ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI) সম্প্রতি জিও ব্ল্যাকরককে (Jio BlackRock) চারটি প্যাসিভ ইনডেক্স ফান্ড লঞ্চের অনুমোদন দিয়েছে। সেবির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই ফান্ডগুলো চারটি প্রধান সূচককে ট্র্যাক করবে— নিফটি মিডক্যাপ ১৫০, নিফটি স্মলক্যাপ ২৫০, নিফটি নেক্সট ৫০ এবং ৮-১৩ বছরের মেয়াদের ভারতীয় সরকারি বন্ড সূচক।
জিও ব্ল্যাকরক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট গত ৭ জুলাই জানিয়েছে যে, তারা তিনটি ক্যাশ বা ডেব্ট মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমের মাধ্যমে ১৭,৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এগুলো প্রতিষ্ঠানটির প্রথম পণ্য, যা তারা চলতি বছরের মে মাসে লাইসেন্স পাওয়ার পর বাজারে এনেছে। তিনটি স্কিম হলো— জিও ব্ল্যাকরক ওভারনাইট ফান্ড, জিও ব্ল্যাকরক লিকুইড ফান্ড এবং জিও ব্ল্যাকরক মানি মার্কেট ফান্ড।
জিও ব্ল্যাকরক মূলত জিও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এবং ব্ল্যাকরকের যৌথ উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানটি এ বছরের শেষের মধ্যে প্রায় এক ডজন ইকুইটি ও ডেব্ট ফান্ড বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে। সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ভারতের ₹৭২.২ লাখ কোটি মিউচুয়াল ফান্ড মার্কেটে একটি বড় অংশীদারিত্ব তৈরি করতে চায়।
জিও ব্ল্যাকরক মিশ্র ধরনের ফান্ড (অ্যাকটিভ ও প্যাসিভ) নিয়ে বাজারে প্রবেশ করছে। ভারতের মিউচুয়াল ফান্ড মার্কেটে এখনো অ্যাকটিভ ফান্ডের প্রাধান্য রয়েছে। তবুও, ব্ল্যাকরকের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা এবং জিওর বিশাল ডিজিটাল নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রোডাক্ট ও পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই তিনটি ডেব্ট মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে $২.১ বিলিয়ন (প্রায় ₹১৭,৮০০ কোটি) সংগ্রহ করেছে। এই ফান্ডগুলোতে ৯০টিরও বেশি ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর এবং ৬৭,০০০-এর বেশি রিটেইল ইনভেস্টর বিনিয়োগ করেছেন।
জিও ব্ল্যাকরক বিশেষভাবে তাদের ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ট্রাডিশনাল ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর না করে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের কাছে ফান্ড অফার করবে। এর ফলে ফান্ডের খরচ এবং এক্সপেন্স রেশিও কমানো সম্ভব হবে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
জিও ব্ল্যাকরক তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম— মাই জিও এবং জিও ফাইন্যান্স— এর মাধ্যমে ৮ মিলিয়নের বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারীদের টার্গেট করছে। এর পাশাপাশি ব্ল্যাকরকের বিশ্বখ্যাত ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘Aladdin’-এর প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও উন্নত ও পার্সোনালাইজড প্রোডাক্ট দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্ল্যাকরক বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফান্ড ম্যানেজার, যার ম্যানেজমেন্টের আওতায় রয়েছে প্রায় $১১.৬ ট্রিলিয়ন সম্পদ (ডিসেম্বর ২০২৪ অনুযায়ী)। এর মধ্যে প্রায় $৭.৮ ট্রিলিয়ন প্যাসিভ ফান্ড বা এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যদিও ব্ল্যাকরক প্যাসিভ ফান্ডের জন্য বিখ্যাত, তবুও জিও ব্ল্যাকরক ভারতে অ্যাকটিভ ফান্ডও অফার করতে চায়। কারণ ভারতীয় বাজারে এখনো অ্যাকটিভ ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেশি।
জিও ব্ল্যাকরকের প্রথম এনএফও (নিউ ফান্ড অফার) তিন দিন স্থায়ী হয়েছিল এবং ২ জুলাই ২০২৫-এ শেষ হয়। এই এনএফওতে ৯০টিরও বেশি ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর এবং ৬৭,০০০-এর বেশি রিটেইল ইনভেস্টর অংশগ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠানটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি ভারতের ক্যাশ/ডেব্ট ফান্ড সেগমেন্টে অন্যতম বৃহৎ এনএফও ছিল।
এই সাফল্যের ফলে, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই জিও ব্ল্যাকরক ভারতের ৪৭টি ফান্ড হাউসের মধ্যে ডেব্ট অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্টের (AUM) ভিত্তিতে শীর্ষ ১৫-এর মধ্যে স্থান পেয়েছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিও ব্ল্যাকরকের এই পদক্ষেপ দেশের মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। জিওর টেলিকম
নেটওয়ার্ক এবং ব্ল্যাকরকের গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজির সমন্বয় নতুন প্রজন্মের বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছানোর এই মডেল ভবিষ্যতে অন্যান্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির জন্যও একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। একদিকে, বিনিয়োগকারীরা সহজে অনলাইনেই ফান্ড কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন, অন্যদিকে, খরচও কম হবে।
সব মিলিয়ে, জিও ব্ল্যাকরকের এই নতুন ফান্ড লঞ্চ দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের প্রতিযোগিতাকে আরও তীব্র করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আগামী দিনে প্রতিষ্ঠানটি আরও নতুন ফান্ড নিয়ে আসবে, যা দেশের বিনিয়োগ সংস্কৃতিকে আরও বিস্তৃত করবে এবং মধ্যবিত্ত ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিনিয়োগের আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।