ভারতের কৃষকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকার চালু করেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প—কিষাণ মনধন যোজনা (Kisan Mandhan Yojana)। এই প্রকল্প ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে চালু হয়। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান, বিশেষত দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য।
কী এই কিষাণ মনধন যোজনা?
এই স্কিমে কৃষক নিজে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখেন এবং সরকারের তরফ থেকেও সমপরিমাণ অর্থ তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা হয়। কৃষকের বয়স যখন ৬০ বছর পূর্ণ হবে, তখন থেকে তিনি প্রতি মাসে ₹৩০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী পেনশন প্রকল্প, যা কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর ও নিরাপদ করতে সাহায্য করে।
কারা এই স্কিমে আবেদন করতে পারবেন?
যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে
যাঁদের বার্ষিক কৃষিজ জমি ২ হেক্টর বা তার কম
আবেদনকারীকে কোনো সরকারি পেনশন বা আর্থিক সহায়তা না পেতে হবে
কীভাবে জমা দিতে হবে টাকা?
বয়স অনুযায়ী কৃষককে প্রতি মাসে ₹৫৫ থেকে ₹২০০ পর্যন্ত টাকা জমা দিতে হয়।
১৮ বছর বয়সে শুরু করলে মাসে ৫৫ টাকা জমা
৪০ বছর বয়সে শুরু করলে মাসে ২০০ টাকা জমা
এই টাকা কৃষকের LIC-র মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকবে এবং সরকারও সমান পরিমাণ অর্থ জমা করবে।
এই স্কিমের বিশেষ দিক:
৬০ বছরের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা
কৃষক মৃত্যুর পর, স্ত্রী বা স্বামী পরিবার পেনশন পাবে (৫০%)
কোনো কারণে কৃষক মধ্যপথে স্কিম বন্ধ করলে, তার জমানো টাকা সুদসহ ফেরত মিলবে
কীভাবে আবেদন করবেন?
কৃষক স্বতঃস্ফূর্তভাবে ন্যূনতম দলিল সহ CSC (Common Service Centre)-তে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন
আধার কার্ড, জমির দলিল, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডিটেইলস জমা দিতে হবে
আবেদন বিনামূল্যে করা যায় এবং অবিলম্বে পেনশন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই স্কিম?
ভারতের বেশিরভাগ কৃষক প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র শ্রেণির। বার্ধক্যে কৃষিকাজ চালানো কঠিন হয়ে যায়, আর উপার্জন না থাকলে পরিবার চলে না। সেই পরিস্থিতি মাথায় রেখেই সরকার এই স্কিম চালু করেছে যাতে অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে,
“এই ধরনের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প দেশের কৃষক শ্রেণিকে আত্মবিশ্বাস জোগায় এবং তাদের বার্ধক্যে ভরসা দেয়।” বর্তমানে লক্ষাধিক কৃষক এই স্কিমের আওতায় এসেছেন এবং সরকারের লক্ষ্য আগামী কয়েক বছরে আরও ৫ কোটির বেশি কৃষককে এই প্রকল্পে যুক্ত করা।