নতুন অর্থবর্ষ ২০২৪-২৫ (মূল্যায়ন বর্ষ ২০২৫-২৬)-এর জন্য আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হল ৩১ জুলাই, ২০২৫। যদিও বিলেটেড রিটার্ন (Belated ITR) জমা দেওয়ার সময়সীমা ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, তবুও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ দেরিতে রিটার্ন জমা দিলে জরিমানা তো হবেই, তার সঙ্গে ট্যাক্স রিফান্ড পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।
নতুন যারা ITR ফাইল করছেন, তাঁদের জন্য এটি বেশ জটিল কাজ। নানা রকম নিয়ম, ধারা ও সেকশন রয়েছে—যা একজন সাধারণ নাগরিকের পক্ষে বোঝা কঠিন। তাই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় কী কী ভুল এড়াতে হবে, তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
১. সঠিক মূল্যায়ন বর্ষ (Assessment Year) নির্বাচন করুন:
অনেকেই ফিনান্সিয়াল ইয়ার (FY) এবং অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার (AY) নিয়ে বিভ্রান্ত হন। FY হলো যে বছরে আপনি আয় করছেন, এবং AY হলো যে বছরে সেই আয় মূল্যায়ন করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য সঠিক মূল্যায়ন বর্ষ হলো ২০২৫-২৬। ভুল AY বেছে নিলে দ্বৈত কর ও জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে।
২. সঠিক ITR ফর্ম ব্যবহার করুন:
আপনার আয়ের ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী ITR ফর্ম নির্বাচন করা জরুরি। ভুল ফর্ম ব্যবহার করলে রিটার্নটি ‘ডিফেক্টিভ’ হিসেবে বিবেচিত হবে, এমনকি সেটি বাতিলও হয়ে যেতে পারে। যেমন, শুধুমাত্র বেতনের আয় থাকলে ITR-1, তবে ব্যবসায়িক আয় থাকলে ITR-3 বা 4 প্রয়োজন।
৩. আধার, প্যান ও ব্যাঙ্ক বিবরণ যাচাই করে নিন:
আপনার আধার নম্বর, প্যান কার্ড এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মোবাইল নম্বর লিঙ্ক থাকা আবশ্যক। কারণ OTP-ভিত্তিক যাচাই ছাড়া ই-ফাইলিং সম্পূর্ণ হয় না। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থবর্ষের সমস্ত ব্যাঙ্ক বিবরণ রাখতে হবে।
৪. Form 16 ও 16A ব্যবহার করুন:
বেতনভোগীদের জন্য Form 16 অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে Part A-তে TDS এবং Part B-তে আয়ের বিস্তারিত বিবরণ থাকে। অন্য ধরনের আয়ের ওপর কাটাকাটি হওয়া ট্যাক্সের জন্য Form 16A লাগে।
৫. Form 26AS মিলিয়ে নিন:
এই ফর্মে আপনার TDS, আগাম কর (Advance Tax), ও অন্যান্য আয়ের বিবরণ থাকে। এটি রিটার্ন ফাইল করার আগে মিলিয়ে নেওয়া খুবই জরুরি। যদি Form 16 ও Form 26AS-এর মধ্যে কোনো অমিল থাকে, তবে রিটার্নে সমস্যা হতে পারে এবং রিফান্ডে বিলম্ব হবে।
৬. রিটার্ন ফাইল করার পরে ITR-V ই-ভেরিফাই করুন:
ফাইল করার ৩০ দিনের মধ্যে ই-ভেরিফিকেশন না করলে রিটার্নটি “Invalid” হয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে আপনি রিটার্ন ফাইল করেননি ধরে নেওয়া হবে এবং জরিমানা বা নোটিশ আসতে পারে। ই-ভেরিফাই করা যায় আধার OTP, ব্যাঙ্ক EVC, অথবা ডাকের মাধ্যমে ITR-V পাঠিয়ে।
৭. ছাড় ও TDS মিলিয়ে নিন:
আপনি যদি HRA, ধারা ৮০সি, দান ইত্যাদির ছাড় দাবি করেন, তবে তা সঠিকভাবে মিলিয়ে রিটার্নে দিতে হবে। Form 26AS, AIS (Annual Information Statement), TIS (Taxpayer Information Summary), এবং ব্যাঙ্কের বিবরণ একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
৮. সম্পদ ও দায় (Asset & Liability) বিবরণ দিন:
যাঁদের মোট আয় নির্দিষ্ট সীমার বেশি, তাঁদের জন্য সম্পদ ও দায়ের বিবরণ (AL Schedule) দেওয়া বাধ্যতামূলক।
৯. বিদেশি সম্পত্তি ও আয়:
বিদেশে সম্পত্তি থাকলে তা অবশ্যই ITR-এর নির্দিষ্ট শিডিউলে (Schedule FA) জানাতে হবে, চাহিদা হোক বা না-হোক। ভারতীয় নাগরিক ও অস্থায়ী বাসিন্দাদেরও এটি জানানো বাধ্যতামূলক।
১০. মূল লেনদেনের নথি প্রস্তুত রাখুন:
মিউচুয়াল ফান্ড, বিমা পলিসি, LIC, ফিক্সড ডিপোজিট, সন্তানের নামে আয়, চাকরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী চাকরির টিডিএস—সব তথ্য হাতে রাখুন।
১১. ভুল ITR ফাইল করলে সংশোধনের সুযোগ আছে:
ভুল হলে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সংশোধিত (Revised) ITR ফাইল করা যায়, এতে কোনো জরিমানা হয় না।
ITR ফাইল করা শুধু দায়িত্ব নয়, বরং এটি আপনার অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও আইনি সুরক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভুল এড়িয়ে সঠিকভাবে রিটার্ন জমা দিলে আপনি যেমন আর্থিক জরিমানা এড়াতে পারবেন, তেমনি কর রিফান্ড পেতে কোনো সমস্যা হবে না। নিজে না পারলে অভিজ্ঞ ট্যাক্স পরামর্শদাতার সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।