ট্যাক্স মিথে বিভ্রান্ত? এই ভুলগুলো থেকে দূরে থাকুন

অবশেষে শেষ সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। অনেকেই — বিশেষ করে চাকরিজীবী, ফ্রিল্যান্সার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা —…

ITR Filing FY 2024-25: Don’t Fall For These Common Income Tax Myths

অবশেষে শেষ সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। অনেকেই — বিশেষ করে চাকরিজীবী, ফ্রিল্যান্সার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা — এখনও কিছু প্রচলিত ভুল ধারণার কারণে বিপাকে পড়তে পারেন। এর ফলে জরিমানা, রিফান্ড বিলম্ব বা এমনকি আয়কর দফতর থেকে নোটিশও আসতে পারে। আয়কর আইন, ১৯৬১ অনুযায়ী কিছু প্রচলিত মিথ ভেঙে ফেলা প্রয়োজন, যাতে করদাতারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়িয়ে সঠিকভাবে রিটার্ন ফাইল করতে পারেন।

টি.ডি.এস কাটা মানেই রিটার্ন ফাইলের প্রয়োজন নেই—মিথ
বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, তাদের আয় থেকে যদি TDS (Tax Deducted at Source) কেটে নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে আলাদা করে ITR ফাইল করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আয়কর আইন ১৯৬১-এর ধারা ১৩৯(১) অনুযায়ী, আপনার মোট আয় নির্দিষ্ট সীমার বেশি হলে রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক। যেমন, ৬০ বছরের নিচে ব্যক্তির ক্ষেত্রে ২.৫ লাখ টাকা, ৬০–৮০ বছরের মধ্যে সিনিয়র সিটিজেনের ক্ষেত্রে ৩ লাখ টাকা, এবং ৮০ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য ৫ লাখ টাকা।

   

টি.ডি.এস কাটা মানে শুধুমাত্র অগ্রিম কর সংগ্রহের ব্যবস্থা (ধারা ১৯২ অনুযায়ী), রিটার্ন ফাইল করার বাধ্যবাধকতা নয়। বরং, রিটার্ন ফাইল করা প্রয়োজন অতিরিক্ত কাটা টাকার রিফান্ড পেতে, ব্যাংক লোন নেওয়া বা ভিসার জন্য আবেদন করার সময় প্রমাণ হিসাবে দেখানোর জন্যও।

কোনও করযোগ্য আয় নেই মানেই রিটার্ন ফাইলের প্রয়োজন নেই—মিথ
অনেকের ধারণা, আয় যদি করযোগ্য না হয়, তাহলে রিটার্ন ফাইলের দরকার নেই। কিন্তু ধারা ১৩৯(১)-এর সপ্তম প্রভিশনের অধীনে, কিছু বিশেষ আর্থিক লেনদেন থাকলে রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক, এমনকি আয় করমুক্ত হলেও। যেমন, বছরে ১ কোটি টাকার বেশি টাকা কারেন্ট একাউন্টে জমা, ২ লাখ টাকার বেশি বিদেশ ভ্রমণে খরচ, বা বছরে ১ লাখ টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলে রিটার্ন জমা দেওয়া প্রয়োজন।
এই ধরণের ক্ষেত্রে রিটার্ন ফাইল করলে আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে, এবং ক্রেডিট কার্ড, লোন, বিদেশ ভিসা ইত্যাদির সুবিধা পেতে সহায়তা করে।

উপহার করমুক্ত—মিথ
অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, উপহার সম্পূর্ণ করমুক্ত। কিন্তু ধারা ৫৬(২)(x) অনুযায়ী, যদি কোনও অর্থবছরে প্রাপ্ত উপহারের মোট মূল্য ৫০,০০০ টাকার বেশি হয়, তাহলে তা “Other Sources”-এর আওতায় করযোগ্য হয়।

তবে, নিকট আত্মীয় যেমন বাবা-মা, স্বামী/স্ত্রী, ভাই-বোন, এবং সরল ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন আত্মীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপহার করমুক্ত। বন্ধুবান্ধব বা দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের দেওয়া উপহার করযোগ্য এবং সেগুলো স্পষ্টভাবে রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যেমন বিয়ের সময় বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত উপহার করমুক্ত হতে পারে।

Advertisements

ক্রিপ্টো লেনদেন জানানো প্রয়োজন নয়—মিথ
ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেট (VDA), যেমন ক্রিপ্টোকারেন্সি, এখন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। ধারা ১১৫BBH অনুযায়ী, ক্রিপ্টো লাভের ওপর ৩০% হারে কর ধার্য করা হয়, এবং কোনও ক্ষতি সেট-অফের সুযোগ নেই।
তাছাড়া, ধারা ১৯৪S অনুযায়ী ক্রিপ্টো কেনার সময় ১% TDS কেটে রাখা বাধ্যতামূলক। এই লেনদেনগুলোর রিপোর্ট না করলে আয়কর দফতর সন্দেহের চোখে দেখতে পারে এবং জবাবদিহির জন্য নোটিশ পাঠাতে পারে।

বিদেশি আয় সবসময় করমুক্ত—মিথ
যারা Resident and Ordinary Resident (ROR) হিসেবে শ্রেণীকৃত, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্বের যেকোনো স্থানে আয় করযোগ্য। ধারা ৫(১) অনুযায়ী, বিদেশ থেকে ফ্রিল্যান্সিং (PayPal, Stripe, বা সরাসরি ট্রান্সফার) এর মাধ্যমে আয় হলেও, তা করযোগ্য।

তাছাড়া, বিদেশি ব্যাংক একাউন্ট, শেয়ার, সম্পদ ইত্যাদির বিবরণ Schedule FA-তে দিতে হয়। এই আইন লঙ্ঘন করলে Black Money Act (2015) অনুযায়ী কঠোর শাস্তি, এমনকি মোটা অঙ্কের জরিমানা বা জেল পর্যন্ত হতে পারে।

যখনই রিটার্ন ফাইলের শেষ সময় ঘনিয়ে আসে, তখন অনেকেই দ্রুততার মধ্যে পড়ে যান এবং ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে বড় ধরনের আইনি সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন। TDS কাটা থাকলেও, বিদেশি আয় থাকলেও, বা উপহার পেলে — সবক্ষেত্রে সচেতনভাবে আইন মেনে রিটার্ন ফাইল করা উচিত। এটি শুধু আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, বরং আর্থিক পরিচ্ছন্নতা এবং ভবিষ্যতের আর্থিক স্থিতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যদি এখনও রিটার্ন ফাইল না করে থাকেন, তবে সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে রিটার্ন ফাইল করুন এবং ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়িয়ে চলুন। অনলাইনে বা কোনও ট্যাক্স এক্সপার্টের সাহায্যে সহজেই ফাইল করা যায়। মনে রাখুন, সঠিক তথ্যই আপনার আর্থিক সুরক্ষার চাবিকাঠি।