এখন আয়কর রিটার্ন ফাইল (ITR Filing) করার মৌসুম শুরু হয়েছে। সাধারণত, রিটার্ন দাখিলের সময় অনেক মানুষ তাড়াহুড়োতে ভুল করে ফেলেন এবং সেই ভুলের কারণে তাঁদের কাছে আয়কর দপ্তর থেকে নোটিস পৌঁছাতে পারে। আয়কর নোটিস পাওয়া নিঃসন্দেহে চাপের ব্যাপার। তবে এর পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা দরকার—এই সময়েই প্রতারণাকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা ভুয়া আয়কর নোটিস পাঠিয়ে সাধারণ করদাতাদের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। তাই আসল নোটিস আর ভুয়া নোটিসের মধ্যে পার্থক্য বোঝা প্রত্যেক করদাতার জন্য খুব জরুরি।
আসল আয়কর নোটিস কবে আসে?
আয়কর দপ্তর শুধুমাত্র তখনই করদাতাদের নোটিস পাঠায় যখন—
আয়কর রিটার্নে কোনো গরমিল থাকে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা হয়নি, রিটার্নে দেওয়া তথ্য যাচাই করার প্রয়োজন দেখা দেয়।
অন্য কোনো কারণ ছাড়া আয়কর দপ্তর নোটিস পাঠায় না। তাই প্রথমেই বোঝা দরকার যে, কোনো সন্দেহজনক নোটিস পাওয়া মাত্র সেটি আসল কি না যাচাই করা জরুরি।
২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে আয়কর দপ্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি চালু করেছে। প্রতিটি নোটিস, চিঠি বা আদেশে ডকুমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (DIN) থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই DIN নম্বরকে আয়কর দপ্তর নোটিসের “আঙুলের ছাপ” বলে উল্লেখ করেছে, কারণ এটি একেবারে ইউনিক এবং ট্রেসযোগ্য।
যদি কোনো নোটিসে DIN নম্বর না থাকে, তবে সেটি বৈধ নয়। এমনকি আয়কর দপ্তর স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, DIN ছাড়া কোনো নোটিস বা চিঠি আইনগতভাবে অকার্যকর বা “non est in law” ধরা হবে। অর্থাৎ, সেটিকে এমন মনে করা হবে যেন সেটি কখনও জারি হয়নি। তাই করদাতাদের এ ধরনের ভুয়া নোটিসে ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
করদাতারা সহজেই তাঁদের কাছে আসা আয়কর নোটিসের সত্যতা যাচাই করতে পারেন। এর জন্য আয়কর দপ্তরের ই-ফাইলিং পোর্টালে একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে—Authenticate Notice/Order Issued by ITD। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হল:
ধাপ ১: প্রথমে আয়কর ই-ফাইলিং পোর্টালে যান— https://www.incometax.gov.in/iec/foportal/
ধাপ ২: হোমপেজে গেলে “Quick Links” বিভাগে গিয়ে Authenticate notice/order issued by ITD অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: এখানে আপনি দুটি উপায়ে নোটিস যাচাই করতে পারবেন। সরাসরি DIN নম্বর এবং আপনার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে। অথবা PAN, ডকুমেন্ট টাইপ, অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার, ইস্যু ডেট এবং মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে।
ধাপ ৪: প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করার পর আপনার মোবাইল নম্বরে একটি OTP যাবে।
ধাপ ৫: OTP যাচাই হয়ে গেলে স্ক্রিনে জানিয়ে দেওয়া হবে যে নোটিস আসল নাকি ভুয়া।
যদি নোটিস আসল হয় তবে “success” বার্তা দেখাবে।
আর যদি নোটিস ভুয়া হয় তবে দেখাবে—”No record found for the given Document Number”।
প্রতারণাকারীরা সাধারণত করদাতাদের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। অনেক সময় তারা নোটিসের সঙ্গে ভুয়া লিঙ্ক পাঠায় এবং সেটি খুললেই ব্যক্তিগত তথ্য বা ব্যাংক ডিটেইলস চুরি করতে পারে। তাই যে কোনো ইমেইল বা এসএমএসে আসা লিঙ্ক না খোলাই শ্রেয়। প্রথমে অবশ্যই নোটিসের DIN যাচাই করুন।
আয়কর দপ্তরের নোটিস সবসময় নির্দিষ্ট ফরম্যাটে আসে। যদি ভাষা বা ফরম্যাটে অসঙ্গতি থাকে, তবে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।
নোটিস সবসময় আয়কর পোর্টালের মাধ্যমে জারি হয়। তাই ইমেইল বা মেসেজে প্রাপ্ত নোটিস অবশ্যই অফিসিয়াল পোর্টালে যাচাই করুন।
কোনো সন্দেহ হলে আপনার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা ট্যাক্স কনসালট্যান্টের সাহায্য নিন।
ভুয়া নোটিসে উল্লেখিত কোনো নম্বরে ফোন করবেন না এবং কোনো অর্থ পাঠাবেন না।
ITR ফাইলিং মৌসুমে আয়কর নোটিস পাওয়া অনেকের কাছেই চাপের ব্যাপার হতে পারে। তবে এখন থেকে নোটিস আসল না ভুয়া, তা যাচাই করার সহজ উপায় হাতে রয়েছে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমেই নোটিসের DIN নম্বর যাচাই করা উচিত। যদি নোটিস ভুয়া হয় তবে সেটি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর যদি আসল হয় তবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সঠিকভাবে উত্তর দেওয়াই করদাতার দায়িত্ব।
সতর্ক থাকুন, সঠিকভাবে ITR ফাইল করুন, আর ভুয়া আয়কর নোটিসের ফাঁদে পা দেবেন না।