নতুন করে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জুন ২০২৫ সালে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মূদ্রাস্ফীতির হারের তুলনায় কেরল (Kerala) একবার আবার শীর্ষস্থানে রয়েছে, যেখানে মূদ্রাস্ফীতির হার ৬.৭১% রেকর্ড করা গেছে। এই তথ্য সর্বশেষভাবে মিনিস্ট্রি অফ স্ট্যাটিসটিক্স অ্যান্ড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (মোসপিআই) দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ অনেক পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে মূদ্রাস্ফীতির হার মাত্র ১.৪৫%। এই তথ্যগুলো রাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য এবং নীতিগত পার্থক্যের প্রতিফলন হিসেবে বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
কেরলের উচ্চ মূদ্রাস্ফীতি: কারণ কী?
কেরলের উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। রাজ্যটি প্রধানত একটি ভোগ-নির্ভর অর্থনৈতিক মডেলের ওপর নির্ভরশীল, যেখানে পণ্যের প্রায় ৮০% আমদানি করা হয়। এই ভোগমুখী জীবনযাপন এবং বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাস কেরলের মূদ্রাস্ফীতির হার বাড়াতে সাহায্য করছে। তাছাড়া, রাজ্যে উচ্চ মজুরি স্তর এবং বিদেশ থেকে আসা নিয়মিত রেমিট্যান্স প্রবাহও এই প্রবণতাকে সমর্থন করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম অনমানোরামার একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ছয় মাস ধরে কেরল মূদ্রাস্ফীতির তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে। জুন মাসে গ্রামীণ এলাকায় মূদ্রাস্ফীতি ৭.৩১% এবং শহরে ৫.৬৯% ছিল, যা দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
কেরলের এই অবস্থা বামপন্থী শাসনের সঙ্গে যুক্ত করে কিছু বিশ্লেষক। তাদের মতে, রাজ্যের সামাজিক কল্যাণমূলক নীতি এবং উচ্চ বেতন সংরचना মূদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) জানিয়েছে যে, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ২০২৫-২৬ সালে গতিশীল থাকবে, যা ব্যক্তিগত ভোগ এবং মূলধন বিনিয়োগের কারণে সম্ভব হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা: কম মূদ্রাস্ফীতি কেন?
অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গে মূদ্রাস্ফীতির হার ১.৪৫% রেকর্ড করা গেছে, যা জাতীয় গড় ২.১% এর তুলনায় অনেক কম। এই কম মূদ্রাস্ফীতি রাজ্যের কৃষি-নির্ভর অর্থনীতি এবং স্থানীয় বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ফল হতে পারে। তবে, এই কম হারটি রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়ন এবং প্রযুক্তি-নির্ভর অর্থনৈতিক কার্যকলাপের অভাব এই কম মূদ্রাস্ফীতির একটি কারণ হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় তেলঙ্গানার মতো রাজ্যে মূদ্রাস্ফীতি নেতিবাচক (-০.৯৩%) রেকর্ড করা গেছে, যা সেখানকার কৃষি উৎপাদন এবং জ্বালানি ও শস্যের মূল্য সংশোধনের ফলাফল। এই তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একরৈখিক নয়, এবং সরকারি নীতি এবং স্থানীয় উৎপাদন ক্ষমতা এর ওপর প্রভাব ফেলে।
মূদ্রাস্ফীতির তথ্য: জাতীয় ও রাজ্যভিত্তিক চিত্র
মোসপিআই-এর তথ্য অনুযায়ী, জুন ২০২৫ সালে ভারতের জাতীয় মূদ্রাস্ফীতির হার ২.১%। এই তালিকায় পঞ্জাব (৪.৬৭%), জম্মু ও কাশ্মীর (৪.৩৮%) এবং উত্তরাখণ্ড (৩.৪%) রয়েছে। অন্যদিকে, আন্ধ্রপ্রদেশে মূদ্রাস্ফীতি ০% এবং ওড়িশায় ০.৫২% রেকর্ড করা গেছে। এই তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, কৃষি-নির্ভর রাজ্যগুলোতে মূদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়েছে, যেখানে আমদানি-নির্ভর রাজ্যগুলোতে চাপ বেশি।
আলোচনা ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট
সামাজিক মাধ্যমে এই তথ্য নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশিত হচ্ছে। কিছু ব্যবহারকারী মনে করছেন যে, কেরলের উচ্চ মূদ্রাস্ফীতি বামপন্থী শাসনের ফলাফল, যেখানে উচ্চ বেতন ও কল্যাণমূলক নীতি মূল্য স্তর বাড়িয়ে তুলেছে। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে কম মূদ্রাস্ফীতি তৃণমূল সরকারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পরিচয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, কিছু বিশ্লেষক দাবি করছেন যে, এই তথ্যগুলো বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এবং মূদ্রাস্ফীতির প্রকৃত হার ৯-১০% হতে পারে।
আরবিআই-এর মতে, গ্রামীণ এলাকায় মূদ্রাস্ফীতি ১.৭২% এবং শহরে ২.৫৬% রেকর্ড করা গেছে, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় কম। ভবিষ্যতে, অর্থনৈতিক কার্যকলাপের গতি বজায় রাখতে রাজ্যগুলোর জন্য নির্দিষ্ট নীতি প্রয়োজন হবে। কেরলের মতো রাজ্যে আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে শিল্পায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে মূদ্রাস্ফীতির ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।
সুতরাং, এই তথ্যগুলো ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জটিলতা প্রকাশ করে। কেরলের উচ্চ মূদ্রাস্ফীতি ও পশ্চিমবঙ্গের কম হার রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক গঠন ও নীতির প্রতিফলন। ভবিষ্যতে এই ভারসাম্য রক্ষা করা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।