প্রযুক্তিগত সমস্যায় আইটিআর দাখিল ব্যাহত, সময় বাড়ানোর আবেদন করপেশাদারদের

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আয়কর দফতরের নির্ধারিত সময়সীমা নিয়ে করদাতা ও করপেশাদারদের মধ্যে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ (মূল্যায়ন বর্ষ ২০২৫-২৬)-এর আয়কর রিটার্ন (আইটিআর)…

ITR Filing Deadline is July 31

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আয়কর দফতরের নির্ধারিত সময়সীমা নিয়ে করদাতা ও করপেশাদারদের মধ্যে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ (মূল্যায়ন বর্ষ ২০২৫-২৬)-এর আয়কর রিটার্ন (আইটিআর) দাখিলের শেষ তারিখ ঘনিয়ে আসছে। বকেয়া ১৭ দিন পরেই অর্থাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে শেষ হবে নন-অডিট করদাতাদের জন্য রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা। এ অবস্থায় চণ্ডীগড় চার্টার্ড ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশন (CCATAX) কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (CBDT)-এর কাছে পুনরায় সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে।

আসলে ২০২৫ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্তই ছিল ব্যক্তিগত করদাতা, হিন্দু অবিভক্ত পরিবার (HUF) এবং যেসব করদাতার অডিটের প্রয়োজন নেই তাদের রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। কিন্তু নতুন আয়কর রিটার্ন ফর্মের বিস্তৃত পরিবর্তন এবং আয়কর বিভাগের সিস্টেম প্রস্তুতির কারণে CBDT ইতিমধ্যেই ৪৫ দিনের বাড়তি সময় দিয়েছে। তার ফলে বর্তমান সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫।

   

তবে যেসব করদাতার অ্যাকাউন্ট অডিট করানো বাধ্যতামূলক, যেমন কোম্পানি, প্রোপ্রাইটরশিপ ব্যবসা কিংবা ফার্মের কর্মরত অংশীদারদের জন্য এই সময়সীমা অপরিবর্তিত আছে। তাদের অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে এবং রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২৫। এখনও পর্যন্ত এই সময়সীমা বাড়ানোর কোনো সরকারি ঘোষণা হয়নি।

CCATAX-এর সাধারণ সম্পাদক সিএ মনোজ কোহলি জানাচ্ছেন, বাস্তবে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও করপেশাদাররা ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি বলেন, “ডেটার অসঙ্গতি, AIS এবং ফর্ম 26AS-এর মধ্যে মিল না থাকা, সার্ভার ক্র্যাশ, সেশন টাইম আউট—এসব কারণে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তার উপর বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও বর্ষাকালীন দুর্যোগের মতো পরিস্থিতি আরও সময় নষ্ট করছে। এই অবস্থায় সময়সীমা বৃদ্ধি কোনো বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা।”

সংস্থার বক্তব্য, আয়কর দফতর অবশ্যই প্রযুক্তি উন্নয়নের কাজ করছে এবং প্রক্রিয়াকে সরলীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু চলতি মূল্যায়ন বছরে (AY 2025-26) বাস্তব পরিস্থিতিতে সময়সীমা মেনে চলা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

অ্যাসোসিয়েশনের তরফে CBDT-কে দেওয়া ২১ আগস্ট ২০২৫ তারিখের প্রতিনিধিত্বপত্রে নিম্নলিখিত সময়সীমা বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে—

Advertisements

নন-অডিট কেসে: বর্তমান ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর পরিবর্তে ৩১ অক্টোবর ২০২৫।
অডিট কেসে: বর্তমান ৩১ অক্টোবর ২০২৫-এর পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫।
ট্যাক্স অডিট রিপোর্টে: বর্তমান ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর পরিবর্তে ৩০ নভেম্বর ২০২৫।
সংশোধিত ও বিলম্বিত রিটার্নে: বর্তমান ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫-এর পরিবর্তে ৩১ মার্চ ২০২৬।

প্রসঙ্গত, ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া (ICAI) সম্প্রতি অ-কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন ফরম্যাটে আর্থিক বিবৃতি প্রবর্তন করেছে। এর ফলে পেশাদারদের নতুন সফটওয়্যার ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজের ধরণ পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে প্রক্রিয়া আরও ধীর হয়ে পড়ছে। CCATAX জানিয়েছে, এই পরিবর্তনগুলির কারণে অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে রিপোর্ট প্রস্তুত ও রিটার্ন ফাইল করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে সাধারণ করদাতাদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিতে পারলে জরিমানা গুনতে হবে, আবার অনেক ক্ষেত্রেই কর ফেরতের দাবি আটকে যেতে পারে। যেহেতু রিটার্ন ফাইল করা এখন সম্পূর্ণ অনলাইনে হয়, তাই প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকলে করদাতাদের পক্ষে সময়মতো কাজ শেষ করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়।

CBDT ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, নতুন আইটিআর ফর্ম কার্যকর করতে ও অনলাইন সিস্টেমকে প্রস্তুত করতে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন ছিল। সেই কারণেই আগের নির্ধারিত সময়সীমা থেকে ৪৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। তবে এবার আবার সময়সীমা বাড়ানো হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট করেনি আয়কর দফতর।

অতএব, আয়কর রিটার্ন ফাইলিংয়ের সময়সীমা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। পেশাদার মহল মনে করছে, করদাতাদের সুরাহা দিতে সরকারকে অন্তত একবার সময়সীমা বাড়ানো উচিত। অন্যদিকে, CBDT-এরও আশঙ্কা আছে যে দীর্ঘ সময়সীমা বাড়ালে করদাতারা নিয়মিত সময়ে কাজ শেষ করার পরিবর্তে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এখন দেখার বিষয়, করদাতা ও পেশাদারদের চাপের মুখে কেন্দ্র আবারও সময়সীমা বৃদ্ধির ঘোষণা করে কি না।