিতামাতা এতদিন কোম্পানির গ্রুপ হেলথ ইন্স্যুরেন্সের উপর নির্ভর করতেন, তবে চাকরি ছাড়ার আগেই আপনাকে বিকল্প ভাবতে হবে। একদিকে যেমন আপনি নতুন করে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিমা কিনতে পারেন, অন্যদিকে একটি আরও ভালো বিকল্প হল—আপনার বর্তমান গ্রুপ পলিসি থেকে একই সংস্থার ব্যক্তিগত (রিটেল) পলিসিতে মাইগ্রেট (রূপান্তরিত) হওয়া।
কীভাবে সম্ভব মাইগ্রেশন?
ভারতের বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা IRDAI (Insurance Regulatory and Development Authority of India) এই ধরনের রূপান্তর বা মাইগ্রেশনের অনুমতি দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কর্মচারীরা তাদের গ্রুপ হেলথ পলিসি থেকে একই বিমা সংস্থার রিটেল পলিসিতে রূপান্তরিত হতে পারেন। তবে এটি সম্পূর্ণভাবে বিমা সংস্থার অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল।
মাইগ্রেশনের প্রধান সুবিধা কী?
সবচেয়ে বড় সুবিধা হল ওয়েটিং পিরিয়ড বা অপেক্ষাকাল বহাল থাকবে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বাবা-মা গ্রুপ পলিসির অধীনে ইতিমধ্যে দুই বছর কভার পেয়ে থাকেন এবং নতুন রিটেল পলিসিতে তিন বছরের অপেক্ষাকাল থাকে, তাহলে বাকি এক বছরই কেবল প্রযোজ্য হবে। এটি একটি বড় সুবিধা, কারণ নতুন পলিসিতে পুরো অপেক্ষাকাল আবার শুরু হতে পারে।
কীভাবে শুরু করবেন এই প্রক্রিয়া?
১. আগেভাগে পরিকল্পনা করুন – চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেই HR টিমকে জানিয়ে দিন।
২. নথিপত্র সংগ্রহ করুন – রেজিগনেশন লেটার, এমপ্লয়মেন্ট সার্টিফিকেট, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট ইত্যাদি প্রস্তুত রাখুন।
৩. ইন্স্যুরারকে আগাম জানিয়ে দিন – বিমা সংস্থাকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানান যে আপনি রিটেল পলিসিতে মাইগ্রেট করতে চান।
৪. স্বাস্থ্য পরীক্ষা হতে পারে – বিমা সংস্থা আপনার অভিভাবকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চাইতে পারে এবং সেই অনুযায়ী প্রিমিয়াম নির্ধারণ করবে।
আগে এই প্রক্রিয়াটি চাকরি ছাড়ার ৪৫ দিন আগে শুরু করতে হত। যদিও এখন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, তবুও যত দ্রুত সম্ভব উদ্যোগ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ আপনি যেই মুহূর্তে কোম্পানি ছাড়বেন, সঙ্গে সঙ্গেই গ্রুপ কভারেজ বন্ধ হয়ে যাবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:
১. সব সুবিধা নাও মেলে – নতুন রিটেল পলিসিতে গ্রুপ পলিসির সব সুবিধা নাও থাকতে পারে। রুম রেন্ট লিমিট, সাব-লিমিট, কো-পে ক্লজ ইত্যাদি যাচাই করে নিন।
২. ইন্স্যুরার বদলানো যাবে না – আপনি শুধুমাত্র সেই বিমা সংস্থার রিটেল পলিসিতে রূপান্তর করতে পারেন যাদের গ্রুপ পলিসিতে আপনি আগে ছিলেন। ভবিষ্যতে চাইলে অন্য সংস্থায় পোর্ট করতে পারবেন।
3. প্রিমিয়াম বেশি হতে পারে – অভিভাবকদের বয়স ও স্বাস্থ্য অনুযায়ী নতুন পলিসির প্রিমিয়াম অনেকটা বেশি হতে পারে। কিন্তু এটি ব্যক্তিগতভাবে নতুন পলিসি নেওয়ার তুলনায় অপেক্ষাকাল হ্রাসের জন্য উপযুক্ত বিকল্প হতে পারে।
টিসিএসের মতো বড় সংস্থা যখন গণছাঁটাইয়ের পথে হাঁটে, তখন শুধু চাকরি নয়, কর্মীদের জীবনযাত্রা এবং পরিবারের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিয়েও বড় ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে যারা বাবা-মার জন্য কোম্পানির স্বাস্থ্যবিমার উপর নির্ভর করতেন, তাদের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
চাকরি হারালেও যেন অভিভাবকদের চিকিৎসা খাতে সুরক্ষা বজায় থাকে, তার জন্য সচেতনভাবে এবং যথাসময়ে মাইগ্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু করাটা অত্যন্ত জরুরি।