২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য আয়কর বিভাগ ইতিমধ্যেই সব সাতটি ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (ITR) ফর্ম — ITR-1 থেকে ITR-7 — জারি করেছে। এই ফর্মগুলির সঙ্গে ITR-V এবং একটি নতুন ফর্ম, ITR-U, চালু করা হয়েছে। যদিও এই ফর্মগুলি এখন ডাউনলোডের জন্য উপলব্ধ, ই-ফাইলিং এখনও শুরু হয়নি। কারণ, রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ই-ফাইলিং ইউটিলিটি এখনো আয়কর বিভাগের সরকারি পোর্টালে সক্রিয় হয়নি।
কেন এখনো ফাইলিং শুরু হয়নি?
এর মূল কারণ হল ই-ফাইলিং ইউটিলিটির অনুপস্থিতি। এই ইউটিলিটিগুলি হল সফটওয়্যার টুল যা অনলাইনে রিটার্ন পূরণ ও জমা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে এগুলি তিনটি ফরম্যাটে থাকে:
- 1. অনলাইন ইউটিলিটি (প্রি-ফিলড ডেটা সহ, সাধারণত ব্যক্তি করদাতারা এটি ব্যবহার করেন)
- 2. এক্সেল ইউটিলিটি
- 3. অফলাইন ইউটিলিটি (জাভা বা JSON ফরম্যাট, পেশাদারদের মধ্যে বেশি প্রচলিত)
বর্তমানে ফর্মগুলি ডাউনলোড করার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও, প্রকৃত রিটার্ন ফাইলিং সম্ভব নয় যতক্ষণ না এই ইউটিলিটি সক্রিয় হয়।
এবার নতুন কী রয়েছে?
এই বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আপডেট হল ITR-U ফর্মের সূচনা। এটি ২০২৫ সালের ফিনান্স অ্যাক্ট অনুযায়ী চালু হয়েছে এবং ১৯ মে জারি করা হয়েছে। এই ফর্মের মাধ্যমে করদাতারা বিগত ৪৮ মাস পর্যন্ত পুরনো রিটার্ন ফাইল বা সংশোধন করতে পারবেন। যারা পূর্বে রিটার্ন জমা দিতে ভুল করেছেন বা ভুলবশত তথ্য দিয়েছেন, তাঁদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ।
এখন কী করবেন?
যদিও রিটার্ন ফাইলিং শুরু হয়নি, আপনি এই সময়টা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করে প্রস্তুতি নিতে পারেন। কী কী করবেন দেখে নেওয়া যাক:
১. আপনার জন্য প্রযোজ্য ITR ফর্ম নির্ধারণ করুন
আপনার আয়ের উৎস, পেশা, এবং বাসস্থান অনুযায়ী কোন ITR ফর্ম আপনার জন্য উপযুক্ত, তা আগে থেকেই ঠিক করে ফেলুন।
২. জরুরি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করুন
- ফর্ম ১৬ / বেতন স্লিপ
- টিডিএস সার্টিফিকেট (ফর্ম ১৬A)
- ফর্ম ২৬AS এবং AIS/TIS রিপোর্ট
- ব্যাংক/পোস্ট অফিস থেকে ইন্টারেস্ট সার্টিফিকেট
- ক্যাপিটাল গেইনের বিবরণ
- বিনিয়োগ এবং কর ছাড়ের ডকুমেন্ট (ধারা ৮০সি, ৮০ডি প্রভৃতি অনুযায়ী)
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ
- প্যান এবং আধার নম্বর
৩. AIS এবং TIS রিপোর্ট আপনার ব্যক্তিগত রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন
বিভিন্ন উৎস থেকে সরকারের কাছে যে তথ্য গিয়েছে, তা আপনার নিজস্ব তথ্যের সঙ্গে মিলে কি না তা যাচাই করুন।
৪. মোট আয় এবং করের হিসেব করে রাখুন
ইউটিলিটি চালু হলেই যাতে দ্রুত রিটার্ন ফাইল করা যায়, তার জন্য আগেই করদায়িত্বের হিসেব করে রাখতে হবে।
অন্য আয়ের ক্ষেত্রে করণীয়:
- যাদের অন্যান্য উৎস থেকে আয় আছে (যেমন শেয়ার বাজার, ক্রিপ্টো, ইত্যাদি), তাঁদের জন্যও প্রস্তুতি জরুরি। যেমন:
- মিউচুয়াল ফান্ড বা ব্রোকার হাউস থেকে FY 2024-25 সালের ক্যাপিটাল গেইন / লস স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করুন
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও টিডিএস সার্টিফিকেট প্রস্তুত রাখুন
- ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেট (VDA) যেমন ক্রিপ্টো ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করুন
ITR জমার সময়সীমা বাড়বে কি?
ইউটিলিটি চালু হওয়ার বিলম্বের কারণে অনেকেই ভাবছেন, ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই শেষ তারিখ হয়তো পিছিয়ে যাবে। তবে, এই মুহূর্তে সময়সীমা বাড়ানোর কোনও ঘোষণা নেই এবং সম্ভবনাও কম। সাধারণত করদাতারা জুন এবং জুলাই মাসেই রিটার্ন জমা দেন, তাই আয়কর দপ্তর যথাসময়ে ইউটিলিটি সক্রিয় করতে পারবে বলেই আশা করা যায়।
রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি, কিন্তু প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সময় নষ্ট না করে এখন থেকেই সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট গুছিয়ে নিন, সঠিক ফর্ম নির্ধারণ করুন এবং হিসাব ঠিক করে রাখুন। ই-ফাইলিং ইউটিলিটি চালু হলেই আপনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন এবং সহজে সময়মতো রিটার্ন ফাইল করতে পারবেন।
তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই প্রস্তুতি শুরু করুন — করজ্ঞানী নাগরিক হওয়ার প্রথম ধাপ এখান থেকেই শুরু।