কলকাতা: ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে কলকাতার সংযোগের জন্য দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত একটি বিকল্প পথ প্রায় প্রস্তুত। কালাদান বহুমুখী পরিবহন প্রকল্প (Kaladan Multi-Modal Transit Transport Project) বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি নতুন বাণিজ্যিক রুট উন্মুক্ত করতে চলেছে।
২০০৮ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমারের সীত্তোয়ে বন্দর হয়ে নদীপথ ও সড়কের মাধ্যমে মিজোরামের রাজধানী আইজলকে সংযুক্ত করা। প্রকল্পটি কার্যকর হলে কলকাতা থেকে আইজলের দূরত্ব প্রায় ৭০০ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে বাণিজ্য, পরিবহন এবং আঞ্চলিক সংযোগে এক বিপ্লব আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগের অধীনে সীত্তোয়ে বন্দরে সমুদ্রপথ, পালেটওয়া অঞ্চলে নদীপথ এবং জোরিনপুই থেকে আইজল পর্যন্ত প্রায় ১০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই প্রকল্পে প্রায় ৪৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল জানিয়েছেন, প্রকল্পটি ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে
বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কয়েকটি রুট ব্যবহৃত হয়, তবে সেগুলো প্রায়ই রাজনৈতিক ও লজিস্টিক সমস্যার মুখে পড়ে। কালাদান প্রকল্প সেই নির্ভরশীলতা কমিয়ে বেই অফ বেঙ্গল হয়ে সরাসরি সংযোগের পথ তৈরি করছে। তবে মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জের কারণে বিশেষ করে পালেটওয়া–জোরিনপুই সড়ক অংশে কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে।
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রুট চালু হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের একীকরণে এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এটি বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশলে ভারতের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
তবে সফলতা নির্ভর করছে মিয়ানমারের সহযোগিতা, সময়মতো প্রকল্প শেষ করা এবং স্থানীয় সমস্যাগুলোর সমাধানের ওপর। সরকার উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ শ্রমিক ব্যবহার করে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
কালাদান প্রকল্প কার্যকর হলে কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে পরিবহন আরও দ্রুত, নিরাপদ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে। এটি শুধু আঞ্চলিক সংযোগই নয়, ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।