ব্যাংকে বড় অঙ্কের নগদ জমা এখন আয়কর দপ্তরের নজরে আসছে ক্রমশ। দিল্লি আয়কর আপিল ট্রাইবুনালের (ITAT) সাম্প্রতিক এক রায়ে উঠে এসেছে এমন এক ঘটনার বিবরণ, যা করদাতাদের জন্য বড় শিক্ষা।
আইটিএটি-র গুরুত্বপূর্ণ রায়, ছয় বছর পর মুক্তি পেল করদাতা:
একজন করদাতা, মি. কুমার, তাঁর ব্যাংক হিসাবে ৮.৬৮ লক্ষ টাকা জমা করেছিলেন। এই জমার পরই তাঁর নামে আয়কর দপ্তরের নোটিশ আসে। প্রথমে বিষয়টি “লিমিটেড স্ক্রুটিনি” হিসেবে ধরা হয়েছিল — অর্থাৎ শুধুমাত্র নগদ জমার উৎস যাচাই করা হবে।
কিন্তু তদন্ত চলাকালীন সংশ্লিষ্ট কর আধিকারিক ধারা ৪৪এডি (Section 44AD) অনুযায়ী এটি “বাণিজ্যিক আয়” বা ব্যবসায়িক মুনাফা হিসেবে গণ্য করেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে মামলা জটিল রূপ নেয় এবং করদাতার উপর অতিরিক্ত করের চাপ পড়ে।
মি. কুমার প্রথমে কর কমিশনার (আপিল) বা CIT(A)-এর কাছে যান, কিন্তু তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায়। অবশেষে তিনি দিল্লি ITAT–এর দ্বারস্থ হন। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ ট্রাইবুনাল তাঁর পক্ষে রায় দিয়ে জানায় — কর আধিকারিক সীমিত পর্যবেক্ষণের সীমা অতিক্রম করেছেন এবং CIT-এর অনুমতি ছাড়া মামলার পরিধি বাড়ানো বেআইনি।
আয়কর দপ্তরের সতর্ক দৃষ্টি:
এই মামলাটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে ব্যাংকে বড় অঙ্কের নগদ জমা দিলেই আয়কর দপ্তর তার উৎস খতিয়ে দেখতে পারে। এমনকি, লেনদেন বৈধ হলেও উৎস ব্যাখ্যা দিতে না পারলে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
কখন কর নোটিশ পেতে পারেন?
আয়কর নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি একটি অর্থবছরে ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি নগদ ব্যাংকে জমা দেন, তাহলে সেই তথ্য ব্যাংক সরাসরি আয়কর দপ্তরে জানায়। এই সীমা আপনার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে ধরা হয়। অর্থাৎ, একাধিক অ্যাকাউন্টে ছোট ছোট জমাও যদি মিলিয়ে ১০ লক্ষ টাকায় পৌঁছে যায়, তাহলেও তা রিপোর্ট হবে।
কর নোটিশ এড়াতে কী করবেন?
১. ডিজিটাল লেনদেন বাড়ান: যতটা সম্ভব UPI, NEFT বা অনলাইন পেমেন্ট ব্যবহার করুন।
২. উৎসের প্রমাণ রাখুন: নগদ জমার উৎস যেমন বিক্রির রসিদ, ঋণ পরিশোধ, উপহার বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অর্থের দলিল সংরক্ষণ করুন।
৩. নোটিশ এলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিন: কর দপ্তরের নোটিশ পেলে দেরি না করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর দিন। প্রয়োজনে কর পরামর্শদাতার সাহায্য নিন।
ব্যাংকে নগদ জমা করা অপরাধ নয়, কিন্তু তার উৎস স্পষ্ট না হলে আয়কর দপ্তরের নজরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বড় অঙ্কের নগদ জমা দেওয়ার আগে তার যথাযথ নথিপত্র রাখুন। স্বচ্ছ লেনদেন ও সঠিক প্রমাণই ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা থেকে রক্ষা করবে।


