দেশের জিডিপি-তে কলকাতার অবদান মাত্র ১ শতাংশ!

ভারতের অর্থনীতিতে কলকাতার (Kolkata) অবদান মাত্র ১.০৫ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি-তে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির যে পরিমাণ…

Kolkata’s GDP Contribution Dips to 1.05%, Signals Economic Challenges for West Bengal

ভারতের অর্থনীতিতে কলকাতার (Kolkata) অবদান মাত্র ১.০৫ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি-তে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির যে পরিমাণ অবদান, তার নিরিখে কলকাতা পিছিয়ে রয়েছে দেশের অন্য প্রথম সারির শহরগুলোর তুলনায়। এই তথ্য সামনে আসতেই ফের আলোচনায় উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো, বিশেষত রাজধানী কলকাতার শিল্প, পরিকাঠামো এবং কর্মসংস্থানের বাস্তব অবস্থা।

কোন শহর কতটা অবদান রাখছে?
রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে মুম্বই, যার অবদান ৬.১৬ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে রাজধানী দিল্লি, ৪.৯৪ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে আছে বেঙ্গালুরু (১.৮৭%), এরপর হায়দরাবাদ (১.২৪%), চেন্নাই (১.১২%)। এই তালিকায় কলকাতার স্থান ষষ্ঠ, অবদান মাত্র ১.০৫%। এমনকি, কলকাতার পরেই থাকা পুনে (০.৮১%) ও আহমেদাবাদ (০.৭৯%)-এর অবদানও খুব বেশি দূরে নয়।

   

কেন এত পিছিয়ে কলকাতা?
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পরিসংখ্যান কোনও আকস্মিক চিত্র নয়। শিল্পে বিনিয়োগ, পরিকাঠামো উন্নয়ন, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ – এই সমস্ত ক্ষেত্রেই কলকাতা বহু বছর ধরেই পিছিয়ে পড়েছে। এক সময়ের দেশের শিল্প রাজধানী হিসেবে পরিচিত এই শহর আজ নানা সমস্যা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিকে যেমন আইটি, পরিষেবা ও প্রযুক্তিনির্ভর শহরগুলিতে চরম উন্নয়ন হয়েছে, অন্যদিকে কলকাতায় এখনও অনেক ক্ষেত্রে পুরনো চিন্তাভাবনার ছাপ রয়ে গিয়েছে। ব্যবসা শুরু করা কিংবা শিল্পস্থাপন করার ক্ষেত্রে বহু প্রতিষ্ঠান প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে।

কর্মসংস্থানেও ঘাটতি
জিডিপি-তে অবদানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতার। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে তুলনামূলকভাবে কম শিল্প থাকায়, কাজের সুযোগও সীমিত। যে কারণে বহু পড়ুয়া ও দক্ষ কর্মী আজ কলকাতা ছেড়ে বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ বা পুনে-তে পাড়ি দিচ্ছে। এর ফলেই রাজ্যের ‘ব্রেন ড্রেন’ সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে।

Advertisements

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি
পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য দাবি করে এসেছে, তারা রাজ্যে বিনিয়োগ আনার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এর মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করেছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কতটা শিল্প স্থাপন হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

সমাধান কী?
অর্থনীতিবিদদের মতে, কলকাতাকে আবার অর্থনীতির মূল স্রোতে ফেরাতে হলে কয়েকটি মূল দিককে গুরুত্ব দিতে হবে—

  • ইজ অফ ডুইং বিজনেস সহজ করতে হবে।
  • নতুন প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প গড়ে তুলতে হবে।
  • ট্রান্সপোর্ট ও পরিকাঠামো-তে বড়সড় বিনিয়োগ দরকার।
  • স্টার্ট-আপ সংস্কৃতিকে উৎসাহ দিতে হবে।
  • এবং শিক্ষিত যুবশক্তিকে রাজ্যে ধরে রাখতে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

এক সময়ের শিল্প ও সংস্কৃতির শহর আজ ভারতের জিডিপি-তে মাত্র ১ শতাংশ অবদান রাখতে পারছে—এটা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক চিত্র। মুম্বই, বেঙ্গালুরু, দিল্লির মতো শহরগুলি যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে আধুনিক শিল্প ও প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নের পথে, সেখানে কলকাতার পিছিয়ে পড়া রাজ্য ও প্রশাসনের কাছে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন। উন্নয়নের নতুন রূপরেখা তৈরি না হলে এই ধারা আগামী দিনেও বদলাবে না—এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।