দেশজুড়ে আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইলিং সিজন পুরোদমে চলছে। ইতিমধ্যেই এক কোটির বেশি রিটার্ন জমা পড়ে গেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র ITR-1 এবং ITR-4 ই-ফাইলিংয়ের জন্য চালু করা হয়েছে। অন্যদিকে, ITR-2 ও ITR-3 ফর্মের ফাইলিং প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।
আয়কর বিভাগ রিটার্ন ফাইলিংয়ের শেষ তারিখ ৩১ জুলাই থেকে বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত করেছে, যাতে করদাতারা কোনো তাড়াহুড়ো ছাড়াই সঠিকভাবে রিটার্ন ফাইল করতে পারেন এবং ভুল বা ত্রুটি এড়াতে পারেন। বিশেষত, বেতন আয়ের পাশাপাশি শেয়ার মার্কেট থেকে আয় থাকলে সঠিক ITR ফর্ম বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন সঠিক ITR ফর্ম বেছে নেওয়া জরুরি?
আয়কর বিভাগ বিভিন্ন আয়ের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ITR ফর্ম নির্ধারণ করেছে। ভুল ফর্ম ব্যবহার করলে আপনার রিটার্নটি “ত্রুটিপূর্ণ” হিসাবে বিবেচিত হতে পারে, ফলে অপ্রয়োজনীয় নোটিশ বা জরিমানা আসতে পারে। তাই, সঠিক ফর্ম বেছে নিতে হলে আপনার আয়ের ধরন জানা অত্যন্ত জরুরি।
আয়ের ধরন এবং করের নিয়ম:
বেতন আয়: এটি ‘Income from Salary’ হিসেবে করযোগ্য। সহজভাবে ফাইল করা যায় এবং প্রায় সব ফর্মেই এই আয় অনুমোদিত।
ডেলিভারি ভিত্তিক শেয়ার বিক্রি: যদি ১২ মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ার ধরে রাখা হয়, তাহলে সেটি থেকে প্রাপ্ত লাভ “দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ” (LTCG) হিসেবে গণ্য হয়। ১২ মাসের মধ্যে বিক্রি করলে, সেটি “স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভ” (STCG) হয়।
ইন্ট্রাডে স্টক ট্রেডিং: এটি “অনুমানিক” ব্যবসায়িক আয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি ‘Profits and Gains from Business or Profession’ ক্যাটাগরিতে পড়ে। ক্ষতি হলে, সেটি শুধু অনুমানিক আয়ের সাথে সেট অফ করা যায়।
ফিউচারস ও অপশনস (F&O) ট্রেডিং: এটি অনুমানিক নয়, বরং ব্যবসায়িক আয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি Section 44AD-এর অধীনে presumptive taxation এর জন্য যোগ্য।
ডিভিডেন্ড আয়: এটি ‘Income from Other Sources’ হিসেবে গণ্য হয় এবং স্ল্যাব রেটে করযোগ্য। Section 194 এর অধীনে TDSও প্রযোজ্য হতে পারে।
কোন ফর্মটি বেছে নেবেন?
ITR-1: যদি আপনার LTCG আয় ১.২৫ লক্ষ টাকার বেশি হয় বা কোনো STCG থাকে, তাহলে এই ফর্ম ব্যবহার করা যাবে না।
ITR-2: বেতন আয় + LTCG (১.২৫ লক্ষ টাকার বেশি) এবং ডেলিভারি ভিত্তিক STCG থাকলে ব্যবহারযোগ্য।
ITR-3: বেতন আয় + ব্যবসায়িক আয় (F&O এবং/অথবা ইন্ট্রাডে), মূলধনী লাভসহ বা ছাড়া।
F&O এবং বেতন: ITR-3 কি বাধ্যতামূলক?
হ্যাঁ। যদি একটিও F&O ট্রেড করেন, তাহলে আপনাকে ব্যবসায় পরিচালনা করা হিসাবে গণ্য করা হয়, এবং ITR-3 ব্যবহার করতে হবে।
F&O ট্রেডিং “অনুমানিক নয়” ব্যবসায়িক আয় হিসাবে বিবেচিত হয় এবং ‘Business & Profession’ হেডের অধীনে ঘোষণা করতে হবে। একটিমাত্র ট্রেডের ক্ষতি বা লাভ থাকলেও সেটি রিপোর্ট করতে হবে, নাহলে আয়করের নোটিশ আসতে পারে।
কখন ট্যাক্স অডিট প্রয়োজন?
যদি আপনার মোট ট্রেডিং টার্নওভার ১০ কোটি টাকার বেশি হয়, তাহলে Section 44AB অনুযায়ী ট্যাক্স অডিট প্রয়োজন। যদি টার্নওভার ২ কোটি টাকার কম হয়, কিন্তু আপনি ৬% এর কম মুনাফা ঘোষণা করেন এবং presumptive taxation গ্রহণ না করেন, তখনও ট্যাক্স অডিট প্রয়োজন।
Presumptive taxation (Section 44AD) গ্রহণ করলে অডিটের প্রয়োজন নেই। তবে, এটি ইন্ট্রাডে ট্রেডিংয়ের (speculative income) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। একবার presumptive taxation গ্রহণ করলে কমপক্ষে ৫ বছর চালিয়ে যেতে হয়। নাহলে presumptive সুবিধা হারিয়ে যেতে পারে।
বই বা হিসাব সংরক্ষণ কি বাধ্যতামূলক?
যদি presumptive taxation গ্রহণ না করেন এবং আপনার ব্যবসায়িক আয় (F&O বা ইন্ট্রাডে থেকে) ২.৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তাহলে books of accounts রাখতে হবে। যেমন: দিনের ভিত্তিতে ট্রেডিং লগ, ব্রোকারের কন্ট্রাক্ট নোট, লাভ-ক্ষতির বিবরণী, ব্যাঙ্ক ও ডিম্যাট স্টেটমেন্ট ইত্যাদি।
একজন ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে, যদি আগের তিন বছরে আয় ১,২০,০০০ টাকার বেশি হয় বা টার্নওভার ১০ লাখ টাকার বেশি হয়, তখনও হিসাব রাখতে হবে।
টার্নওভার কিভাবে হিসাব করবেন?
F&O টার্নওভার: সমস্ত লাভ এবং ক্ষতির মোট absolute value যোগ করে হিসাব করা হয়।
ইন্ট্রাডে টার্নওভার: ক্রয়-বিক্রয়ের সময় প্রাপ্ত সমস্ত পজিটিভ ও নেগেটিভ পার্থক্য যোগ করা হয়।
এই টার্নওভার অনুযায়ী অডিট প্রয়োজনীয়তা ও presumptive taxation এর যোগ্যতা নির্ধারিত হয়।
করদাতাদের উচিত আয় এবং ট্রেডিং-এর ধরন অনুযায়ী সঠিক ITR ফর্ম বেছে নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে রক্ষণ করা। ভুল ফর্মে ফাইল করলে অনাবশ্যক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। এই বছর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, তাই সময় নিয়ে সঠিকভাবে রিটার্ন ফাইল করার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।