কলকাতা ভিত্তিক জুতো কম্পানি খাদিম ইন্ডিয়া লিমিটেড ঘোষণা করেছে তারা আগামী মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে তাদের বিতরণ ব্যবসার ডিমার্জার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায়। এবং মে মাসের মধ্যে তাদের নতুন কোম্পানি “কেএসআর ফুটওয়্যার লিমিটেড” কে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। খাদিমের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো তাদের মূল খুচরা ব্যবসার মূল্য বৃদ্ধি করা এবং বিক্রির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা।
কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন, “ডিমার্জার প্রক্রিয়া বর্তমানে এনসিএলটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যা ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসের মধ্যে জারি হবে। ডিমার্জার কার্যকর হওয়ার তারিখ আমরা এপ্রিল ১ তারিখে ঠিক করেছি এবং নতুন কোম্পানি কেএসআর ফুটওয়্যার লিমিটেড মে মাসের মধ্যে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হবে।”
কোম্পানির উন্নতি এবং বিক্রির পরিকল্পনা
খাদিমের এই স্ট্র্যাটেজিক পদক্ষেপটি তাদের খুচরা ব্যবসার জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে মূল্য উন্মোচন করবে। যা বর্তমানে খাদিম ব্র্যান্ডের অধীনে প্রায় ৮৯০টি স্টোরে পরিচালিত হচ্ছে এবং মোট আয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ আসে এই খুচরা ব্যবসা থেকে। অন্যদিকে খাদিম তাদের বাজার দখল এবং মার্জিন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চৌধুরী জানিয়েছেন, “আমরা আশা করছি, আগামী অর্থবছরে পুরোপুরি কাজ শুরু হলে আমাদের মার্জিনে ১০০-২০০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি হবে।
খাদিমের বিতরণ ব্যবসা প্রান্তিক তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৩১.২ শতাংশ রাজস্ব অবদান রেখেছে। বর্তমানে, খাদিম তাদের বিতরণ নেটওয়ার্কে ৫০টি নতুন ডিস্ট্রিবিউটর যুক্ত করেছে, ফলে মোট ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা বেড়ে ৭৭৬-এ পৌঁছেছে।
কুইক কমার্স এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে লক্ষ্য
বিক্রির উন্নতির জন্য খাদিম তাদের বিদ্যমান পণ্যগুলির দাম কমানোর পাশাপাশি নতুন পণ্যগুলোর মাক্সিমাম রিটেইল প্রাইস কমিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও খাদিম তাদের অনলাইন বিক্রয় শেয়ার ৪-৫ শতাংশ থেকে বাড়ানোর জন্য পণ্য নির্বাচন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং অপটিমাইজ করতে কাজ করছে।
চৌধুরী জানিয়েছেন, “আমরা কুইক কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির সাথে পার্টনারশিপ প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করছি, যেমন ‘জেপ্টো’, এবং স্কুল জুতো ও ইভিএ স্লিপারসের মতো ইউটিলিটি পণ্যগুলো বিক্রির জন্য ফোকাস করছি।”
নতুন ব্যবসায়িক ক্ষেত্র এবং লাভজনকতা বৃদ্ধি
খাদিম এর নতুন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও মনোযোগ দিচ্ছে। কোম্পানি এই বসন্ত মরসুমে তাদের ‘আথলিজার’ সেগমেন্ট লঞ্চ করার পরিকল্পনা করছে। এটি তাদের মার্জিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। এছাড়া খাদিম তাদের খুচরা ব্যবসায়ে উচ্চ মার্জিন পণ্যগুলির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে।
“আমরা আমাদের কিছু অপ্রত্যাশিত ফ্রাঞ্চাইজি স্টোরগুলোকে কমিশন ভিত্তিক মডেলে রূপান্তরিত করছি, যাতে সেখানে অপারেশনগুলি পরিচালনা করতে পারি এবং ফ্রাঞ্চাইজি স্টোর মালিকরা বিক্রির কমিশন উপার্জন করতে পারেন,” চৌধুরী যোগ করেছেন। এই কৌশল ইতোমধ্যেই ৩০টি স্টোরে ইতিবাচক ফলাফল দেখিয়েছে এবং কোম্পানি আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
সাবলীল খরচ ব্যবস্থাপনা
এছাড়াও খাদিম তাদের স্থির খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, বিশেষ করে ই-কমার্স অপারেশনগুলিতে। তারা তাদের গুদামজাতকরণ আউটসোর্স করার মাধ্যমে ফিক্সড কস্টকে ভ্যারিয়েবল কস্টে রূপান্তরিত করছে। এই পদক্ষেপটি কোম্পানির মোট লাভজনকতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
কোম্পানির আর্থিক ফলাফল
খাদিম তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (২০২৫ অর্থবছর) ২.৫ শতাংশ বার্ষিক আয় বৃদ্ধির খবর দিয়েছে, যা দাঁড়িয়েছে ১৬০.২ কোটি টাকা।
কোম্পানির ডিমার্জার এবং ব্যবসায়িক কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে খাদিম আগামী সময়ে আরও বেশি লাভজনক এবং বাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণের পরিকল্পনা করছে।