২০২৫ সালের বাজেটে আয়কর প্রদানকারীদের জন্য এক বড় ধরনের সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আয়কর রিটার্ন আপডেটের (ITR-U) জন্য সময়সীমা ২ বছর থেকে বাড়িয়ে ৪ বছর করা হয়েছে। এর মানে হলো, আপনি যদি পূর্ববর্তী ৪ বছরের আয়কর রিটার্নে কোনো ভুল বা অনিয়ম করে থাকেন, তবে এখন আপনাকে সেই ভুল সংশোধন করার জন্য নতুন সুযোগ মিলেছে। তবে, এই সুবিধা পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু অতিরিক্ত ফি ও শুল্ক দিতে হবে।
ITR-U কি?
ITR-U, যা আয়কর আইন ১৩৯(৮এ) ধারা অনুযায়ী ২০২২ সালের বাজেটে চালু করা হয়েছিল, তা হলো এক ধরনের আপডেটেড আয়কর রিটার্ন ফাইলিং সুবিধা। এর মাধ্যমে, করদাতারা তাদের পূর্ববর্তী বছরের আয়কর রিটার্নে কোনো ভুল বা অনিয়ম সংশোধন করতে পারেন। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোনো অতিরিক্ত কর, সুদ ও জরিমানা সহ কর রিটার্ন আপডেট করা যায়। মূল উদ্দেশ্য ছিল করদাতাদেরকে তাদের ভুল সংশোধন করার সুযোগ প্রদান করা, যাতে মামলা-মোকদ্দমা বা আইনি জটিলতা থেকে বাঁচা যায়।
২০২৫ বাজেটের পরিবর্তন
আগে, আইটি রিটার্ন আপডেট (ITR-U) জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল ২ বছর (২৪ মাস)। কিন্তু, ২০২৫ সালের বাজেটের পর, এই সময়সীমা ৪ বছর (৪৮ মাস) করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন আপনি ৪ বছর পুরনো আয়কর রিটার্নও সংশোধন করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো করদাতার ২০২০-২১ অর্থ বছরের আয়কর রিটার্নে ভুল থাকে, তবে তিনি ৩১ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত তার রিটার্ন আপডেট করতে পারবেন।
কীভাবে ফাইল করবেন ITR-U?
যে করদাতা কোনো একটি নির্দিষ্ট বছরের আয়কর রিটার্ন আপডেট করতে চান, তাদের প্রথমে ওই বছরের জন্য আয়কর রিটার্নের সংশোধিত তথ্য জমা দিতে হবে। তবে, কিছু শর্ত ও বিধি রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে করদাতাদের সচেতন থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ:
১. আয়কর দায় বাড়ানো: আইটি রিটার্ন আপডেট করলে আপনার করের পরিমাণ যদি বাড়ে, তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত করও জমা দিতে হবে। ১২ মাসের মধ্যে আপডেট করলে অতিরিক্ত ২৫% কর দিতে হবে, ২৪ মাসে ৫০%, ৩৬ মাসে ৬০% এবং ৪৮ মাসে ৭০% অতিরিক্ত কর দিতে হবে।
২. সুদের প্রযোজ্যতা: মূল করের সঙ্গে অতিরিক্ত করের উপর সুদ প্রযোজ্য হবে।
৩. এনফোর্সমেন্ট নিষেধ: আইটিআর-ইউ এক বছরে শুধুমাত্র একবার ফাইল করা যেতে পারে।
৪. সংশোধনযোগ্য নয়: এই পদ্ধতি ব্যবহার করে করদাতা কোনো ক্ষতি বা আয়কর ফেরত পাওয়ার জন্য রিটার্ন ফাইল করতে পারবেন না।
৫. এনফোর্সমেন্ট: যখন আপনার আয়কর রিটার্নের উপর কোনও প্রেক্ষিত বা প্রক্রিয়া চলছে, তখন ITR-U জমা দেওয়া যাবে না।
২০২৩-২৪ সালের আয়কর রিটার্ন মিস করলে কী করবেন?
যদি কোনো করদাতা ২০২৩-২৪ সালের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা মিস করে থাকেন, তবে তিনি ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বিলেটেড রিটার্ন জমা দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে, ₹৫,০০০ জরিমানা এবং নির্ধারিত সুদ প্রদান করতে হবে। তবে, যদি করদাতার করযোগ্য আয় ₹৫,০০০-এর কম হয়, তাহলে জরিমানা ₹১,০০০ হবে। এবং যদি আয় ₹২,৫০,০০০-এর কম হয়, তবে কোনো জরিমানা লাগবে না।
যদি ৩১ ডিসেম্বরের পরও রিটার্ন জমা দেওয়া না হয়, তবে ITR-U ফাইল করার সুযোগ থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি করের পরিমাণ ₹১,০০,০০০ হয়, তবে আপনাকে ৩১ জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত নির্ধারিত তারিখে রিটার্ন জমা দিতে হবে এবং এরপরের বিলেটেড রিটার্নের জন্য নির্দিষ্ট শুল্ক ও সুদ দিতে হবে।
Checklist for Filing ITR-U Under 4-Year Window
১. যে বছরের রিটার্ন মিস করেছেন সেগুলি চিহ্নিত করুন।
২. কর পরিমাণ, সুদ ও অতিরিক্ত জরিমানা হিসাব করুন।
৩. ITR-U ফর্ম ডাউনলোড করে পূরণ করুন, সাথে প্রয়োজনীয় ITR ফর্ম (যেমন ITR-1, ITR-4) পূরণ করুন।
৪. ভুল বা অনিয়মের কারণ উল্লেখ করুন।
৫. আয়কর e-filing পোর্টাল থেকে রিটার্ন জমা দিন।
৬. রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে কর পরিমাণ ও অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করুন।
ITR-U ফাইলিং পদ্ধতি, বিশেষ করে ৪ বছরের সময়সীমা বৃদ্ধির ফলে করদাতাদের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে তাদের পুরনো আয়কর রিটার্ন সংশোধন করার। তবে, এটি ব্যবহারে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং অতিরিক্ত শুল্ক ও সুদ পরিশোধ করার বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।