আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return – ITR) দাখিলের সময়সীমা ঘনিয়ে আসছে। বেতনভুক্ত কর্মচারীদের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন (ITR Filing 2025) দাখিলে ফর্ম-১৬ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। চলতি বছর আয়কর দফতর ITR দাখিলের শেষ সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত করেছে। তাই যাঁরা এখনও রিটার্ন প্রস্তুত করতে পারেননি, তাঁদের দ্রুত ফর্ম-১৬ সংগ্রহ করে রিটার্ন ফাইল করার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
ফর্ম-১৬ কী?
ফর্ম-১৬ হলো একটি দলিল, যেখানে কোনও কর্মীর বার্ষিক বেতন, করযোগ্য আয় এবং উৎসে কর্তনকৃত কর (TDS) সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য থাকে। এটি আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য অপরিহার্য। সাধারণত প্রতি বছরই এটি জুন মাসের মধ্যে নিয়োগকর্তা কর্মচারীদের প্রদান করে থাকেন।
ফর্ম-১৬ মূলত দুইটি অংশে বিভক্ত—
পার্ট-এ: এখানে থাকে কর্মীর বেতন ও তার থেকে উৎসে কর্তিত করের বিবরণ।
পার্ট-বি: এখানে বেতনের ভেতরে থাকা বিভিন্ন ভাতা (allowances), সুবিধা, ছাড় (exemptions), এবং কর সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া থাকে।
এই ফর্ম নিয়োগকর্তা TRACES পোর্টালে দাখিল করা Form 24Q (ত্রৈমাসিক TDS রিটার্ন)-এর ভিত্তিতে প্রস্তুত করেন।
কোথা থেকে পাওয়া যাবে ফর্ম-১৬?
ফর্ম-১৬ ডাউনলোড করার জন্য কর্মচারীদের TRACES ওয়েবসাইটে লগইন করতে হয়। এর জন্য ব্যবহার করতে হবে User ID, Password ও TAN নম্বর। লগইন করার পর ‘Download’ ট্যাব থেকে ফর্ম-১৬ অপশন নির্বাচন করা যায়।
ডাউনলোড প্রক্রিয়ায় নিয়োগকর্তাকে চতুর্থ ত্রৈমাসিক TDS রিটার্নের রসিদ বা টোকেন নম্বর, অনুমোদিত ব্যক্তির তথ্য এবং কয়েকজন কর্মীর PAN ও কর সংক্রান্ত তথ্য দিতে হয়। একবার অনুরোধ জমা দেওয়া হলে সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফর্ম-১৬ ডাউনলোডের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
ডাউনলোড করা ফর্ম প্রথমে .txt ফরম্যাটে পাওয়া যায়। সেটিকে TRACES-এর PDF কনভার্টার টুল ব্যবহার করে PDF আকারে রূপান্তরিত করতে হয়। এরপর নিয়োগকর্তা সেটি ডিজিটাল বা হাতে-লিখিত স্বাক্ষর করে কর্মচারীদের প্রদান করেন।
কোন কোন বিষয় মনে রাখা জরুরি?
ফর্ম-১৬ জমা দেওয়ার সময়সীমা: প্রতিটি নিয়োগকর্তাকে বছরে ১৫ জুনের মধ্যে কর্মচারীদের ফর্ম-১৬ প্রদান করতে হয়। সময়মতো তা না করলে প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
ফর্ম 12BA: যদি কর্মচারী গাড়ি, বাড়ি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা (perquisites) পান, তবে তাঁর ফর্ম-১৬ এর সঙ্গে Form 12BA প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
একাধিক চাকরি করলে: যদি কেউ একই অর্থবর্ষে একাধিক সংস্থায় কাজ করে থাকেন, তবে প্রতিটি সংস্থা থেকে আলাদা ফর্ম-১৬ সংগ্রহ করতে হবে এবং ITR-এ সেগুলি একসঙ্গে জমা দিতে হবে।
আর্থিক প্রমাণ হিসেবে গুরুত্ব: ফর্ম-১৬ শুধু আয়কর দাখিলেই নয়, ঋণ (loan) নেওয়া, ভিসা আবেদন ইত্যাদি নানান আর্থিক প্রক্রিয়ায় আয়ের প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া ফর্ম-১৬ অবশ্যই Form 26AS বা Annual Information Statement (AIS)-এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা জরুরি। কোথাও অমিল থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করতে হবে।
করদাতা নন, তবুও কেন দরকার ফর্ম-১৬?
অনেক সময়ই দেখা যায়, কিছু কর্মচারীর করযোগ্য আয় নির্ধারিত সীমার নিচে থাকে। ফলে তাঁদের আয়কর দিতে হয় না। তবে তাও তাঁদের জন্য ফর্ম-১৬ গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ—
এটি কর্মচারীর বার্ষিক আয়ের সরকারি প্রমাণপত্র।
ফর্মে থাকে Certificate Number, TRACES Watermark, প্রতি ত্রৈমাসিকে জমা হওয়া করের বিবরণ, PAN ও TAN-এর তথ্য।
এখানে কোম্পানি কত বেতন দিয়েছে এবং কর্মচারী 80C, 80D ইত্যাদি বিভিন্ন ধারায় কতটা ছাড় নিয়েছেন, তাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
তাই কর দিতে না হলেও আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বা ভবিষ্যতের আর্থিক প্রয়োজনে ফর্ম-১৬ একটি অপরিহার্য নথি।
আইটিআর দাখিলের শেষ সময়সীমা ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হলেও শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়া করে রিটার্ন দাখিল করা উচিত নয়।
কর্মচারীদের উচিত—
যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ফর্ম-১৬ সংগ্রহ করা, সেটিকে Form 26AS ও AIS-এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা, কোনও অমিল থাকলে দ্রুত সংশোধনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া।
যথাসময়ে ফর্ম-১৬ সংগ্রহ ও আয়কর রিটার্ন দাখিল করলে শুধু কর সংক্রান্ত দায়বদ্ধতাই পূর্ণ হবে না, ভবিষ্যতে ঋণ, ক্রেডিট কার্ড বা অন্যান্য আর্থিক সুযোগের ক্ষেত্রেও তা সহায়ক হবে।