ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য খবর সামনে এসেছে। প্রথম ত্রৈমাসিক (কিউ ১) এফওয়াই ২০২৬-এ ভারতে বিদেশি সরাসি বিনিয়োগ (FDI ) ১৮.৬২ বিলিয়ন ডলারের কোঠায় পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৫% বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এই বৃদ্ধির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশটি হলো কার্নাটকের (Karnataka) অবদান, যেখানে ৫.৬১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। কার্নাটক এই ত্রৈমাসিকে এফডিআই-এর শীর্ষে রয়েছে, যা এই রাজ্যের অর্থনৈতিক শক্তি ও প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে স্থানটির গুরুত্ব আরও জোর দেয়। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, কার্নাটক একটি অবিজেপি (না-ভারতীয় জনতা পার্টি) শাসিত রাজ্য, যা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে এফডিআই-এর বৃদ্ধির একটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
কার্নাটকের এই অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। রাজ্যটি প্রযুক্তি ও স্টার্টআপের ক্ষেত্রে একটি গ্লোবাল হাব হিসেবে পরিচিত, বিশেষ করে বেঙ্গালুরু যা “ইন্ডিয়ার সিলিকন ভ্যালি” নামে পরিচিত। এখানে ১৫,০০০-এর বেশি স্টার্টআপ ও ৪৯টি ইউনিকর্ন কোম্পানি রয়েছে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। গত ত্রৈমাসিকে কম্পিউটার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার খাতে ৫.৪৬ বিলিয়ন ডলার এফডিআই এসেছে, যার বড় অংশ কার্নাটকের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া, রাজ্যের ব্যবসা-বান্ধব নীতি, দক্ষ শ্রমশক্তি ও ভৌগোলিক সুবিধা বিদেশি কোম্পানিদের জন্য এই রাজ্যকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
মহারাষ্ট্র (৫.৩৬ বিলিয়ন ডলার), তামিলনাড়ু (২.৬৭ বিলিয়ন ডলার), গুজরাট (১.২ বিলিয়ন ডলার) ও দিল্লি (১ বিলিয়ন ডলার) এই তালিকায় পরবর্তী স্থানে রয়েছে। তবে কার্নাটকের সাফল্য অবিজেপি শাসিত রাজ্য হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এটি দেখাচ্ছে যে রাজনৈতিক সীমারেখা অতিক্রম করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের অধীনে কার্নাটকের এই অগ্রগতি কেন্দ্রীয় এনডিএ সরকারের এফডিআই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যের ফলাফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন যে রাজ্যের ভাষা-ভিত্তিক নীতিগুলো (যেমন কন্নড় ভাষার জোর) বিনিয়োগের পথে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
বিদেশি বিনিয়োগের উৎস দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র (৫.৬১ বিলিয়ন ডলার) ও সিঙ্গাপুর (৪.৫৯ বিলিয়ন ডলার) এগিয়ে রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক ভারতের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত হয়ে উঠছে। এছাড়া, নবায়নযোগ্য শক্তি (১.১৪ বিলিয়ন ডলার) ও অটোমোবাইল খাত (১.২৯ বিলিয়ন ডলার) এফডিআই-এর বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা ভারতের সরকারি “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তবে, এই সফলতার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, নেট এফডিআই ৪.৯১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা গত বছরের তুলনায় ২১.১% কম। এই হ্রাসের কারণ হিসেবে বাইরে বিনিয়োগ ও ফেরত প্রেরণ বৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যদিও তাজা বিনিয়োগ আসছে, তবুও বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি।
কার্নাটকের সাফল্য অবিজেপি শাসিত রাজ্য হিসেবে ভারতের ফেডারেল গঠনের শক্তিকে প্রতিফলিত করে। এই রাজ্যের অগ্রগতি কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সঙ্গে স্থানীয় উদ্যমের সমন্বয়ের ফলাফল। তবে, এই বৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বণ্টন করা এবং গ্রামীণ অঞ্চলে এর সুবিধা পৌঁছানোর জন্য আরও চেষ্টা প্রয়োজন। কার্নাটকের মতো রাজ্যগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দিতে পারলে ভারত বিশ্ব অর্থনৈতিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী হবে।
সামগ্রিকভাবে, কার্নাটকের এই অর্থনৈতিক কাঠামো ও বিদেশি বিনিয়োগের বৃদ্ধি ভারতের জন্য একটি আশার কথা। তবে, রাজনৈতিক ও ভাষাগত বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিনিয়োগের প্রবাহ অব্যাহত থাকে এবং এর সুবিধা সামগ্রিকভাবে জনগণের মধ্যে পৌঁছায়। ভবিষ্যতে এই ধরনের সাফল্য অন্যান্য অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে, যা ভারতের অর্থনৈতিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।