প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভে খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পণ্যের (Khadi Products) বিক্রি নিয়ে গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছেন খাদি ও গ্রামোদ্যোগ কমিশনের (কেভিআইসি) চেয়ারম্যান মনোজ কুমার। তিনি জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘খাদি বিপ্লব’-এর ফলস্বরূপ, ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রয়াগরাজে আয়োজিত একটি জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে খাদি পণ্যের বিক্রি ঐতিহাসিকভাবে ১২.০২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই প্রদর্শনীতে ৯৮টি খাদি স্টল এবং ৫৪টি গ্রামোদ্যোগ স্টল ছিল, যেখানে খাদি পণ্যের বিক্রি হয়েছে ৯.৭৬ কোটি টাকার এবং গ্রামোদ্যোগ পণ্যের বিক্রি হয়েছে ২.২৬ কোটি টাকার।
মনোজ কুমার আরও জানিয়েছেন যে, ‘নতুন ভারতের জন্য নতুন খাদি’ আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে তিনি দিল্লির রাজঘাটে কেভিআইসি-র কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ছয়টি রাজ্যের ২০৫ জন মৌমাছি পালনকারীদের মধ্যে ২,০৫০টি মৌচাক, মৌমাছির কলোনি এবং টুলকিট বিতরণ করেছেন। এই বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গ্রামে গ্রামে ‘মিষ্টি বিপ্লব’ ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্নকে সামনে রেখে কেভিআইসি ‘হানি মিশন’ শুরু করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মৌমাছি পালনকারীদের মৌচাক ও মৌমাছির কলোনি দেওয়া হচ্ছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে।
মিষ্টি বিপ্লবের স্বপ্ন
চেয়ারম্যান মনোজ কুমার উল্লেখ করেন যে, ২০১৬ সালে গুজরাটের বনাসকান্ঠার দেসা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘শ্বেত বিপ্লব’-এর পাশাপাশি ‘মিষ্টি বিপ্লব’-এর ডাক দিয়েছিলেন। এই অনুপ্রেরণায় ২০১৭ সালে কেভিআইসি ‘হানি মিশন’ চালু করে। এই প্রকল্পের অধীনে এখন পর্যন্ত ২০,০০০-এরও বেশি উপভোক্তা ২ লক্ষ মৌচাক ও মৌমাছির কলোনি পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘মন কি বাত’-এর ৭৫তম পর্বে মৌমাছি পালনের সুবিধার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, মধু ছাড়াও মৌমাছির মোম গ্রামীণ অর্থনীতির একটি বড় সম্পদ।
মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস (এমএসএমই) মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকাশনা অনুসারে, মৌমাছির মোমের চাহিদা ওষুধ, খাদ্য, টেক্সটাইল এবং প্রসাধনী শিল্পে প্রচুর। তাই কৃষকদের উচিত তাদের কৃষি কার্যক্রমের সঙ্গে মৌমাছি পালনকে যুক্ত করা। এতে তাদের আয় বাড়বে, জীবনে মিষ্টতা যোগ হবে এবং দেশ মধু উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে।
খাদি সেক্টরের অভূতপূর্ব সাফল্য
মনোজ কুমার তাঁর বক্তৃতায় খাদি সেক্টরের গত ১০ বছরের অর্জন তুলে ধরেন। তিনি জানান, খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পণ্যের বিক্রি পাঁচ গুণ বেড়ে ৩১,০০০ কোটি টাকা থেকে ১,৫৫,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। শুধুমাত্র খাদি পোশাকের বিক্রি ছয় গুণ বেড়ে ১,০৮১ কোটি টাকা থেকে ৬,৪৯৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। গত আর্থিক বছরে এই সেক্টরে ১০.১৭ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, গত এক দশকে খাদি কারিগরদের আয় ২১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সেক্টরে ৮০ শতাংশেরও বেশি কর্মসংস্থান নারীদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে, যা নারী ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ও খাদির উত্থান
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে খাদি একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। তিনি সবসময় খাদি ও গ্রামোদ্যোগকে গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে দেখেছেন। মহাকুম্ভে খাদি পণ্যের এই অভূতপূর্ব বিক্রি প্রমাণ করে যে, মানুষ এখন খাদিকে শুধু একটি কাপড় হিসেবে নয়, বরং একটি জীবনধারা ও স্বাবলম্বনের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করছে। মনোজ কুমার বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে খাদি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”
গ্রামীণ উন্নয়নে হানি মিশন
‘হানি মিশন’ শুধু মধু উৎপাদনের জন্য নয়, বরং গ্রামীণ মানুষের জীবনে আর্থিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। মৌমাছি পালনের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের ফসলের পরাগায়ন বাড়াতে পারেন, যা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এছাড়া মধু ও মোম বিক্রি করে তারা অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। মনোজ কুমার বলেন, “একজন কৃষকের জন্য মৌমাছি পালন একটি সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো। এটি শুধু আয়ই বাড়ায় না, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাতেও সাহায্য করে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কেভিআইসি-র চেয়ারম্যান জানান, আগামী দিনে আরও বেশি সংখ্যক গ্রামবাসীকে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল প্রতিটি গ্রামে খাদি ও গ্রামোদ্যোগের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা নতুন প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারিগরদের আরও দক্ষ করে তুলব।”
এই অনুষ্ঠানে গ্রামোদ্যোগ উন্নয়ন প্রকল্পের উপভোক্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া মুম্বাই ও দিল্লিতে কেভিআইসি-র প্রধান কার্যালয়ের আধিকারিক ও কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন।
মহাকুম্ভে খাদির এই সাফল্য এবং ‘হানি মিশন’-এর প্রসার প্রমাণ করে যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যম নয়, বরং ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এই উদ্যোগগুলি গ্রামীণ ভারতকে শক্তিশালী করছে এবং দেশকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।