জিও ব্ল্যাকরক পেল সেবির ছাড়পত্র, শুরু হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইসরি পরিষেবা

ভারতের বিনিয়োগ পরামর্শ পরিষেবার জগতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল জিও ব্ল্যাকরক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার্স প্রাইভেট লিমিটেড (JBIAPL)। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI) এবং বম্বে…

Jio BlackRock

ভারতের বিনিয়োগ পরামর্শ পরিষেবার জগতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল জিও ব্ল্যাকরক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার্স প্রাইভেট লিমিটেড (JBIAPL)। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI) এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE) থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি এবার অফিসিয়ালি কাজ শুরু করতে চলেছে।

জিও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এবং গ্লোবাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ব্ল্যাকরকের মধ্যে ৫০:৫০ অনুপাতে গঠিত এই যৌথ উদ্যোগটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি “ডিজিটাল-ফার্স্ট” পণ্য তৈরিতে মনোনিবেশ করবে, যা বর্তমান প্রজন্মের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিনিয়োগ প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবে।

   

নতুন যুগে পা রাখল জিও ব্ল্যাকরক:
জিও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিতেশ শেঠিয়া বলেন, “আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, জিও ব্ল্যাকরক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার্স সেবি থেকে অনুমোদন পেয়েছে। এটি আমাদের ব্ল্যাকরকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন। ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা এখন ব্যক্তিগতকৃত ও অন্তর্দৃষ্টিনির্ভর আর্থিক পরামর্শ চাইছেন, আর এই যৌথ উদ্যোগ এই চাহিদাকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে।”

তিনি আরও বলেন, “জিও ব্ল্যাকরক ভবিষ্যতের সম্পদ সৃষ্টির পদ্ধতি বদলে দেবে এবং ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের গ্লোবাল এক্সপার্টিজ এবং স্থানীয় প্রাসঙ্গিকতার এক দুর্দান্ত মেলবন্ধন উপহার দেবে।”

গ্লোবাল এবং লোকাল—দুই দুনিয়ার মেলবন্ধন
ব্ল্যাকরকের চিফ অপারেটিং অফিসার রব গোল্ডস্টেইন বলেন, “ভারত আজ বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল এবং গতিশীল বিনিয়োগ বাজার। জিও ব্ল্যাকরক এই শক্তিশালী বাজারে ব্ল্যাকরকের বৈশ্বিক বিনিয়োগ অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি এবং জিও ফিনান্সিয়ালের ডিজিটাল রিচ ও স্থানীয় জ্ঞানকে একত্রিত করে দেবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা ভারতীয় জনগণের দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক লক্ষ্য—যেমন অবসরকালীন সঞ্চয়—পূরণে সহায়তা করব, এবং বিশ্বমানের আর্থিক পরামর্শ পৌঁছে দেব সাধারণ মানুষের দরজায়।”

নতুন নেতৃত্বে এগোচ্ছে প্রতিষ্ঠান
জিও ব্ল্যাকরক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার্সের নতুন সিইও ও এমডি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন মার্ক পিলগ্রেম। তাঁর আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রে ২৫ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। ব্ল্যাকরকে যোগ দেওয়ার আগে তিনি iShares EMEA-তে চিফ অপারেটিং অফিসার ও হেড অফ বিজনেস স্ট্র্যাটেজি ছিলেন। এছাড়াও তিনি ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার জন্য ব্ল্যাকরকের ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

Advertisements

মার্ক পিলগ্রেম বলেন, “আমি গর্বিত এবং উচ্ছ্বসিত এই দায়িত্ব পেয়ে। ভারতের বর্তমান বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এমন একটি পরিষেবা তৈরি করতে চলেছি যা সহজবোধ্য, স্বচ্ছ এবং পেশাদারিত্বে ভরপুর হবে।”

ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর ভর করে নতুন পরিষেবা
জিও ব্ল্যাকরকের এই নতুন পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল-ফার্স্ট হওয়ায় এটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে অত্যন্ত সহজলভ্য হবে। ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও পরামর্শ পাবেন এক ক্লিকেই।

মিউচুয়াল ফান্ড পরিষেবাতেও বিস্তার
এর আগে মে মাসে সংস্থাটি জানিয়েছিল যে, তারা সেবি থেকে মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনার অনুমতিও পেয়েছে। অর্থাৎ, তারা শীঘ্রই ভারতীয় মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে বিনিয়োগ পরামর্শ ও পণ্যদানের পরিষেবা চালু করতে চলেছে। এটি ভারতের বিনিয়োগ পরিকাঠামোয় নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীর উপকারে আসবে উদ্যোগ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের মতো দেশে যেখানে আর্থিক সাক্ষরতা এখনও অনেকাংশে অনুন্নত, সেখানে এই ধরনের সহজ, ডিজিটাল, স্বচ্ছ এবং গ্লোবালি সমর্থিত পরিষেবা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে।
সার্বিকভাবে, জিও ব্ল্যাকরক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার্স শুধুমাত্র একটি নতুন সংস্থা নয়, বরং এটি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভবিষ্যতের দিশা, যা ভারতীয়দের আর্থিক ভবিষ্যতকে আরও মজবুত ও সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

  • জিও ব্ল্যাকরক পেল সেবি ও বিএসই-র অনুমোদন।
  • ৫০:৫০ হারে যৌথভাবে গঠিত জিও ফিনান্সিয়াল ও ব্ল্যাকরকের উদ্যোগ।
  • ডিজিটাল-ফার্স্ট বিনিয়োগ পরামর্শ পরিষেবা চালু হবে।
  • সিইও হিসেবে নিযুক্ত হলেন অভিজ্ঞ অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্ব মার্ক পিলগ্রেম।
  • মিউচুয়াল ফান্ড পরিষেবাতেও প্রবেশ করবে সংস্থা।
  • লক্ষ্য: সাধারণ ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে মানসম্পন্ন আর্থিক পরামর্শ পৌঁছে দেওয়া।

এই উদ্যোগে আগামী দিনে ভারতীয় বিনিয়োগ বাজারে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।